তদন্তে ট্রাম্পকে দেয়া ডয়চে ব্যাংকের অর্থ
২১ জুলাই ২০১৭সম্প্রতি ব্যাংকটির সঙ্গে তাঁর দুই দশকের সম্পর্ক নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে৷ যুক্তরাষ্ট্রের পত্রিকা নিউ ইয়র্ক টাইমস এ নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করেছে৷ পত্রিকাটি নাম প্রকাশ না করার শর্তে নিয়ন্ত্রক সংস্থার তিন ব্যক্তির বরাত দিয়ে বলছে, ব্যাংকিং নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো ডয়চে ব্যাংকের ব্যক্তি সম্পদ ব্যবস্থাপনা ইউনিটের মাধ্যমে ট্রাম্পের ব্যবসায় হাজার হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগের বিষয়টি তদন্ত করছে৷ এই ইউনিটটি অতি সম্পদশালীদের অ্যাকাউন্ট ব্যবস্থাপনা করে৷ নিয়ন্ত্রকেরা যে বিষয়টি তদন্ত করছেন তা হলো, এই বিনিয়োগের ফলে ব্যাংকটি বড় কোনো আর্থিক ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে কিনা৷ এছাড়া উত্তর অ্যামেরিকার দেশটির রাষ্ট্রীয় তদন্তকারীরা ট্রাম্পের অ্যাকাউন্টটগুলোরও তদন্ত করছেন৷ ব্যাংকের কাছে তথ্য চেয়েছেন এই তদন্তের দায়িত্ব থাকা বিশেষ কৌঁসুলি রবার্ট এস ম্যুলার৷ শুধু ট্রাম্পই নন, তাঁর জামাতা জারেড কুশনারের ব্যবসাতেও বিনিয়োগ করেছে ডয়চে ব্যাংক৷ এ বিষয়ে নিউ ইয়র্ক টাইমসের পক্ষ থেকে ব্যাংকের সাথে যোগাযোগ করা হলেও তারা মন্তব্য করতে রাজি হয়নি৷
এছাড়াও এ সব অর্থ ঋণ নেবার সময় ট্রাম্প কী কী ব্যক্তিগত নিশ্চয়তা দিয়েছিলেন তাও জানতে চান তদন্তকারীরা৷ তারা বুঝতে চান, যদি ট্রাম্প ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হন, তাহলে এ সব নিশ্চয়তা কতটা কাজ করবে৷ কারণ ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হলে ব্যাংক যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের নামে মামলা করে দিতে পারে, অথবা বিশেষ কোনো লেনদেনে যেতে পারে৷ বিষয়টি যে একেবারে অনুমাননির্ভর তা কিন্তু নয়৷ ২০০৮ সালে আগের একটি লোন পরিশোধ সময় চেয়ে ট্রাম্প আগেই একবার মামলা ঠুকে দিয়েছিলেন ডয়চে ব্যাংকের বিরুদ্ধে৷
নিউ ইয়র্ক টাইমস অনুসন্ধান করে দেখেছে যে, এ যাবৎ ট্রাম্প ডয়চে ব্যাংক থেকে ঋণ ও বন্ড অফারিং বাবদ ৩২ হাজার কোটি টাকা নিশ্চয়তা পেয়েছেন এবং এর অধিকাংশই তিনি নিয়েও নিয়েছেন৷ ২০০৮ এর ঐ ঘটনাটি ছাড়া এমনিতে ট্রাম্পের সঙ্গে ব্যাংকের সম্পর্ক ভালোই বলে জানতে পেরেছে নিউ ইয়র্ক টাইমস৷ তবে সেই ঘটনার পরই ট্রাম্প তাঁর অ্যাকাউন্টগুলোর ব্যবস্থাপনা কমার্শিয়াল রেয়াল এস্টেট থেকে ব্যক্তিগত সম্পদ বিভাগে বদলে নেন৷ এই বিভাগ গেল ছয় বছরে মিয়ামির কাছে একটি গলফ কোর্স ও ওয়াশিংটনে একটি হোটেলসহ তিনটি প্রকল্পে ঋণ দেয়, যার পরিমাণ ২,৪০০ কোটি টাকা৷ কোন ব্যক্তিকে এই পরিমাণ অর্থ এত কম সময়ে ছাড় দেয়া কিছুটা অস্বাভাবিক বলেই মনে করেন ওয়াল স্ট্রিটে কাজ করা ডয়চে ব্যাংকের সাবেক ও বর্তমান কয়েকজন কমর্কর্তা৷ গত বছর ট্রাম্প জামাতা ক্রুশনারও ব্যাংকটি থেকে ২,০০০ কোটি টাকার মতো ঋণ নিয়েছেন৷
