দিদিকে বললে কাজ হবে?
৫ আগস্ট ২০১৯কলকাতা–সহ গোটা রাজ্য ছেয়ে গেছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীর সহাস্য মুখের ছবি দেওয়া বিজ্ঞাপনে৷ বড় বড় করে লেখা— ‘দিদিকে বলো'৷ তার নিচে একটি মোবাইল নম্বর দিয়ে লেখা— আপনার মতামত বা সমস্যা থাকলে আমাকে ফোন করুন৷ উত্তরবঙ্গের পাহাড় থেকে দক্ষিণের গঙ্গাসাগর, সর্বত্র রাস্তার ধারে দেখা যাচ্ছে এই হোর্ডিং৷ ফোন কি করছেন লোকে? অবশ্যই করছেন৷ প্রথম দিনেই সংবাদ মাধ্যমের একটি অংশ বলল, ফোন করলে সর্বক্ষণ ব্যস্ত পাওয়া যাচ্ছে৷ কথা বলারই উপায় নেই৷ পরদিনই সরকারের তরফে দাবি করা হল, প্রথম ২৪ ঘণ্টায় এক লক্ষেরও বেশি ফোন পেয়েছে সরকার৷ সেই শুনে একদল অঙ্ক কষে প্রমাণে ব্যস্ত হয়ে পড়ল, ২৪ ঘণ্টায় এক লক্ষ সংযোগ কোনও মোবাইলে আদৌ সম্ভব কি না৷
সরাসরি রাজ্যবাসীর সঙ্গে প্রশাসনের যোগাযোগ গড়ে তোলা, বা দিদিই সব সমস্যার সমাধান, কাজেই ‘দিদিকে বলো'— এই জনসংযোগ পরিকল্পনার পিছনে আছে গণজ্ঞাপন বিশেষজ্ঞ প্রশান্ত কিশোর ও তাঁর দল৷ তাদের ছকে দেওয়া রাস্তাতেই পশ্চিমবঙ্গে মমতা ব্যানার্জী, তাঁর সরকার এবং তাঁর দল তৃণমূল কংগ্রেসের হারানো বিশ্বাস, ভরসা পুনরুদ্ধারের এই চেষ্টা৷
কী বলছেন বিরোধীরা? সিপিআইএম নেতা সুজন চক্রবর্তীর বক্তব্য, দিদিকে বলো— এই কথাটার কোনও মানেই হয় না! মানুষ নির্বাচিত করে বিধায়ক, সাংসদ, যাতে তাঁরা মানুষের কথা ঠিক জায়গায় বলতে পারেন৷ কিন্তু তাঁরা কিছু বলবেন না, রাজ্যের নির্বাচিত মুখ্যমন্ত্রী কিছু বলবেন না৷ কে বলবে? একজন নৈর্ব্যক্তিক দিদি! ‘কার দিদি? কেন দিদি? কেন মুখ্যমন্ত্রী নন? কেন দিদি?' প্রশ্ন তুললেন সুজন৷ তাঁর সোজা কথা, বিধানসভায় প্রশ্ন করা হয় মুখ্যমন্ত্রীকে৷ রাজ্যের বেহাল পরিস্থিতির কথা জানিয়ে বহু চিঠি দেওয়া হয় তাঁকে৷ কেন ফসলের দাম না পেয়ে কৃষক আত্মহত্যা শুরু হল এই রাজ্যেও, যে কোনও চাকরির পরীক্ষায় কেন দুর্নীতি, মহিলাদের সুরক্ষা কেন নেই— এসব প্রশ্নের উত্তর বরং দিন মুখ্যমন্ত্রী৷
জননেতা, বিশেষত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের ক্ষেত্রে ইমেজ তৈরির এই চেষ্টা কি আদৌ কার্যকর হবে? জনসংযোগ বিশেষজ্ঞ সুগত চৌধুরি বললেন, ইতিহাসে তেমন নজির নেই৷ আর নেতা-নেত্রীদের ক্ষেত্রে তাঁদের জনসভায় ভাষণ দেওয়ার দক্ষতাই তাঁদের জনসংযোগের মূল উপায়৷ সেখানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আর মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীর মধ্যে যদি তুলনা হয়, তা হলে মোদী এগিয়ে আছেন দিদির থেকে৷ কাজেই সুগত সন্দিহান, এই চেষ্টার ফল মিলবে কি না৷
আর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি কথা বলেছেন তৃণমূল কংগ্রেসেরই বর্ষীয়ান নেতা, অভিজ্ঞ রাজনীতিক সুব্রত মুখার্জী৷ সদ্য তিনি প্রকাশ্যেই মন্তব্য করেছেন, দিদিকে বলার পর সমস্যার সমাধান হচ্ছে কি না, সেটাও অত্যন্ত জরুরি৷ নয়ত দিদিকে বললাম, কিন্তু কাজের কাজ কিছু হল না, তার উল্টো ফল হবে৷ মুখ্যমন্ত্রীকে অনুরোধ, এই ব্যাপারটা তিনি যেন খেয়াল রাখেন৷