মহাকাব্যিক জয় দিয়ে এশিয়া কাপ শুরু টাইগারদের
১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮কোথাও কি জাতীয় সংগীত বেজে উঠল? হ্যা, ঠিকই বেজেছে৷ শুরুতে দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের বাতাসে৷ পরে তামিমের লাল-সবুজ হৃদয়ে৷ ভগ্ন কবজি আর হৃদয় নিয়ে যখন তিনি ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে রিটায়ার্ড হার্ট হয়ে ফিরছিলেন প্যাভিলিয়নের দিকে, তখন কি খুব আফসোস ছিল? লেগস্টাম্পের ওপর লাকমলের শর্ট বলটি শুধু ম্যাচ থেকেই তামিমকে ছিটকে দেয়নি, দিয়েছে টুর্নামেন্ট থেকেও৷ অন্তত ততক্ষণ তাই বলাবলি করছিলেন সবাই৷
দলের স্কোরকে লড়াকু ছবি দিতে যখন একপাশে মুশফিক নিরন্তর চেষ্টা করছেন, তখন অন্যপ্রান্তে একে একে ফিরে গেলেন বাকি নয়জন৷ স্কোরবোর্ডে তখন ২২৯ রান৷ আরেকবার হাতে লাগলে বোধ হয় ক্যারিয়ারই শেষ৷ কিন্তু সেই তামিমই ব্যাট হাতে ২২ গজে ফিরে এলেন ১৯ বল বাকি থাকতে৷ দলের জন্য, দেশের জন্য৷ সেই লাকমলের হাতেই বল৷ আবারো লেগ স্টাম্পের ওপর শর্ট বল করলেন তিনি৷ এক হাতেই সামাল দিলেন তামিম৷ মুশফিককে সঙ্গ দিলেন শেষ পর্যন্ত৷ ১৫০ বলে ১৪৪ রানের অনবদ্য এক ইনিংস খেলা মুশফিক ও বাংলাদেশ থামে ইনিংসের ৩ বল বাকি থাকতে৷ সঙ্গী ২৬১ রানের লড়াকু দলীয় স্কোর৷
এর আগে, শুরুতেই বাংলাদেশকে গর্তে ফেলে দেন বর্ষীয়ান লঙ্কান পেসার লাসিথ মালিঙ্গা৷ ষোল মাস পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরা মালিঙ্গা প্রথম ওভারেই পরপর দুই বলে তুলে নেন লিটন ও সাকিবের উইকেট৷ পরের ওভারেই তামিমের চোট৷ তখন দলের রান মাত্র ৩৷
সেই গর্ত থেকে মিথুনকে সঙ্গী করে দলকে টেনে তোলেন মুশফিক৷ এই জুটিতে আসে গুরুত্বপূর্ণ ১৩১ রান৷ পঞ্চম ওভারে লাকমলের বলে দু’টি লাইফ পাওয়া মিথুন শেষ পর্যন্ত হাফ সেঞ্চুরি করেই থামেন৷ ৬৩ রানে মালিঙ্গার বলেই উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন৷ এরপর মাহমুদুল্লাহও দ্রুত তাঁর পথ দেখলে মালিঙ্গার চতুর্থ শিকার হন মোসাদ্দেক৷ অধিনায়ক মাশরাফি মুশফিককে কিছুটা সঙ্গ দিতে পারলেও তা বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি৷ শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের পকেটে যখন ২০৩ রান, ততক্ষণে ৮ জন ফিরে গেছেন সাজঘরে৷ মুস্তাফিজ সেখানে ১১ বলে ১০ রান করে আরো কিছুটা এগিয়ে দেন দলকে৷ আর এরপরই আসে সেই তামিম-মুহূর্ত৷ লঙ্কানদের পক্ষে মালিঙ্গা ১০ ওভার করে ২৩ রানের বিনিময়ে ৪ উইকেট নেন৷
লঙ্কান ব্যাটিংকে এভাবে ব্যাখ্যা করা যায়৷ প্রথম ১ ওভার ৫ বলে ২২ রান বিনা উইকেটে৷ পরের ৮ ওভার ১ বলে ২০ রান, চার উইকেটে৷ এরপরের গল্পটি শুধু টাইগারদের বিজয়েরই দীর্ঘায়িত এক গল্প৷
লঙ্কানরা ভেবেছিল বাংলাদেশকে ২০০ রানের মধ্যেই বেঁধে ফেলবে৷ কিন্তু মুশফিকের মহাকাব্যিক ইনিংস তা হতে দেয়নি৷ সেজন্যই কিনা দ্রুত রান তোলার ভুত যেন ঘাড়ে চাপিয়েই ব্যাটিংয়ে নামে লঙ্কাশিবির৷ ১ ওভার ৫ বলে ২২ রান তুলেও ফেলেন দুই ওপেনার থারাঙ্গা ও মেন্ডিস, যদিও রান আসে শুধু অভিজ্ঞ থারাঙ্গার ব্যাট থেকেই৷ নিজের প্রথম ওভারের শেষ বলে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলে মেন্ডিসকে পথ দেখান বাংলাদেশের বাঁ হাতি পেসার ‘দ্য ফিজ’৷ সেই শুরু৷ এরপর শুরু হয় মাশরাফি ঝড়৷ থারাঙ্গাকে ক্লিন বোল্ড ও ডি সিলভাকে এলবিডাব্লিউ’র ফাঁদে ফেলেন টাইগার স্কিপার৷
তড়িঘড়ি করে রান নিতে গিয়ে রানআউট হন শানাকা৷ এরপর মিরাজ ও রুবেল দু’জনেই বোলিংয়ে এসেই আঘাত করেন প্রতিপক্ষকে৷ ১৯ ওভারের মধ্যেই ৬৯ রানে অধিনায়ক ম্যাথুজসহ সাজঘরে ফিরে যান সাত লঙ্কান ব্যাটসম্যান৷ পরে লাকমল ও দিলরুয়ান পেরেরা কেবল পরাজয় বিলম্বিতই করেন৷ শ্রীলঙ্কার ইনিংস থামে ১২৪ রানে, ৩৫ ওভার ২ বলে৷ মাশরাফি, মুস্তাফিজ ও মেহেদির ঝুলিতে পড়ে দু’টি করে উইকেট৷ আর সাকিব, রুবেল ও মোসাদ্দেক সন্তুষ্ট থাকেন একটি করে উইকেট শিকার করে৷ ম্যাচসেরা হন লিটল মাস্টার মুশফিক৷
তবে দুঃখ একটাই, তামিমকে ছাড়াই হয়তো বাকি টুর্নামেন্টটা খেলতে হবে বাংলাদেশকে৷