1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বিএনপির সঙ্গে সংলাপ নয়, বললেন শেখ হাসিনা

২৭ নভেম্বর ২০২২

জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও রাজনৈতিক সংকট নিয়ে রাজনৈতিক সংলাপের সম্ভাবনাকে নাকচ করে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিভিন্ন মহল বিশেষ করে কূটনতিক মহল ও নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে সংলাপের দাবি রয়েছে।

https://p.dw.com/p/4K9B6
রাজনৈতিক সংলাপকে নাকচ করে দেয়া প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য নিয়ে নানা মহলে আলোচনা চলছে
রাজনৈতিক সংলাপকে নাকচ করে দেয়া প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য নিয়ে নানা মহলে আলোচনা চলছেছবি: Xinhua News Agency/picture alliance

বিএনপি বলছে তারাও কোনো সংলাপ চায়না। সংলাপ হতে পারে তাদের দাবি মেনে নেয়ার পর। বিএনপি এখন  বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগ এবং নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনে আছে।  তবে বিশ্লেষকরা মনে করেন," শেষ পর্যন্ত সংলাপ ও সমঝোতা হবে।”

প্রধানমন্ত্রী যা বলেছেন:

প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনাশনিবার ঢাকায় এক সমাবেশে বলেন," অনেকে বলেন ডায়ালগ করতে হবে। আলোচনা করতে হবে। কাদের সঙ্গে? ওই বিএনপি, খালেদা জিয়া-তারেক জিয়া? সাজাপ্রাপ্ত আসামি, যারা গ্রেনেড হামলা করে আমাকে হত্যার চেষ্টা করেছে। এখন ওই দুর্নীতিবাজ-সাজাপ্রাপ্ত, এতিমের অর্থ আত্মসাৎকারী, অর্থ ও অস্ত্র পাচারকারী, গ্রেনেড হামলাকারী, আইভি রহমানের হত্যাকারীদের সঙ্গে সংলাপ করতে হবে?” তিনি আরো বলেন, ''জিয়াউর রহমান ছিল আমার বাবার হত্যাকারী। আর এদের সঙ্গে ডায়ালগ করতে হবে! আলোচনা করতে হবে! আবার মানবাধিকারের কথাও বলেন। এটা কেমন ধরনের কথা?”

''সংলাপের জন্য বিএনপি বিদেশিদের কাছে ধর্না দিচ্ছে''

সংলাপ চায়না বিএনপিও:

রাজনৈতিক সংলাপকে নাকচ করে দেয়াপ্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য নিয়ে এখন রাজনৈতিক মহলসহ নানা মহলে আলোচনা হচ্ছে।কিন্তু বিএনপি বলছে তারা সংলাপের কোনো দাবি করেনি। প্রধানমন্ত্রী উদ্দেশ্যমূলকভাবে এইসব কথা বলছেন। দলটির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন," এই সরকারের অধীনে যে অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব নয় সেটা বারবার প্রমাণিত হয়েছে। তাই আমরা এই সরকারের পদত্যাগ , সংসদ ভেঙে দেয়া এবং নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন করছি। একই সঙ্গে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিও রয়েছে। এই দাবি মেনে নেয়ার আগে কোনো সংলাপ বা আলোচনা নয়। দাবি মেনে নেয়ার পর সংলাপ বা আলোচনা হতে পারে।”

তার কথা," প্রধানমন্ত্রী যে ভাষায় আমাদের আক্রমণ করে কথা বলছেন, আমরা সেরকম হলে ২০১৮ সালে আমাদের সঙ্গে সংলাপ করেছেন কীভাবে? আমরা সংলাপের জন্য চিঠি দিয়েছিলাম  তখন তারা কিন্তু আমাদের সংলাপের দাবি মেনে নেন।  প্রধানমন্ত্রীর যে বক্তব্য এটা চরম রাজনৈতিক প্রতিহিংসা এবং বিদ্বেষমূলক বক্তব্য। তার বক্তব্য রাজনৈতিক শিষ্টাচার বহির্ভূত এবং রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা তৈরির ইঙ্গিতবহ।”