ডয়চে ব্যাংকের সঙ্গে ট্রাম্প ও রাশিয়ার ‘ভালো' সম্পর্কের মধ্যে কোনো সংযোগ আছে কিনা, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে৷ যদিও এখন পর্যন্ত তেমন কোনো সরাসরি সম্পর্ক খুঁজে পাওয়া যায়নি৷ তবে ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবার পরপরই রাশিয়ার বিনিয়োগকারীরা প্রায় ৮০,০০০ কোটি টাকা ব্যাংকটির মস্কো, লন্ডন ও নিউইয়র্কের শাখাগুলোতে পাচার করে দেন৷ গেল মে মাসে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিসার্ভ এই বিষয়টি সমাধান করে৷ এর জন্য অবশ্য ভালো রকমের জরিমানা গুনতে হয় ডয়চে ব্যাংককে৷
এছাড়া ব্যাংকটির সঙ্গে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ভনিশুকানমবাংকের সহযোগিতা চুক্তি আছে৷ রাশিয়ান ব্যাংকটির বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করার অভিযোগ আছে৷ এছাড়া ভিটিবি ব্যাংক নামের আরো বড় এক রাশিয়ান ব্যাংকের সঙ্গেও এর যোগাযোগ রয়েছে, যেটি যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নে নিষেধাজ্ঞায় পড়েছে৷ ব্যাংকটির বিনিয়োগ শাখা ভিটিবি ক্যাপিটাল তৈরি করা হয়েছিল ডয়চে ব্যাংকের মস্কো শাখার বেশ ক'জন ব্যাংকারকে নিয়ে৷
এর বাইরেও কিছু যোগ খোঁজার চেষ্টা চলছে৷ ডয়চে ব্যাংকের সাবেক প্রধান নির্বাহী, ইয়োসেফ আকারমান, এখন ব্যাংক অফ সাইপ্রাসের বোর্ড চেয়ারম্যান৷ ঐ ব্যাংকের একজন বড় শেয়ার হোল্ডার হলে দিমিত্রি রাইবলভলিভ নামের এক রাশিয়ান গোষ্ঠিপ্রধান, যিনি ফ্লোরিডায় ট্রাম্পের সম্পত্তিগুলো কিনে নেন৷ গত মে মাসে, ফেডারেল আইনজীবীরা এক রাশিয়ান ব্যবসায়ীর সঙ্গে সাইপ্রাসের একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিরোধ নিষ্পত্তি করেন৷ প্রতিষ্ঠানটির নাম প্রিভেজন হোল্ডিংস, যার সঙ্গে ক্রেমলিনের পারিবারিক সম্পর্ক আছে৷ এর প্রধান নাতালিয়া ভেসেলনিৎসকায়া ট্রাম্প জুনিয়রের সঙ্গে নির্বাচনি প্রচারণায় ছিলেন৷ তদন্তকারীদের দাবি, এই প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে রাশিয়ায় আবাসন খাতে কর ফাঁকির অভিযোগ আছে৷ প্রতিষ্ঠানটি একটি ইউরোপীয় ব্যাংকের কাছ থেকে ৬,২০০ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে৷ ব্যাংকটির নাম ডয়চে ব্যাংক৷