উগ্র দক্ষিণপন্থি কার্যকলাপ
১২ জুলাই ২০১৩জার্মানির লোয়ার স্যাক্সনি রাজ্যের উগ্র ডানপন্থি মহলে এখনো সক্রিয় সাবেক এক নব্য নাৎসির কাজ হচ্ছে সারাক্ষণ ইন্টারনেটের সামনে বসে থাকা৷ তিনি মূলত চরমপন্থি নেটওয়ার্কগুলোর অনলাইন কর্মকাণ্ডের উপর নজর রাখেন৷ আর এটাই তার আয়ের মূল উৎস যা আসে ‘‘সেই মহলের কিছু ফান্ড থেকে৷'' এই তথ্যগুলো দিয়েছেন মার্টিন সিগেনহাগেন৷ ‘‘উগ্র ডানপন্থিদের বিরুদ্ধে অনলাইন কাউন্সিলিং'' প্রকল্পের পরিচালক তিনি৷
প্রায়ই অনেক অভিভাবক সিগেনহাগেন-এর পরামর্শ কেন্দ্রে হাজির হন, কেননা তাদের সন্তানরা উগ্র ডানপন্থিদের ফাঁদে পা দিচ্ছেন বলেই ধারণা তাদের৷ অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায়, উগ্র ডানপন্থিদের সঙ্গে সন্তানদের প্রথম সংযোগ ঘটছে ইন্টারনেটে৷
সিগেনহাগেন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘ফেসবুক সম্পর্কে তারা খুব কমই জানেন৷ অধিকাংশ ক্ষেত্রে তারা জানেন না যে তাদের সন্তানেরা ইন্টারনেটে কী করছেন৷''
জার্মান নব্য নাৎসিরা প্রাথমিক এবং পরিষ্কারভাবে তরুণ প্রজন্মের কাছে জনপ্রিয় সামাজিক নেটওয়ার্কগুলোতে নেতিবাচক প্রচারণা চালাচ্ছে৷ ইউগেন্ডশুৎস ডটনেট (jugendschutz.net) নামক একটি রাষ্ট্রীয় অর্থায়নে পরিচালিত প্রতিষ্ঠানের বাৎসরিক প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে এসব তথ্য৷ গত মঙ্গলবার (০৯.০৭.১৩) বার্লিনে প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেছে প্রতিষ্ঠানটি৷ মুলত ইন্টারনেটে অপরাধ এবং ‘‘তরুণদের জন্য বিপজ্জনক'' বিষয়াদি শনাক্ত করে ব্যবস্থা নেয় তারা৷
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১২ সালে প্রতিষ্ঠানটি ইন্টারনেটে ১,৬০০ অপরাধ শনাক্ত করেছে, যার আশি শতাংশ পাওয়া গেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে৷ গত বছর ইউগেন্ডশুৎস ডটনেট জার্মানিতে ৫,৫০০ উগ্র ডানপন্থি কর্মকাণ্ড শনাক্ত করেছে, যা ২০১১ সালের অনুপাতে পঞ্চাশ শতাংশ বেশি৷ টুইটারেও উগ্র ডানপন্থিরা বেশ সক্রিয়৷ ২০১২ সালে তাদের প্রায় ২০০ অ্যাকাউন্ট খুঁজে পেয়েছে ইউগেন্ডশুৎস ডটনেট, ২০১১ সালে এই সংখ্যা ছিল ১৪১৷
প্রথম দর্শনে মনে হবে – ক্ষতিকর নয়
উগ্র ডানপন্থি গোষ্ঠিগুলোর ফেসবুক প্রোফাইল প্রথম দর্শনে ক্ষতিকর মনে হয় না৷ জার্মানির ফেডারেল এজেন্সি ফর সিভিক এডুকেশন (বিপিবি) এর টোমাস ক্র্যুগার মনে করেন, উগ্র ডানপন্থিরা ইন্টারনেটে ক্রমশ ছদ্মবেশ ধারণ করছে৷ তিনি বলেন, ‘‘শুরুতে তারা তরুণ প্রজন্মের পছন্দের বিভিন্ন বিষয় যেমন লাইফস্টাইল, সংগীত এবং বিভিন্ন উৎসব সম্পর্কিত বিষয়াদি প্রদর্শন করে৷''
