1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

তথ্য সুরক্ষার অধিকার!

রান্ডি হয়সলার/আরবি১৪ জুলাই ২০১৪

আমার প্রতিবেশী কিংবা বাচ্চাদের শিক্ষক কি কখনও আদালতের সম্মুখীন হয়েছিলেন? সুইডেনের একটি অনলাইন-পোর্টালে এসব প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাচ্ছে৷ সুইডেনের মতো ‘স্বচ্ছতাপ্রবণ’ দেশেও বিষয়টিকে বাড়াবাড়ি বলে মনে করছেন অনেকে৷

https://p.dw.com/p/1Cbfw
‘লেক্সবেস' ওয়েবসাইটে গিয়ে এক ক্লিকেই সব জানা যায়ছবি: https://lexbase.se/kartsok

শুরু হয়েছে সমালোচনা

সমালোচকরা বলেন এ হলো আধুনিক যুগের ‘পিলার', অর্থাৎ কাঠের কাঠামো, যার মধ্যে প্রাচীনকালে অপরাধীর হাত ও মাথা ঢুকিয়ে বিদ্রুপ করা হতো৷ আর পোর্টালের আয়োজকরা একে বলেন সংবাদের স্বাধীনতা৷

প্রতিবছর মে মাসের প্রথম দিকে সুইডেনে শেষ করতে হয় এই কাজটা৷ তা হলো আয়করের বিবরণ পেশ করা৷ অল্প কিছুদিন পরেই খবরের শিরোনাম হয়ে দেখা দেয় বিত্তশালীদের তালিকা৷ বিশেষ করে ‘হলুদ' সংবাদপত্রগুলি লুফে নেয় এইসব খবর৷

‘এরাই হলেন শীর্ষ উপার্জনকারী' কিংবা ‘সুইডেনের সবচেয়ে ধনী নাগরিক' ইত্যাদি ইত্যাদি৷ বিশেষ করে রাজনীতিবিদ, খোলোয়াড়, ম্যানেজার কিংবা খ্যাতনামা লেখকদের ব্যাপারে উত্সাহী এই সব পত্র-পত্রিকা৷ এইসব তথ্য সুইডেনের প্রত্যেক মানুষই পেতে পারে৷ ট্যাক্স অফিসে একটি ফোনই যথেষ্ট৷ এই নিয়ে কেউ তেমন মাথা ঘামায় না বা উত্তেজিত হয় না৷ বরং অনেকে এই স্বচ্ছতাকে ভালোই মনে করে৷ সব বিষয়ে জনগণের সম্পৃক্তি সুইডেনের সমাজে একেবারে মজ্জাগত৷ রাষ্ট্রও এ ব্যাপারে দায়বদ্ধ৷

Screenshot der Seite von Lexbase

সরকার ও কর্তৃপক্ষের সব ধরনের কার্যকলাপ, যদি কোনো কারণে গোপন করতে না হয়, তাহলে সবাই তা দেখতে বা জানতে পারে৷ এতে দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের সুযোগ থাকে কম৷

শেষ সীমায় পৌঁছেছে

তবে এখন মনে হচ্ছে এই স্বচ্ছতা যেন শেষ সীমায় এসে পৌঁছেছে৷ কারণ কয়েক মাস আগে ‘লেক্সবেস' নামে একটি বাণিজ্যিক ইন্টারনেট সার্ভিস শুরু হয়েছে৷ এখানে একটি ক্লিক দিয়েই দেখা যায়, কোনো সহকর্মী, আত্মীয় বা প্রতিবেশী কোনো মামলায় জড়িয়ে পড়েছিলেন কিনা৷ কিংবা দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন কিনা৷ সার্চে শুধু তাঁদের নামটি দিলেই হলো৷ ‘লেক্সবেস' খোঁজাখুঁজিটা আরো সহজ করে দিয়েছে:

মানুষ নিজের বসবাসের এলাকা ক্লিক করলেই লাল দাগ দেখিয়ে দেবে সম্ভবত সাজা ভোগ করা কোনো ব্যক্তি আশেপাশে বসবাস করছে৷ তবে পয়সা না ছাড়লে এসব তথ্য পাওয়া যাবে না৷

প্রথমে আট ইউরোর মতো দিতে হবে সার্ভিসকে৷ তারপরই জানা যাবে প্রতিবেশী কর ফাঁকি দিয়েছেন কিনা, কিংবা মাতাল অবস্থায় গাড়ি চালিয়েছেন কিনা৷ আরো সাংঘাতিক হলো, যৌন-অপরাধে জড়িয়ে পড়েছিলেন কিনা৷

Symbolbild Sicherheit im Internet
ছবি: picture-alliance/dpa

মধ্যযুগীয় অবস্থা?

