দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্টকে অভিশংসনের চেষ্টা ব্যর্থ
৭ ডিসেম্বর ২০২৪তবে হাজার হাজার বিক্ষোভকারী ইউনের পদত্যাগ চেয়ে বিক্ষোভ অব্যাহত রেখেছেন৷
অভিশংসনের ভোটগ্রহণ শুরুর পরপরই ক্ষমতাসীন পিপল পাওয়ার পার্টি (পিপিপি) এর অধিকাংশ আইনপ্রণেতা পার্লামেন্ট থেকে বেরিয়ে যান৷ মোট ভোট ২০০তে না পৌঁছানোয় ব্যালট গণনা না করেই প্রস্তাবটি বাতিল করা হয়৷
দক্ষিণ কোরিয়ার ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে ৩০০টি আসন রয়েছে৷ অভিশংসনের প্রস্তাব পাসের জন্য প্রয়োজন দুই-তৃতীয়াংশ আইনপ্রণেতার সমর্থন অর্থাৎ অন্তত ২০০টি ভোট৷
গত সপ্তাহে ইউন সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য সামরিক আইন ঘোষণা করার পর বিরোধী দলগুলো অভিশংসন প্রস্তাব উত্থাপন করে৷ পার্লামেন্টে বিরোধী দলগুলোর সম্মিলিতভাবে ১৯২টি আসন রয়েছে৷
অভিশংসন প্রস্তাব পাসের জন্য ক্ষমতায় থাকা পিপিপির অন্তত আটটি ভোট প্রয়োজন ছিল৷ পিপিপি এর সদস্যরা পার্লামেন্ট থেকে ওয়াকআউট করলেও তিনজন সদস্য ভোটে অংশ নেন৷ তবে তাতে প্রয়োজনীয় দুই-তৃতীয়াংশ সমর্থন অর্জন সম্ভব হয়নি৷
দক্ষিণ কোরিয়ার পার্লামেন্টের স্পিকার উ ওন-শিক প্রধান বিরোধী দল ডেমোক্রেটিক পার্টির একজন সদস্য৷ ক্ষমতাসীন পিপিপি পার্টির আইনপ্রণেতাদের অভিশংসনের শুনানিতে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন তিনি৷
পিপিপি সদস্যরা পার্লামেন্ট থেকে ওয়াকআউট করার পর দলটির কেবল একজন সংসদসদস্য আসনে বসেছিলেন৷
উ ওন-শিক পিপিপি এর আইনপ্রণেতাদের আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘‘মানুষের রক্ত এবং অশ্রু দিয়ে তৈরি কোরিয়া প্রজাতন্ত্রের গণতন্ত্র৷ আপনারা কি ইতিহাস, মানুষ এবং বিশ্বের বিচারের ভয় পান না?''
তবে তার আহ্বানে সাড়া দিয়ে ফিরে আসেননি পিপিপি সদস্যরা৷
পিপিপির একজন আইনপ্রণেতা শিন ডং-উককে উদ্ধৃত করে বার্তাসংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইওলের বিরুদ্ধে অভিশংসনের শুনানিতে ভোট দিতে দল থেকে কোনো বাধা দেয়া হয়নি৷
ওয়াকাআউট না করা একজন পিপিপি আইনপ্রণেতা ভোটে অংশ নেন৷ পরবর্তীতে আরও দুই পিপিপি সদস্য ভোটের জন্য পার্লামেন্টে ফিরে আসেন বলে জানিয়েছে দেশটির বার্তাসংস্থা ইয়োনহাপ৷
আন্দোলনকারীদের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া
ক্ষমতাসীন দলের আইনপ্রণেতারা বয়কট করায় অভিশংসনের প্রস্তাব ভেস্তে যাওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেছেন বিক্ষোভকারীরা৷
পুলিশ জানিয়েছে, জাতীয় পরিষদের চারপাশে প্রায় দেড় লাখ মানুষ বিক্ষোভে অংশ নিয়েছেন৷
ফার্স্ট লেডি কিম কিয়ন হি এর বিরুদ্ধে তদন্ত শুরুর প্রস্তাবও পার্লামেন্টে পাস না হওয়ায় হতাশা ব্যক্ত করেছেন অনেকে৷ মাত্র দুই ভোটের জন্য প্রয়োজনীয় দুই-তৃতীয়াংশ আইনপ্রণেতার সমর্থন পাওয়া যায়নি এই বিলে৷ ফার্স্ট লেডির বিরুদ্ধে তদন্তের পক্ষে ১৯৮টি এবং বিপক্ষে ভোট পড়ে ১০২টি৷
প্রতিবাদকারী আন জুন-চেওল বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেছেন, ‘‘পরিস্থিতি এই পর্যায়ে পৌঁছানোয় আমি খুব খারাপ বোধ করছি৷ ভোট দেয়া থেকে সরে গিয়ে আজ ক্ষমতাসীন দলের আইনপ্রণেতারা যা করেছেন, সেটা জনগণকে কোনো গুরুত্ব না দিয়ে নিজেদের ক্ষমতা এবং মর্যাদা রক্ষার চেষ্টা ছাড়া আর কিছুই নয়৷''
দক্ষিণ কোরিয়ার দৈনিক দ্য কোরিয়ান টাইমস জানিয়েছে, কোরিয়ান কনফেডারেশন অফ ট্রেড ইউনিয়ন (কেসিটিইউ) গত সপ্তাহে ইউনের সামরিক আইন জারি করার প্রচেষ্টার নিন্দা জানিয়েছে৷
কেসিটিইউ নেতা ইয়াং কিয়ং-সু জাতীয় পরিষদের সামনে বক্তৃতায় বলেন, ‘‘আজ ঠিক এখানেই আমরা ইউন সুক ইওলের সমাপ্তি সূচনা করবো৷ আসুন আমরা আরও শক্তিশালী প্রতিবাদের মাধ্যমে তার শাস্তি নিশ্চিত করি৷''
বিরোধী দলগুলো জানিয়েছে, শনিবারের অভিশংসন চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ায় তারা শিগগিরই আরেকটি বিল উত্থাপন করতে পারে৷
এডিকে/এআই (এপি, এএফপি, রয়টার্স)