আর সেগুলোর মধ্যেই বর্ণবাদী এবং বৈষম্যমূলক বিভিন্ন বিষয় লুকানো থাকে এবং বেশ কয়েকটি ক্লিকের পর সেগুলো পাওয়া যায়৷ ইউগেন্ডশুৎস ডটনেট এর উপ পরিচালক স্টেফেন গ্লাসার এই বিষয়ে বলেন, ‘‘এভাবে যে সব বিষয় ছড়ানো হয় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সেগুলো আইনি প্রক্রিয়ার মধ্যে আনা যায়না৷''
ফেসবুকের সঙ্গে সহযোগিতা
গ্লাসার এবং ক্র্যুগার উভয়েই স্বীকার করেছেন, ফেসবুক এবং গুগলের মতো বড় ইন্টারনেট প্ল্যাটফর্মগুলোর সঙ্গে তাদের সহযোগিতা দিনে দিনে উন্নত হচ্ছে৷ ক্র্যুগার জানান, এসব ওয়েবসাইট এখন একক ব্যক্তি বা ইউগেন্ডশুৎস ডটনেট এর মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর অভিযোগকে গুরুত্ব সহকারে নিচ্ছে৷ ফলে বিভিন্ন ওয়েবসাইট থেকে আপত্তিকর বিষয়বস্তু দ্রুত অপসারণ এবং বিভিন্ন প্রোফাইল বেশ দ্রুত ব্লক করা সম্ভব হচ্ছে৷
আর এসব কারণে অনেক ডানপন্থি ইন্টারনেট ব্যবহারকারী অপেক্ষাকৃত কম পরিচিত বিভিন্ন সার্ভার ব্যবহার করতে শুরু করেছে৷ এক্ষেত্রে বিশেষভাবে উল্লেখ করতে হয় রাশিয়ার ভিকে ডটকম এর কথা৷ এই সামাজিক যোগাযোগ সাইটটির দাবি, তাদের ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১০০ মিলিয়নের বেশি৷ এই ব্যবহারকারীদের মধ্যে জার্মানসহ পোলিশ এবং চেক নব্য নাৎসিরাও রয়েছে, জানান গ্লাসার৷ তিনি বলেন, ‘‘গত বছরের মাঝামাঝি সময় থেকে উগ্র নব্য নাৎসিরা ভিকে ডটকম এর মাধ্যমে প্রচারণা শুরু করে৷'' বিশেষ করে ফেসবুক এবং অন্যান্য সেবাদাতাদের কাছে ব্লক হওয়া ব্যক্তিরা এই মাধ্যম ব্যবহার করছে বলেও জানান গ্লাসার৷ তবে আশার কথা হচ্ছে, ভিকে ডটকমের সঙ্গেও সরাসরি যোগাযোগ স্থাপনে সক্ষম হয়েছে ইউগেন্ডশুৎস ডটনেট৷
একক ব্যক্তিদের দায়িত্ব
সিগেনহাগেন নিশ্চিত যে উগ্র ডানপন্থি চরমপন্থিরা নতুন করে ইন্টারনেটে তাদের উপস্থিতি তৈরি শুরু করেছে৷ আর এক জায়গায় ব্লক হলে তারা অন্য জায়গায় গিয়ে ঘাঁটি গাড়ছে৷ উদাহরণস্বরূপ তারা স্মার্টফোনের জন্য বিশেষ অ্যাপস তৈরি করেছে যা ব্যবহার করে উগ্র ডানপন্থি রেডিও অনুষ্ঠান এবং পডকাস্ট ডাউনলোড করা যাবে৷ নব্য নাৎসিদের নিত্য নতুন এ ধরনের কর্মকাণ্ড বন্ধ করা কঠিন বলেই মনে করেন সিগেনহাগেন৷
চরমপন্থিদের যারা রুখতে চায় তাদের জন্য রাজনৈতিক শিক্ষা গুরুত্বপূর্ণ৷ সিগেনহাগেন বলেন, ‘‘এটা হচ্ছে স্কুলের ভেতরে এবং বাইরে উভয় ক্ষেত্রেই মানুষকে সচেতন করার ব্যাপার৷ ইন্টারনেটে প্রচারিত ঘৃণা বা বিদ্বেষ ছড়ানো কন্টেন্টের বিরুদ্ধে লড়তে করণীয় সম্পর্কে প্রত্যেক ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সজাগ থাকতে হবে৷''