তামিমের পাশে থাকুন
২৮ জানুয়ারি ২০২০তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম দুটিতে খুব বাজেভাবে হেরেছে বাংলাদেশ৷ তৃতীয় ম্যাচ বৃষ্টিতে ভেসে যাওয়ায় এক জয়ের সান্ত্বণাও জোটেনি ভাগ্যে৷
শেষ ম্যাচটা হলে হয়ত আবার হারতেই হতো৷ হয়ত পেতেই হতো হোয়াইট ওয়াশের লজ্জা৷ দলের সার্বিক অবস্থা যে এমনই তা অস্বীকার কী করে করব আমরা? ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিং সব জায়গাতেই যে একেবারে ছন্নছাড়া ছিল মাহমুদুল্লাহর দল!
পরিসংখ্যানের সঙ্গে একটু ক্রিকেটীয় বোধ যোগ করে দেখুন, এই ছন্নছাড়া দলের ব্যাটিংয়ে যিনি সবচেয়ে বেশি ধারাবাহিক এবং দায়িত্বশীল ছিলেন, তিনি কিন্তু তামিম ইকবাল৷
দুই ম্যাচে ১০৪ রান করে দু' দলের মধ্যে তিনিই সেরা৷ হ্যাঁ, সবচেয়ে বেশি রান তার৷
স্ট্রাইকরেট ১১৯.৫৪-কে যারা খুব খারাপ বলছেন, তারা একটু ভেবে দেখুন, এমন হওয়ার কারণ আসলে কী৷
প্রথম ম্যাচে ৭২ রানের উদ্বোধনী জুটি পেয়েছিল বাংলাদেশ৷ বিপিএল-এ যেভাবে একপ্রান্ত আগলে রেখে অন্যপ্রান্তের ব্যাটসম্যানকে দিয়েছিলেন মেরে খেলার সুযোগ, সেভাবেই ব্যাট করছিলেন তামিম৷ কিন্তু অন্যপ্রান্তে মোহাম্মদ নাঈম সেই দায়িত্বটা নেননি বা নিতে পারেননি৷ ফলে খোলস ছেড়ে আগ্রাসী হওয়ার চেষ্টা করতে হলো তামিমকেই৷ আর তা করতে গিয়েই ৩৪ বলে ৩৯ করে আউট৷ তারপর নাঈমও আউট হয়ে গেলেন ৪৩ রান করে৷ তার স্ট্রাইকরেট আরো খারাপ৷ ৪৩ রান করতে লেগেছে ৪১ বল৷ তামিম আউট হওয়ার পরেও হাতে ছিল নয় ওভার৷ ওই নয় ওভারে মাত্র ৭০ রান তোলার দায় তার ঘাড়েই বেশি করে চাপাতে চাওয়া খুবই নির্মম এবং হাস্যকর৷
দলের সবচেয়ে অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান হিসেবে দ্বিতীয় ম্যাচেও নেতৃত্বের ভূমিকাই নিতে চেয়েছিলেন তামিম৷ শুরুতেই নাঈম আউট হয়ে যাওয়ায় নিজের উইকেটও ছুঁড়ে দেয়ার ঝুঁকি নিতে যাওয়া হতো বোকামি৷ তামিম সেই বোকামি করেননি৷ অন্যপ্রান্তে নিয়মিত উইকেট পড়তে থাকায় সেদিনও কিছুটা রয়ে-সয়েই ব্যাট করতে হয়েছে তাকে৷ সেভাবে খেলেই করেছেন ৫৩ বলে ৬৫৷
তামিমের স্ট্রাইকরেট নিয়ে কথা বলার আগে স্কোরবোর্ডে একটু চোখ বুলিয়ে নিন৷ দেখবেন, সেদিন তামিম ছাড়া আর মাত্র দু'জন দু' অঙ্কে পৌঁছেছিলেন৷ সেই দু'জনের স্ট্রাইকরেট তামিমের চেয়েও খারাপ৷
তারপরও যারা তামিমের সমালোচনা করছেন, তাদের একটা জবাব অবশ্য মাহমুদুল্লাহ দিয়েছেন৷ বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টি দলের অধিনায়ক যথার্থই বলেছেন, এই সিরিজে মোটা দাগে বাংলাদেশের একটাই প্রাপ্তি আর তা হলো তামিমের ব্যাটিং৷
গত কয়েক বছর বাংলাদেশ দলে ‘অটোমেটিক চয়েস' ছিলেন পাঁচজন৷ সাকিব, মুশফিক, তামিম, মাশরাফি এবং মাহমুদুল্লাহ৷ সাকিব দলে নেই অনাকাঙ্খিত কারণে৷ শুধু ওয়ানডে খেলা মাশরাফির ক্যারিয়ার নিভু নিভু৷ বাকি তিনজনের বিকল্প কবে খুঁজে পাওয়া যাবে তা কারো জানা নেই৷
বিকল্প এলে জোর করে দলে থাকার চেষ্টা মাশরাফি, তামিমরা কোনোদিন করবেন বলে মনে হয় না৷ মাশরাফির সিদ্ধান্ত মাশরাফি নেবেন৷
তামিমকে তার ১৩ বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের অভিজ্ঞতার ওপর আস্থা রেখে স্বাভাবিকভাবে খেলতে দিলে উপকারটা বাংলাদেশের ক্রিকেটেরই হবে৷