1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

তবে কি ‘জোর’ যার ‘মুল্লুক’ হবে তার?

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
১৫ মার্চ ২০২৩

সুনির্দিষ্ট কোনো প্রস্তাব না থাকলেও সংলাপে অনীহা আওয়ামী লীগ ও বিএনপি উভয় দলের। তাদের শরিকেরাও জোটগত অবস্থান থেকেই কথা বলছেন। তবে বিশ্লেষকেরা মনে করছেন যেকোনো রাজনৈতিক সংকট নিরসনে সংলাপের কোনো বিকল্প নেই।

https://p.dw.com/p/4Oikk
রাজনৈতিক সংঘাত (ফাইল ফটো)
রাজনৈতিক সংঘাত (ফাইল ফটো)ছবি: bdnews24.com

প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা সোমবার (১৩ মার্চ) গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, "গত নির্বাচনে সংলাপ হয়েছে। ২০ জন, ৩০ জন নিয়ে এসে সংলাপে বসেছে। চা-বার্গার খেয়ে গেছে। এতে কী লাভ হয়েছে। আগেই ভোট থেকে নিজেরা সরে গেছে তারা।”

শেখ হাসিনা  বলেন, ''তার ছোট ছেলে মারা গেল। আমি তার বাসায় গেলাম। দরজা বন্ধ করে দেওয়া হলো। আপনারা দেখেছেন, আমাকে বাসায় ঢুকতে দেওয়া হয় নাই। যারা এতটুকু ভদ্রতা জানে না তাদের সঙ্গে কিসের সংলাপ। কেউ কি কেউ কি পারবে বাবা-মার খুনিদের সঙ্গে বসতে?”।

এর পরদিন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ওই কথার জবাবে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সংলাপে বসার বিষয়টি নাকচ করে দিয়ে বলেন, "কার সঙ্গে সংলাপ করব, প্রধানমন্ত্রী এমন বক্তব্য দিয়েছেন। আমাদেরও কথা-কার সঙ্গে সংলাপ করব? আমরা তো সংলাপের কথা বলিনি। কারণ,  তিনি ( শেখ হাসিনা)  কথা দিয়ে কথা রাখেন না।''

তিনি বলেন, ‘‘আমরা তো আগেই সংলাপ নাকচ করে দিয়েছি। আগামী নির্বাচন শুধু অনিশ্চিত নয়, আওয়ামী লীগ দায়ী হবে আগামী নির্বাচনে যদি আরও খারাপ কিছু ঘটে। আমাদের অনির্বাচিত, স্বঘোষিত, প্রবল প্রতাপশালী, অহংকারী, দাম্ভিক প্রধানমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, তার ওপর কোনো চাপই কাজ করবে না। এতেই বোঝা যায় দেশের প্রতি, দেশের মানুষের প্রতি তার কোনো দায়িত্ব ও সম্মানবোধ নেই।”

‘নেতিবাচক অবস্থানে গিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচন করা কঠিন’

দুই দল দুই মেরুতে:

প্রধানমন্ত্রীর কথার পর আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি দুই দলের নেতারা সভা সমাবেশে পরস্পরকে দোষারোপ করে সংলাপের বিরুদ্ধে কথা বলছেন। তাই সংলাপের বিরুদ্ধে তাদের অবস্থান হলেও রাজনৈতিক আলোচনায় কয়েকদিন ধরে সংলাপই প্রাধান্য পাচ্ছে।

আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, নির্বাচন হবে সংবিধান অনুযায়ী। নির্বাচন করবে নির্বাচন কমিশন। আর সংবিধান অনুযায়ী তখন এই সরকারই থাকবে। আর বিএনপি নেতারা বলছেন, এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে তারা যাবে না। নির্বাচন হতে হবে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে।  বিএনপির কথা, প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফিরিয়ে আনলেই হয়। সংলাপের তো কোনো প্রয়োজন নাই। আর আওয়ামী লীগের কথা, বিএনপি সংলাপের যোগ্য নয়।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন," ২০১৪ সালে আমরা নির্বাচনে যাইনি। এরপর ২০১৮ সালে আমরা শেখ হাসিনাকে বিশ্বাস করে আলোচনায় বসলাম। নির্বাচনে গেলাম। তিনি বলেছিলেন একবার আমাকে বিশ্বাস করেন। নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে। তারপর তিনি কী করলেন সবার জানা। সকালের ভোট রাতে হলো। তাকে তো আর বিশ্বাস করা যায় না। এরপর আমাদের বিরুদ্ধে অব্যাহতভাবে মামলাও দেয়া হলো।”

‘সরকারের সংলাপে আমরা যাবো না এটা আগেই বলা হয়েছে’

তার কথা,"কোনো পর্যায়েই এখন আর সংলাপের দরকার নাই। আমরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সংলাপের কথা কখনো বলিওনি। যদি প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করেন এবং নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার ব্যবস্থা ফিরে আসে তাহলেই হয়। এর বাইরে তো আমরা নির্বাচনে যাব না। এটা সংবিধানে ছিল। চাইলে সহজেই ফিরিয়ে আনা যায়।”