"বিএনপি দূতাবাসে ধর্না দিচ্ছে”

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন বলেন," বিএনপি নিজে সংলাপের কথা না বললেও এটার জন্য তারা বিভিন্ন দূতাবাস ও বিদেশিদের কাছে ধর্না দিচ্ছে। তারা আলোচনার কথা বলছেন। বিএনপিপন্থী বুদ্ধিজীবীরাও সংলাপের দাবি তুলছেন। প্রধানমন্ত্রী তাদের উদ্দেশ্য করেই ওই কথা বলেছেন।”

তার কথা," প্রধানমন্ত্রী এর আগে বার বার তাদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেছেন। তারা প্রধানমন্ত্রীকে ফিরিয়ে দিয়েছেন। অপমান করেছেন। ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী আলোচনা করতে চেয়েছেন। তারা করেনি। তখন আলোচনা করলে এই সংকট হতোনা। সেদিন আলোচনা না করে উনি(খালেদা জিয়া) শিষ্টাচার বহির্ভূত আচরণ করেছেন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে। খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকো মারা যাওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী সহানুভূতি জানাতে গিয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যে আচরণ করা হয়েছে রাস্তার মানুষের সঙ্গেও এরকম আচরণ করা হয়না।”

"আওয়ামীর অধীনে অবাধ নির্বাচন সম্ভব নয়''

তিনি বলেন," বিএনপি তো ১৯৭৫ সালের খুনি, ২১ আগস্টের খুনি। যারা বাংলাদেশকে পাকিস্তান বানাতে চায় তাদের সঙ্গে কিসের সংলাপ? খুনিদের সঙ্গে কিসের সংলাপ?”

এখনো চূড়ান্ত কথা বলার সময় আসেনি:

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্য্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার মনে করেন," প্রধানমন্ত্রী যে কথা বলেছেন এবং কিছুদিন ধরে বিএনপিসহ বিরোধীদল যে কথা বলছে তারা কোনোটাই আমার কাছে এখন চূড়ান্ত বলে কিছু মনে হচ্ছেনা। আমার কাছে মনে হয় সামনের বছরের মাঝামাঝি সময়ের আগ পর্যন্ত যে রাজনৈতিক কথার লড়াই চলছে সেটাকে সিরিয়াসলি নেয়ার মত অবস্থা তৈরি হবেনা। কারণ এর অনেক সমীকরণ ও পাল্টা সমীকরণ থাকবে।”

তার কথা," গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় বিষয়ে রাজনৈতিক দলের সংলাপ হতে পারে । কেন হবে না? এটা যে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেই শুধু হবে তাও নয়। অন্যদের সঙ্গেও হতে পারে।”

তিনি আরো যোগ করেন," রাজনৈতিক দলগুলোর জোটবদ্ধ হওয়া বা বড় ব্যানার বেছে নেয়ার বিষযটিও আসলে এখনো চূড়ান্ত বলে আমার কাছে মনে হয়না।”

আর রাজনৈতিক বিশ্লেষক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান কার্জন মনে করেন," দুই দলই হয়তো রাজনৈতিক কৌশলের অংশ হিসেবে এখন এ ধরনের কথা বলছে। তবে শেষ পর্যন্ত তো তাদের একটা সমঝোতায় আসতে হবে। আমাদের স্টেক হোল্ডার, আমাদের উন্নয়ন সহযোগী ও বন্ধু রাষ্ট্রের সহযোগিতায় সব সময়ই দেখেছি শেষ পর্যন্ত একটা সমঝোতা হয়। আলোচনা হয়। এবারও আশা করি তাই হবে।”

তার কথায়," এর আগে তো বিভিন্ন সময়ে রাজনৈতিক সংকট মোকাবেলায় বার বার সংলাপ হয়েছে।”