তালেবানের অংশগ্রহণে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার চাইছে ওয়াশিংটন?
৯ মার্চ ২০২১সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প স্বৈরাচারী রাষ্ট্রনায়ক ও উগ্রপন্থিদের সঙ্গে বোঝাপড়ার পথে গিয়ে কৃতিত্ব নিতে পছন্দ করতেন৷ তাঁর পররাষ্ট্র নীতির অন্যতম হাতিয়ার ছিল এমন ‘অভূতপূর্ব’ আঁতাত৷ আফগানিস্তানের তালেবানের সঙ্গেও তার প্রশাসন একটি বিতর্কিত চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল, যা আগামী মে মাসে কার্যকর হবার কথা৷ এর আওতায় সে দেশ থেকে অবশিষ্ট ২,৫০০ মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহার করার কথা৷ বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সেই বোঝাপড়া মেনে নেবেন কিনা, তা নিয়ে জল্পনাকল্পনা চলছে৷ এরই মাঝে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেনের ফাঁস হয়ে যাওয়া একটি গোপন চিঠি আফগান সংবাদমাধ্যমে আলোড়ন তুলছে৷ সব মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহার করলে তালেবান দ্রুত আরও এলাকা দখল করে নিতে পারে বলে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন৷
গত সপ্তাহান্তে লেখা ব্লিংকেনের চিঠি অনুযায়ী বাইডেন প্রশাসন আফগানিস্তানে আমূল পরিবর্তন এনে নতুন এক অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসনে তালেবানের অংশগ্রহণ সম্পর্কে ভাবনাচিন্তা করছে৷ তিনি আফগান নেতাদের বিষয়টি বিবেচনা করতে উৎসাহ দিয়েছেন৷ তাঁরা রাজি হলে কয়েক সপ্তাহের মধ্যে তুরস্কে সব পক্ষের মধ্যে আলোচনা করে তালেবানসহ সব পক্ষের মধ্যে নতুন এক শান্তি চুক্তির সম্ভাবনা তুলে ধরছে মার্কিন প্রশাসন৷ নেপথ্যে কূটনৈতিক উদ্যোগের মাধ্যমে আফগানিস্তানের রাজনৈতিক সদিচ্ছা যাচাই করে সেই পথে এগোনোর চেষ্টা শুরু হয়েছিল৷ সেই চিঠি ফাঁস হয়ে যাবার ফলে বিভিন্ন পক্ষ চাপের মুখে পড়বে কিনা, তা এখনো স্পষ্ট নয়৷
আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে বিশেষ মার্কিন দূত হিসেবে নিজের আগের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে লরেল মিলার সংবাদ সংস্থা এএফপি-কে বলেছেন, বাইডেন প্রশাসন সম্ভবত বিভিন্ন বিকল্প খতিয়ে দেখছে৷ ট্রাম্পের চুক্তি কার্যকর করা অথবা নতুন কোনো বোঝাপড়ার মধ্যে কোনটা বাস্তবসম্মত হবে, তা বিবেচনা করা হচ্ছে৷ উল্লেখ্য, ব্লিংকেন আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনির উদ্দেশ্যে ট্রাম্প প্রশাসনের আফগানিস্তানের দায়িত্বপ্রাপ্ত অভিজ্ঞ দূত জালমাই খালিলজাদের প্রস্তাব দ্রুত বিবেচনা করার জন্য চাপ দিচ্ছেন৷
সব পক্ষ বাইডেন প্রশাসনের প্রস্তাব মেনে নিলে ব্লিংকেন একাধিক পদক্ষেপ তরান্বিত করতে চান৷ প্রথমত তালেবানকে ৯০ দিনের জন্য বসন্ত কালে বাৎসরিক সশস্ত্র অভিযান থেকে বিরত থাকতে হবে৷ অ্যামেরিকার উদ্যোগে তুরস্কে সব পক্ষের মধ্যে আলোচনার পাশাপাশি ব্লিংকেন জাতিসংঘের উদ্যোগে আফগানিস্তানের সব প্রতিবেশী দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সম্মেলনের প্রস্তাব দিচ্ছেন৷ বিশেষ করে পাকিস্তান ও ইরানের সমর্থন ছাড়া কোনো শান্তি চুক্তি কার্যকর করা কঠিন হবে বলে তিনি মনে করছেন৷ ১লা মের মধ্যে চূড়ান্ত বোঝাপড়া সম্ভব না হলেও কূটনৈতিক প্রক্রিয়া শুরু হলেই ওয়াশিংটন সন্তুষ্ট হবে৷ কোনো বোঝাপড়া ছাড়া আচমকা সৈন্য প্রত্যাহার করতে চায় না সে দেশ৷
তালেবানের সঙ্গে আপোশের প্রশ্নে আফগানিস্তানের সরকার ট্রাম্প ও বাইডেন প্রশাসনের উদ্যোগ সম্পর্কে মোটেই উৎসাহ দেখাচ্ছে না৷ সে দেশের ভাইস প্রেসিডেন্ট আমরুল্লাহ সালেহ বলেন, একটি ঘরে মাত্র ২০ জন মিলে দেশের ভবিষ্যৎ স্থির করা চলে না৷ তালেবান নির্বাচনে অংশ নিলে তাঁর অবশ্য কোনো আপত্তি নেই৷ বৈদেশিক শক্তির উপর নির্ভরতা সত্ত্বেও দেশের সাড়ে তিন কোটি মানুষের ভবিষ্যৎ নির্ধারনের অধিকার অন্য কারও হাতে দেওয়া হবে না, বলেন সালেহ৷ তালেবানের এক সূত্র সংবাদ সংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছে, যে সরাসরি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে অংশ না নিলেও তালেবান এমন সরকার গঠনের বিরোধিতা করবে না৷
এসবি/কেএম (এএফপি, রয়টার্স)