1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ঢাবি খেলার মাঠে অস্ত্র প্রশিক্ষণ নেন মুক্তিযোদ্ধা রোকেয়া

৩০ এপ্রিল ২০১১

নেত্রকোনা জেলার কাটলী গ্রামে ১৯৫১ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন মুক্তিযোদ্ধা রোকেয়া কবির৷ তাঁর মা সৈয়দা বদরুন্নেসা, বাবা সৈয়দ মোহাম্মদ খান৷ ছোট থেকেই সংগ্রামী নারী হিসেবে নিজেকে তৈরি করেন রোকেয়া৷

https://p.dw.com/p/116mI
মুক্তিযোদ্ধা রোকেয়া কবিরছবি: Muzib Mehdy

হঠাৎ করে মুক্তিযুদ্ধে যাননি রোকেয়া কবির৷ ১৩-১৪ বছর বয়স থেকেই নানা আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন রোকেয়া৷ খেলাঘর এবং ছাত্র ইউনিয়ন করতেন৷ ১৯৬২ সালে পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ার সময় নেত্রকোনায় শিক্ষা আন্দোলন করেছেন৷ ঢাকায় কলেজ জীবন শুরুর সময় থেকেই পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের সক্রিয় সংগঠক রোকেয়া৷

কলেজ ছাত্র সংসদের ক্রীড়া সম্পাদক নির্বাচিত হন তিনি৷ ছাত্র সংসদের ভিপি ছিলেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷ ছাত্রদের ১১ দফা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থানে সক্রিয় ছিলেন রোকেয়া৷ সত্তরের নির্বাচন পরবর্তী ঘটনাবলী থেকেই যুদ্ধের একটা সুস্পষ্ট ইঙ্গিত পেয়েছিলেন রোকেয়ার মতো ছাত্রসংগঠকরা৷ ফলে যুদ্ধের জন্য মানসিক প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তাঁরা৷ তাই মিছিল, মিটিং, আন্দোলন, প্রাথমিক চিকিৎসা প্রশিক্ষণ, ব্ল্যাক আউট হলে যুদ্ধ পরিস্থিতিতে কী করতে হবে সেসব বিষয়ে মানুষকে জানানোর কাজ চালিয়ে যাচ্ছিলেন তাঁরা৷ মার্চের প্রথম সপ্তাহে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় খেলার মাঠে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন, ন্যাপ, কমিউনিস্ট পার্টির যৌথ আয়োজনে সশস্ত্র প্রশিক্ষণ শুরু হয়৷ সেখানে প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত প্রশিক্ষণ নিতেন৷ ছাত্রী ব্রিগেডের কমান্ডার ছিলেন রোকেয়া৷

Rokeya Kabir Dhaka Bangladesch
একটি অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিচ্ছেন মুক্তিযোদ্ধা রোকেয়া কবিরছবি: Muzib Mehdy

২৯ মার্চ ঢাকা থেকে নদীপথে কাপাসিয়ায় চলে যান তিনি৷ সেখান থেকে এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে আগরতলা যান৷ ঢাকায় এবং আগরতলায় মিছিল-মিটিং-এর সামনের সারিতে থাকায় পত্র-পত্রিকায় প্রায়ই ছবি ছাপা হয় রোকেয়া কবিরের৷ ফলে সবাই চিনে ফেলেছিল রোকেয়াকে৷ সে কারণে দেশের ভেতরে গিয়ে যুদ্ধ করার অনুমতি পাননি তিনি৷ তাই সেখানে থেকেই মুক্তিযুদ্ধ সংগঠকের দায়িত্ব পালন করেছেন৷ নয় ভাইবোনের মধ্যে ছয়জনই মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণ করেন৷ রোকেয়াসহ তাঁর বোন মনিরা, বড় দুই ভাই গোলাম মর্তুজা খান, লুৎফুর রহমান খান, এবং ছোট দুই ভাই নাসের খান ও নোমান আহমেদ খান সবাই যুদ্ধে অংশ নেন সক্রিয়ভাবে৷

