তুরস্কের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন
১২ আগস্ট ২০১৪তুরস্কের সমাজের একটা বড় অংশে এর্দোয়ানের জনপ্রিয়তা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই৷ এমনকি এই প্রথম বিদেশে বসবাসরত তুর্কি নাগরিকরা ভোটদানের ক্ষমতা পেয়ে তাঁর প্রতি বিপুল আস্থা দেখিয়েছেন৷ শুধু জার্মানিতেই তাঁর পক্ষে ভোট পড়েছে ৮০ শতাংশের বেশি৷ দেশের মধ্যে ৫২ শতাংশ ভোটই তাঁর ঝুলিতে পড়েছে, যদিও তিনি আরও বেশি সমর্থন প্রত্যাশা করেছিলেন৷ ২০০৩ সালে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ক্ষমতায় আসার পর তিনি দেশের উন্নতির জন্য যে কাজ করেছেন এবং সাফল্য দেখিয়েছেন, তার স্বীকৃতি হিসেবেই সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের আস্থা অর্জন করতে পেরেছেন তিনি৷ তুরস্ককে বিশ্বমঞ্চে আরও শক্তিশালীভাবে প্রতিষ্ঠা করার অঙ্গীকার করে এসেছেন তিনি৷
এই সময়কালে অর্থনৈতিক উন্নতি ও কৌশলগত গুরুত্বের মূল্যও দিতে হয়েছে তুরস্ককে৷ সমালোচকরা এর্দোয়ানের অনেক পদক্ষেপের মধ্যে স্বৈরতান্ত্রিক প্রবণতা দেখছেন৷ তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, সংবাদমাধ্যম ও বিরোধীদের পদে পদে বাধা সৃষ্টি করে সুস্থ গণতান্ত্রিক পরিবেশও শেষ করে দিয়েছেন তিনি৷ তাছাড়া ক্ষমতার রাশ নিজের হাতে রেখে দিতে তিনি প্রেসিডেন্ট পদের গুরুত্বও আচমকা বাড়িয়ে দিচ্ছেন৷ সংবিধান অনুযায়ী আগামী ২৮শে আগস্ট শপথ নেবার পর তিনি পর পর দু'বার পাঁচ বছরের জন্য প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে পারেন৷ সে ক্ষেত্রে আগামী ২০২৪ সাল পর্যন্ত তুরস্কের একচ্ছত্র নেতা থাকতে পারেন এর্দোয়ান৷ ফলে রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা মুস্তাফা কামাল আতাতুর্কের থেকেও বেশি সময় ক্ষমতা ভোগ করার সুযোগ পাবেন তিনি৷
এই প্রথম সরাসরি প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করিয়ে পদের মর্যাদাও বাড়িয়ে নিয়েছেন তিনি৷ আগামী ২০১৫ সালের সাধারণ নির্বাচনের পর সংবিধানে পরিবর্তন এনে প্রেসিডেন্টের হাতে আরও ক্ষমতা তুলে দেওয়ার চেষ্টা চলছে এর্দোয়ানের ইসলামপন্থি আক পার্টির মধ্যে৷ আপাতত প্রধানমন্ত্রী পদে নিজের অনুগত কাউকে বসিয়ে আরও এক দশক ধরে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন এর্দোয়ান৷
সমালোচনা দূরে রাখতে এর্দোয়ান নিজেকে সব নাগরিকের প্রেসিডেন্ট হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন৷ সব বিভেদ ভুলে তিনি মানুষের উদ্দেশ্যে ঐক্যবদ্ধ হবার আহ্বান জানিয়েছেন৷ উল্লেখ্য, আতাতুর্কের আদর্শে অনুপ্রাণিত ধর্মনিরপেক্ষ শক্তি এর্দোয়ানের তুমুল বিরোধিতা করে চলেছে৷ তাঁর আমলে ইউরোপীয় ইউনিয়নে যোগদানের প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয়েছে৷ মানবাধিকার, সব সম্প্রদায়ের ধর্মীয় স্বাধীনতা থেকে শুরু করে অনেক প্রশ্নে তুরস্কের বিরুদ্ধে সমালোচনার মাত্রা বাড়ছে৷
এর্দোয়ানের জয়ের পর জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল সহ ইউরোপীয় নেতারা তাঁকে অভিনন্দন জানিয়েছেন৷ সিরিয়া, ইরাক ও মধ্যপ্রাচ্যে চলমান সংকটের প্রেক্ষাপটে তুরস্কের ভূমিকা আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে৷
এসবি/ডিজি (এএফপি, রয়টার্স)