লেক্সবেস এই তথ্য সরবরাহ শুরু করার পর থেকে সমালোচনাও শোনা যাচ্ছে অনেক৷ বলা হচ্ছে, আমরা কি সেই গহিন মধ্যযুগে ফিরে যাচ্ছি, যেখানে অপরাধীকে গির্জার সামনে সাজা দেওয়ার কাষ্ঠস্তম্ভের কাছে আনা হতো? জনসাধারণ থুতু ছিটাতো? বলেন সুইডেনের আইনজীবীসমিতির বেঙ লাভারসন৷ তাঁর মতে, একবিংশ শতাব্দীর প্রারম্ভে এই ধরনের পরিস্থিতি মেনে নেওয়া যায়না৷

যে কয়েক হাজার সুইডিশের নাম ‘লেক্সবেস'-এ খুঁজে পাওয়া যায়, তার মধ্যে রয়েছে ৩৪ বছর বয়সি ইওনাস ক্লিন্টেব্যার্গের নামও৷ দোকানে ডাকাতি করার কারণে দুই বছরের মতো কারা ভোগ করতে হয়েছিল তাঁকে৷ টিনএজ বয়স থেকেই মাদক নেওয়া শুরু করেন ইওনাস৷ গভীর সংকটে পড়ে আক্রান্ত হন ডিপ্রেশনে৷ এরপর সবকিছুই মাদককে ঘিরেই চলতে থাকে৷ অর্থ জোগাড়ের জন্য বেআইনি পথও বেছে নিতে হয়৷

যাবজ্জীবন সাজা

তবে এসব এখন অতীত৷ ইওনাস ক্লিন্টেব্যার্গ তাঁর শাস্তি ভোগ করেছেন৷ নতুন করে জীবন শুরু করেছেন৷ বের হয়ে এসেছেন মাদকাসক্তি থেকে৷ এক কিন্ডারগার্টেনে পাচক হিসাবে কাজ করছেন তিনি৷ স্ত্রী ও তিন সন্তান নিয়ে সুইডেনের এক ছোট শহরে বাস করছেন৷ কিন্তু লেক্সবেস তাঁর অতীতের অপরাধীকর্মটা আবার সামনে তুলে এনেছে৷ ইওনাস ক্লিন্টেব্যার্গ আক্ষেপ করে জানান, ‘‘কর্মদাতা আমার সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করলে আমার কোনো সমস্যা নেই৷ যেমন স্কুলগুলিকে জানতে হয়, তারা কোনো যৌনঅপরাধীর সঙ্গে কাজ করছে কিনা৷ কিন্তু ‘লেক্সবেস'-এর সাহায্যে আমার প্রতিবেশীরা কিংবা কিন্ডারগার্টেনে বাচ্চাদের মা-বাবা ও কর্মচারীরাও আমার সম্পর্কে জানতে পারেন৷ এইভাবে আমার শাস্তিটা যাবজ্জীবনের জন্য হয়ে গেলো৷''

ইতোমধ্যে লেক্সবেস-এ তালিকাবদ্ধ আরো কয়েকজনের সঙ্গে ক্লিন্টেব্যার্গ একটি গ্রুপ গড়ে তুলেছেন৷ তাঁরা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করতে চান৷ কেননা তাঁদের মৌলিক অধিকার ক্ষুণ্ণ করা হয়েছে বলে মনে করেন এই ভুক্তভোগীরা৷ লেক্সবেস-কে আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো যাবে না৷ কেননা সুইডেনের মৌলিক আইন অনুযায়ী মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রয়েছে৷ যা আবার তথ্যসুরক্ষা আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক৷

আইনের ফাঁকফোকর

লেক্সবেস আইনের একটি ফাঁক ব্যবহার করেছে৷ বলেন সুইডিশ তথ্যসুরক্ষা দপ্তরের আইনজ্ঞ মার্টিন ব্রিনেন৷ তথ্য সুরক্ষা দপ্তর সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছে আইনগত বিধিবিধান পরীক্ষা করতে, প্রয়োজন হলে সংবিধানে সংশোধনী আনতে৷

মার্টিন ব্রিনেন জানান, ‘‘আইন মন্ত্রণালয় এব্যাপারে অনুসন্ধান চালানোর উদ্যোগ নিয়েছে৷ তবে মৌলিক আইনে কোনো পরিবর্তন আনা বেশ কষ্টকর হবে৷ এ জন্য সংসদের অনুমোদন প্রয়োজন৷ তাও আবার সহজে করা যায় না৷ সময়সাপেক্ষও বটে৷''

এদিকে ‘লেক্সবেস' তাদের পোর্টাল নির্বিকারে চালিয়ে যেতে পারবে৷ প্রতিষ্ঠানটির মুখপাত্র মাগনুস গ্র্যনডাল তাঁদের পোর্টালকে নিয়ে এই ধরনের উত্তেজনা বুঝতে পারেন না৷ তাঁর ভাষায়, ‘‘আমাদের সার্ভিস তো অন্যদের মতোই, যারা একই ধরনের তথ্য প্রস্তুত রাখে৷'' পার্থক্যটা হলো, লেক্সবেস সরাসরি সুইডেনের জনসাধারণের কাছে পৌঁছে যেতে পারে৷

‘‘কেউ বেশি সময় দিতে পারলে আদালতের কাছ থেকে একই তথ্য পেতে পারেন৷ আমরা শুধু খোঁজাখুঁজিটা সহজ করি৷'' জানান গ্র্যোনডাল৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য