ডয়চে ভেলের সাথে সাক্ষাৎকারে রোকেয়া কবির জানালেন, মুক্তিযুদ্ধে তাঁর সক্রিয় ভূমিকার কিছু কথা৷ ভারতে ক্যাম্পে ক্যাম্পে হাসপাতালের জন্য নার্স সংগ্রহ করা, তাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে আহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসার জন্য পাঠানো, মুক্তিযোদ্ধা সংগ্রহ করে তাঁদের রাজনৈতিক ওরিয়েন্টেশনের পর প্রথমে প্রশিক্ষণে এবং পরে তাদের দেশের ভেতরে গেরিলা যুদ্ধে পাঠানোর ব্যবস্থা করতেন রোকেয়া৷ বিভিন্ন ক্যাম্পে শিশু-কিশোরদের স্কুলের ব্যবস্থা করেছেন, তাদের পড়ানোর জন্য ক্যাম্পের মধ্য থেকেই শিক্ষক খুঁজে বের করেছেন৷ বই সংগ্রহ করেছেন৷ এমনকি তিনি নিজেও গণিত ও ইংরেজি পড়াতেন৷ মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন কঠিন সময়ের একটি ঘটনা তুলে ধরেন তিনি৷ রোকেয়া জানান, ক্যাম্পে দিনের পর দিন নিরামিষ খেতে হতো৷ একদিন ছয় কেজি খাসির মাংস পাওয়া গেল ৩০০ লোকের জন্য৷ সবাই যে কী খুশি! অনেক বুটের ডাল দিয়ে রান্না করা হয়েছিল, যেন সবাই একটু মাংসের গন্ধ পায়৷ সবাই লাইন ধরেছিল ওটা খাওয়ার জন্য৷

মাতৃভূমি ছেড়ে ভারতে পাড়ি জমানোর সময়ের একটি ঘটনা তাঁকে আলোড়িত করে৷ সেসময় কৃষক-শ্রমিক সবাই দেশমাতৃকার স্বার্থে কতোটা আন্তরিকভাবে একে-অপরকে সহযোগিতা করেছেন তা দেখে অভিভূত হন রোকেয়া৷ তিনি বলেন, ‘‘মে মাসের তিন তারিখে আমি সীমান্ত পার হয়ে ভারত যাচ্ছিলাম৷ ক্ষেতে কৃষকরা কাজ করছিল৷ এভাবে দল ধরে দেশ ত্যাগ করতে দেখে অভ্যস্ত ছিল তারা৷ ফলে তারা আমাদের দিকে একবার দেখে আবার নিজেদের কাজে মন দিল৷ কিন্তু কিছুক্ষণ পর দেখলাম সামনে একজন মহিলার হাতে শাখা এবং মাথায় সিঁদুর৷ সেও আমাদের মতোই দেশ ছেড়ে যাচ্ছে৷ তো একজন কৃষক এসে ঐ মহিলার হাতের শাঁখাটি ভেঙে দিল এবং পানি এনে দিয়ে সিঁদুর ধুয়ে নিতে বলল৷ কারণ কোনভাবে রাজাকার কিংবা পাক সেনার সামনে পড়লে যেন তারা তাকে বিশেষ ধর্মের বলে চিনতে না পারে৷ নতুবা তার উপর নির্যাতন চালানোর আশঙ্কা ছিল৷''

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ২৪ ডিসেম্বর আগরতলা থেকে ঢাকায় চলে আসেন রোকেয়া কবির৷ আবার সংগঠনে ঝাঁপিয়ে পড়েন৷ বর্তমানে বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘ-বিএনপিএস'র নির্বাহী পরিচালক হিসেবে সমাজ গড়ার কাজ করে চলেছেন রোকেয়া কবির৷

প্রতিবেদন: হোসাইন আব্দুল হাই

সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান