সাত হাজার কর্মী ছাঁটাই
২৪ মে ২০১৮বৃহস্পতিবার ফ্রাংকফুর্টে ডয়চে ব্যাংকের শেয়ারহোল্ডারদের বাৎসরিক সম্মেলনের ঠিক আগে ব্যাংকের নতুন সিইও ঘোষণা করলেন যে, ২০১৯ সালের মধ্যে আরো সাত হাজার চাকুরি ছাঁটাই করা হবে৷ এর মূল কারণ, গত তিন বছর ধরে ডয়চে ব্যাংক লোকসান করে চলেছে – ব্যাংকের শেয়ার প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ মূল্য হারিয়েছে৷ এছাড়া গত ছ'বছরে চার বার সিইও বদলেছে ডয়চে ব্যাংক৷
গতমাসে ডয়চে ব্যাংকের চেয়ারম্যান পাউল আখলাইটনার একটি অপ্রত্যাশিত পদক্ষেপে ব্যাংকের মুখ্য কার্যনির্বাহী পদে জন ক্রায়ানের পরিবর্তে ক্রিস্টিয়ান জেভিংকে নিয়োগ করেন৷ এর পটভূমিতে ছিল বিনিয়োগকারীদের অনুভূতি যে, ডয়চে ব্যাংকের হাল ফেরানোয় ক্রায়ান পর্যাপ্ত গতিশীলতা প্রদর্শন করছেন না৷
এবার ডয়চে ব্যাংক ঘোষণা করেছে যে, ‘‘(ব্যাংকে) ফুলটাইম চাকরির সংখ্যা বর্তমানে ৯৭,০০০-এর কিছু বেশি থেকে ৯০,০০০-এর বেশ কিছু কমের পর্যায়ে নেমে যাবে, বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে; সেই অনুপাতে কর্মীদের সংখ্যা হ্রাসের কাজ শুরু হয়ে গেছে৷’’
ডয়চে ব্যাংক বলেছে যে, প্রধানত তাদের একুইটিজ সেলস ও ট্রেডিং বিভাগে কর্মীসংখ্যা প্রায় ২৫ শতাংশ কমানোর পরিকল্পনা রয়েছে৷ ‘‘আমরা আমাদের কর্পোরেট ও ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকিং এবং আন্তর্জাতিক উপস্থিতির প্রতি দায়িত্ব বজায় রাখব – সে বিষয়ে আমরা অনড়,’’ ক্রিস্টিয়ান জেভিং বৃহস্পতিবার ঘোষণা করেন৷ ‘‘তবে আমরা যে কাজ ভালো করতে পারি, সেদিকে আমাদের মনোযোগ দিতে হবে৷’’
বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল পত্রিকা নতুন ডয়চে ব্যাংক কার্যনির্বাহী জেভিংয়ের ব্যয়সঙ্কোচ উদ্যোগের একটি মূল অঙ্গ হিসেবে ব্যাপক চাকুরি ছাঁটাইয়ের খবর দেয়৷ ক্রায়ানের আমলেই ২০২০ সালের মধ্যে ব্যাংকে চাকুরির সংখ্যা নয় হাজার কমানোর পরিকল্পনা করা হয়েছিল৷ এছাড়া ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকিংয়ে ‘লিভারেজ’ বা ঋণ থেকে বিনিয়োগের অনুপাতও দশ শতাংশ কমানো হবে, বলে এবার ডয়চে ব্যাংক জানিয়েছে৷
ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকিংয়ের দিন শেষ?
অংশু জৈন বা জন ক্রায়ানের আমলে ডয়চে ব্যাংক হয়তো একটু বেশিই ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকিংয়ের দিকে ঝুঁকেছিল, কিন্তু বস্তুত গত দুই দশক ধরে ডয়চে ব্যাংক এই বিভাগে মার্কিন প্রতিযোগীদের সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার চেষ্টা করে আসছে৷ ক্রিস্টিয়ান জেভিং তাঁর কর্মজীবন কাটিয়েছেন ডয়চে ব্যাংকে এবং সেই বিশ বছরে ব্যাংকের উত্থান-পতন সবই প্রত্যক্ষ করেছেন৷ দৃশ্যত এবার তিনি ডয়চে ব্যাংকের নজর ইউরোপীয় ‘হোম মার্কেটের’ দিকে ফেরাতে চান৷
পত্রপত্রিকার খবর অনুযায়ী জেভিং মার্কিন বাজারে ডয়চে ব্যাংকের উপস্থিতি লক্ষণীয়ভাবে কমানোর পরিকল্পনা করছেন৷ এছাড়া তিনি মধ্য ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকা অঞ্চলেও ডয়চে ব্যাংকের কর্মকাণ্ড কমাতে চান৷ বস্তুত ডয়চে ব্যাংকের বিশ্বব্যাপী ইকুইটি অর্থাৎ শেয়ার ব্যবসায় পুনর্বিবেচনা করে এই পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে, যার ফলে ডয়চে ব্যাংক বিভিন্ন ‘হেজ ফান্ডের’ জন্য আর্থিক পরিষেবা ও স্টক বা শেয়ার নিয়ে ট্রেডিংও কিছুটা কমিয়ে আনবে৷
সব মিলিয়ে বৃহস্পতিবার ফ্রাংকফুর্টের শেয়ারহোল্ডার মিটিংয়ে ডয়চে ব্যাংকের চেয়ারম্যান পাউল আখলাইটনারকে বেশ কিছু অপ্রীতিকর প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হবে, বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে৷ ২০০৮/২০০৯ সালের আর্থিক সংকটের পর ডয়চে ব্যাংককে যুক্তরাষ্ট্রে একাধিক মোটা অঙ্কের জরিমানা দিতে হয়, যা আজ অবধি সংস্থাটির লাভ-লোকসানের উপর তার ছায়া ফেলে আসছে৷ এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের একটি বড় রেটিং এজেন্সি ডয়চে ব্যাংকের ‘ক্রেডিট রেটিং’ বা ঋণযোগ্যতা কমাতে পারে, এমন কানাঘুসাও শোনা গিয়েছে৷
এসি/ডিজি (রয়টার্স, ডিপিএ)