তালেবানকে মদদ দিচ্ছে পাকিস্তান
১২ নভেম্বর ২০১৬অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে লন্ডনে জড়ো হয়েছিলেন পাকিস্তানি সুশীল সমাজের ৬০ জন প্রতিনিধি৷ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে সেখানে এসেছিলেন তাঁরা৷ আলোচনা করলেন পাকিস্তানের ভবিষ্যত নিয়ে৷ দক্ষিণ এশীয় সন্ত্রাসবাদবিরোধী এবং মানবাধিকার ফোরামের উদ্যোগে ‘লন্ডন ডিক্লেয়ারেশন ফর পাকিস্তানি প্লুরালিজম' শীর্ষক এই সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছিল৷ সেখানে পাকিস্তান কী কী সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে, সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলা এবং রাজনীতিতে সেনাবাহিনীর কী ভূমিকা রয়েছে – এ সব নিয়ে আলোচনা করা হয়৷
পাকিস্তানের সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত হুসাইন হাক্কানি সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘‘বিশ্বের সব চাপ থেকে মুক্ত হতে চাইলে পাকিস্তানের নিজেকে বদলাতে হবে৷ পশ্চিমা বিশ্ব বরাবরই পাকিস্তানকে ব্যর্থ রাষ্ট্র হিসেবে অভিহিত করে আসছে৷ কেননা পরমাণু শক্তিধর এই দেশটি অর্থনৈতিক সংকটে রয়েছে, অন্যদিকে, স্থানীয় ইসলামি জঙ্গিগোষ্ঠী বেসামরিক নাগরিক ও নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের উপর হামলা অব্যাহত রেখেছে৷
ইসলামি জঙ্গীদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ব্যর্থতা
অক্টোবরে কোয়েটার একটি পুলিশ অ্যাকাডেমিতে হামলায় ৬০ জন প্রাণ হারান৷ এতে পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর ব্যর্থতা প্রমাণিত হয়৷ প্রশ্ন উঠে, পাকিস্তান কেন জঙ্গিদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে কাজ করছে৷ তারা কি দেশে শরিয়া আইন প্রতিষ্ঠা করতে চায়? এই সংঘাতে ভারতের ভূমিকা কী? নিরাপত্তা নিয়ে আদৌ কি সরকারের কোন মাথা ব্যথা আছে?
জঙ্গিরা কী চায়?
আশির দশকে আফগান যুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমা বিশ্বের সহায়তায় মুজাহিদিনদের সমর্থন দিয়েছিল পাকিস্তান৷ কিন্তু নাইন ইলেভেনের পর প্রেক্ষাপট পাল্টে গেলো৷ তখন যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় তৎকালীন পাকিস্তানি শাসক পারভেজ মোশাররফ আফগানিস্তানে জঙ্গি দমন শুরু করলেন৷ তারপরও তালিবানসহ বেশ কিছু জঙ্গি গোষ্ঠী পাকিস্তানের কিছু এলাকা দখল করে এবং সামরিক-বেসামরিক নাগরিকদের উপর হামলা চালাতে থাকে৷ তাদের সামাল দেয়া সরকারের জন্য কঠিন হয়ে পড়ে৷
উদাহরণস্বরূপ তেহরিক-ই-তালেবান বা টিটিপি আফগান তালিবানদের সহযোগিতায় স্বতন্ত্র রাজনৈতিক দল গঠন করে৷ এই দলটিরও দাবি পাকিস্তানে শরিয়া আইন চালু করা৷
টিটিপি বরাবরই পশ্চিমা সংস্কৃতির বিপক্ষে৷ পাকিস্তানের অনেক মানুষের বিশ্বাস, পশ্চিমাবিশ্ব, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের অর্থনীতি এবং রাজনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করে৷ গত কয়েক বছরে পাকিস্তানে শরিয়া আইন প্রতিষ্ঠার জন্য বেশ কয়েকটি হামলা চালিয়েছে টিটিপি৷
যদিও পাকিস্তানের বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল স্থানীয় জঙ্গি গোষ্ঠীদের সমর্থন করে, তারপরও যুক্তরাষ্ট্র বা ইউরোপ কখনো এই রাষ্ট্রটির উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের ইচ্ছা পোষণ করেনি৷ ওয়াশিংটন এবং ব্রাসেলস বরাবরই সামরিক এবং বেসামরিক দলগুলোর মধ্যে সমতা বজায় রেখে চলার আহ্বান জানিয়ে আসছে৷ এই সম্মেলনে উপস্থিত পাকিস্তানি প্রতিনিধিরা বলছিলেন, পাকিস্তানের স্থিতিশীলতা খুব প্রয়োজন, কারণ এই দেশটির কাছে যে পারমাণবিক অস্ত্র আছে, তা যদি জঙ্গিদের হাতে চলে যায় তাহলে পরিস্থিতি হবে ভয়াবহ৷ পাকিস্তানের সরকার এবং সেনাবাহিনী অবশ্য বরাবরই দাবি করে আসছে যে, পরমাণু অস্ত্রগুলো তাদের কঠোর নিয়ন্ত্রণে আছে৷
লন্ডনভিত্তিক পাকিস্তানি সাংবাদিক ফারুক সুলেহরিয়া ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘কখনোই নিরাপদ নয়৷ সেনাবাহিনীর তালেবানের সমর্থন করাটা মোটেই অগ্রাহ্য করার উপায় নেই৷ এমনও তো হতে পারে দুই দলের মধ্যে সমঝোতার কারণে এই অস্ত্রগুলো জঙ্গিদের হাতে চলে যেতে পারে৷''
পাকিস্তান কি আসলেই ব্যর্থ রাষ্ট্র?
পাকিস্তানকে ব্যর্থ রাষ্ট্রের নাম ঘুচাতে হলে সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলা ছাড়া ভিন্ন পথ নেই বলে জানালেন সম্মেলনের প্রতিনিধিরা৷ জঙ্গি জঙ্গিই, এদের ভালো বা মন্দ বলে আলাদা করার কিছু নেই বলে জানান তারা৷ তাই ভালো জঙ্গিদের সমর্থন করে দেশের জন্য বিপদ ডেকে আনার কোনো মানে হয় না৷ কেননা এই পন্থা ইতিমধ্যে ব্যর্থ হয়েছে৷ আর একের পর এক হামলার ঘটনা এটাই প্রমাণ করে৷
বন্ধু, আপনার কী মনে হয়? পাকিস্তান কি আসলেই একটি ‘ব্যর্থ রাষ্ট্র'? লিখুন নীচের ঘরে৷
শামিল শামস, হান্স স্প্রস/এপিব