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হনিফ বলেন,"যে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব দুর্নীতি ও সন্ত্রাসের দায়ে জেলখানায় এবং পলাতক তাদের সঙ্গে কী সংলাপ হবে, কার সাথে সংলাপ হবে? বিএনপি প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রত্যাখ্যাত হয়ে এখন বলছে তারা সংলাপ চায় না।  এতে তাদের ব্যর্থতা এবং অসহায়ত্বই প্রকাশ পায়।”

তিনি বলেন,"সংবিধানের অধীনেই নির্বাচন হবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কোনো সুযোগ নাই। তবে আমরা আশা করি একটি বড় রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেবে। তারা নির্বাচনে আসবে কী আসবে না তা বলার সময় এখনো হয়নি।”

শরিকেরা যা বলছেন:

আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ১৪ দলীয় জোটের সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক এবং জোট সরকারের সাবেক মন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া মনে করেন, "অর্থপূর্ণ নির্বাচন, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন এবং অবাধ ও সুষ্ঠ‚ নির্বাচনের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপ বা আলোচনার প্রয়োজন আছে। নেতিবাচক অবস্থানে গিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচন করা কঠিন। দেশের মানুষ চায় একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন। সেই প্রত্যাশা পুরণে সংলাপ প্রয়োজন।” নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা নিয়ে দুই দল তো দুই মেরুতে আছে , তাহলে সংলাপ দিয়ে কী হবে? এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন," আমরা কথা হলো নির্বাচন নিয়ে তো রাজনৈতিক সমঝোতা হতে হবে। সেটা যে ব্যবস্থায়ই নির্বাচন হোক না কেন। আর এই সংলাপ বা আলোচনা প্রকাশ্য বা অপ্রকাশ্য যেকানোভাবে হতে হবে।”

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, "বিরোধী দলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে সরকারের পদত্যাগ এবং একটি নির্দলীয় নিরপেক্ষ অন্তবর্তীকালীন সরকার ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়।  তাই সরকারের পদত্যাগ এবং একটি অন্তবর্তীকালীন সরকার গঠনের বিষয়ে আলাপ আলোচনা হতে পারে। শুধু  নির্বাচন নিয়ে সংলাপের কোনো প্রয়োজন নাই। এই আলোচনা অবান্তর। কারণ এটা ২০১৮ সালেই প্রমাণ হয়ে গেছে। সরকার এখন সংলাপে করবে না এই কথার কোনা অর্থ নেই। কারণ তাদের সংলাপে তো আমরা যাব না এটা আগেই বলা হয়েছে।”

সংলাপ চান কারা?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রাহমান বলেন, "সংলাপের কোনো বিকল্প নাই। যে রাজনৈতিক সংকট চলছে তার সমাধান সংলাপ বা আলোচনার মধ্য দিয়েই হতে পারে। সেটা না হলে একটি অস্বাভাবিক অবস্থা হতে পারে। দেশের মানুষ তার জন্য প্রস্তুত নয়। করোনার পর মন্দা, দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এর ওপর যদি কোনা রাজনৈতিক বড় সংকট তৈরি হয় তাহলে দেশের মানুষ তার চাপ নিতে পারবে না।”

তার কথা,"সংলাপ না হলে দুইটি অপশন। একটি হলো আওয়ামী লীগ যা চায় তাই হবে অথবা বিএনপি যা চায় তাই হবে। এই অপশনগুলোর বাস্তবতা খুব কঠিন।  অতীতে সংলাপ হয়েছে। সংলাপ নিয়ে আমাদের নানা ধরনের অভিজ্ঞাতাও আছে। তারপরও আলোচনায়ই সমাধান। অতীতে উন্নয়ন সহযোগীরা সংলাপে সহযোগিতা করেছে। ভবিষ্যতেও করবে বলে আমার মনে হয়।”

আর সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার মনে করেন," রাজপথে কোনো সমাধান হয় না। সেটা সাময়িক। অতীতে আমরা দেখেছি সাময়িক সমাধানের পর আগের অবস্থায় ফিরে যায়। তাই নির্বাচন ব্যবস্থায় একটি ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে হলে একটি নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত লাগবে, সমঝোতা লাগবে।”

তার কথা,"বর্তমান কাঠামোতে তো সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব নয়। তাই যে নামেই ডাকি একটি নতুন কাঠামো দরকার। সেটা রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আলোচনা বা সংলাপ এবং সমঝোতা ছাড়া সম্ভব নয়।”

দ্ইু দলেরই সংলাপ না চাওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন,"আমার মনে হয় রাজনৈতিক দলগুলো যা বলে তা বিশ্বাস করে না। আর যা বিশ্বাস করে তা বলেনা।”