তাইওয়ানে মার্কিন মন্ত্রীর সফর
১০ আগস্ট ২০২০অ্যামেরিকা দলমতনির্বিশেষে এতকাল ‘এক চীন নীতি’ মেনে চললেও ট্রাম্প প্রশাসন সেই ধারাবাহিকতার মূলে আঘাত করলো৷ পরিকল্পনা অনুযায়ী তাইওয়ানের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন মার্কিন স্বাস্থ্যমন্ত্রী৷ কোনো রাখঢাক না করে প্রকাশ্যে এমন সাক্ষাতের ফলে গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের সঙ্গে সম্পর্কে আরও চিড় ধরতে পারে, এমন ঝুঁকির পরোয়া করলেন না ট্রাম্প৷
সোমবার তাইওয়ানের রাজধানী তাইপেতে মার্কিন স্বাস্থ্যমন্ত্রী অ্যালেক্স আজার তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট সাই ইং-ওয়েনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে গণতান্ত্রিক তাইওয়ানের প্রতি ট্রাম্প প্রশাসনের জোরালো সমর্থন জানান৷ সেইসঙ্গে করোনা ভাইরাস মহামারির মোকাবিলা করতে তাইওয়ানের পদক্ষেপকে বিশ্বের অন্যতম সেরা হিসেবে প্রশংসা করেন তিনি৷ আজার তাইওয়ানের খোলামেলা, স্বচ্ছ ও গণতান্ত্রিক সমাজের ভূয়সী প্রশংসা করেন৷ তিনি তাইওয়ানের স্বাস্থ্য ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেন৷
১৯৭৯ সালে তাইওয়ানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ত্যাগ করার পর এই প্রথম কোনো মার্কিন মন্ত্রী এত বড় প্রতিনিধিদল নিয়ে সে দেশ সফর করলেন৷ ২০১৪ সালে তৎকালীন মার্কিন পরিবেশমন্ত্রী তাইওয়ান সফর করলেও ট্রাম্প প্রশাসন অন্তত বিষয়টিকে সে ভাবেই তুলে ধরছে৷ অর্থনীতি ও গণস্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে দুই দেশের সহযোগিতার ঘোষণা করেন আজার৷ তিনি বলেন, মহামারি মোকাবিলা ছাড়াও টিকা ও ওষুধ নিয়ে গবেষণা ও উৎপাদনের ক্ষেত্রেও একসঙ্গে কাজ করবে দুই দেশ৷
তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট সাই করোনো সংকট মোকাবিলার ক্ষেত্রে ট্রাম্প প্রশাসনের সহায়তার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন৷ তিনি বলেন, চীনের আপত্তি সত্ত্বেও অ্যামেরিকা বিশ্ব স্বাস্থ্য সভায় অংশ নিতে সাহায্য করায় তাইওয়ানের খুব সুবিধা হয়েছে৷ সাই মনে করেন, স্বাস্থ্যের অধিকারের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ একেবারেই কাম্য নয়৷ তাঁর মতে, চীন যেভাবে ওয়ার্ল্ড হেলথ অ্যাসেমব্লিতে তাইওয়ানের অংশগ্রহণ প্রতিরোধের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, তা স্বাস্থ্যর উপর সর্বজনীন অধিকারের পরিপন্থি৷
বলা বাহুল্য, চীন তাইওয়ানের প্রতি মার্কিন প্রশাসনের বর্তমান নীতির কড়া সমালোচনা করেছে৷ বাণিজ্য, সামরিক ও নিরাপত্তার ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের লাগাতার অবনতির মাঝে ওয়াশিংটনের সঙ্গে তাইপের সখ্যতা বেইজিং মোটেই পছন্দ করছে না৷ মার্কিন স্বাস্থ্যমন্ত্রীর তাইওয়ান সফরকে চীন ‘নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা’-র প্রতি হুমকি হিসেবে বর্ণনা করেছে৷
অ্যামেরিকার আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রাক্কালে চীনের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়টি প্রাধান্য পাচ্ছে৷ সমালোচকদের মতে, ট্রাম্প প্রশাসন করোনা সংকট মোকাবিলায় ব্যর্থতা ঢাকতে চীনের প্রতি কড়া সমালোচনার আশ্রয় নিচ্ছে৷ তবে এ ক্ষেত্রে ‘লাল সীমা’ অতিক্রম করতে প্রস্তুত নয়৷ তাই তাইপে শহরে মার্কিন প্রতিনিধি দফতর হিসেবে পরিচিত ‘অ্যামেরিকান ইনস্টিটিউ’-এর প্রাক্তন প্রধান ডগলাস পাল জানিয়েছেন, যে জাতীয় নিরাপত্তার সঙ্গে যুক্ত কোনো মার্কিন শীর্ষ কর্মকর্তা তাইওয়ান সফর করছেন না৷ এদিকে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলির মূল্যায়ন অনুযায়ী আসন্ন নির্বাচনে চীন ট্রাম্পের পরাজয় নিশ্চিত করতে চেষ্টা চালাচ্ছে৷ তবে ট্রাম্পের বদলে জো বাইডেন ক্ষমতায় এলেও চীনের সঙ্গে বর্তমান শীতল সম্পর্ক রাতারাতি বদলে যাবে কিনা, সে বিষয়ে সংশয় রয়েছে৷
এসবি/কেএম (রয়টার্স, এএফপি)