দিল্লি বিধানসভা ভোট
১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৫মাত্র তিনটি আসন জুটেছে বিজেপির কপালে, অর্থাৎ থেমে গেছে মোদীর ঢেউ৷ অন্যদিকে কংগ্রেস তো কার্যত নিশ্চিহ্ন, একটি আসনও জোটেনি তাদের৷ এই অভাবিত সাফল্যকে হাতিয়ার করে সম্ভবত আগামী ১৪ কিংবা ১৫ই ফেব্রুয়ারি দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নিতে চলেছেন অরবিন্দ কেজরিওয়াল৷
২০১৩ সালে এই কেজরিওয়ালই ৪৯ দিনের মাথায় মুখ্যমন্ত্রী পদে ইস্তফা দিয়েছিলেন দুর্নীতি-বিরোধী জনলোকপাল বিল বিধানসভায় পাশ করাতে না পারায়, যেহেতু সে সময় আম আদমি পার্টির একক সংখ্যাগরিষ্টতা ছিল না৷ কংগ্রেসের হাত ধরে চলতে হয়েছিল৷ তা সত্ত্বেও অনেকেই বিষয়টা মেনে নিতে পারেননি৷ মনে করেছিলেন আম জনতার সঙ্গে এটা বিশ্বাসঘাতকতা, রাজনৈতিক বিচক্ষণতার অভাব৷ কিন্তু সেই ধারণা ভুল প্রমাণিত করে ২০১৫ সালের নির্বাচনে আম আদমি পার্টি সংক্ষেপে আপ কিভাবে ফিরে পেল ভোটদাতাদের আস্থা৷
আপ-এর জয় আর বিজেপির ভরাডুবির মূল কারণ কি? মাত্র নয় মাস আগে যে বিপুল জনপ্রিয়তা নিয়ে মোদী ক্ষমতায় এসেছিলেন, এত তাড়াতাড়ি সেই জনপ্রিয়তা মুখ থুবড়ে পড়লো কেন?
প্রথমত, মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে প্রথম থেকেই প্রাক্তন পুলিশ অফিসার কিরণ বেদীকে তুলে ধরাকে দলের ভেতরে অনেকেই মনে মনে মেনে নিতে পারেননি, যা নিয়ে দলীয় অন্তর্দ্বন্দ ছিল৷ তাঁদের মতে কিরণ বেদী বিজেপিতে আসেন মাত্র কিছুদিন আগে৷ এসেই তাঁকে একেবারে দলের মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী করা হলো, অথচ যাঁরা দলের হয়ে দীর্ঘদিন নিরলসভাবে কাজ করে গেছেন তাঁদেরকে উপেক্ষা করা হলো, এটা অবিচার ছাড়া আর কী? দ্বিতীয়ত, অনেকে মনে করেন, মোদী জমানায় হিন্দুত্ববাদি সংগঠনগুলি যেভাবে সাম্প্রদায়িক মেরুকরণের দিকে ঝুঁকেছে, সেটা দেখেও না দেখার ভান করে গেছেন প্রধানমন্ত্রী মোদী৷ তৃতীয়ত, মোদীর নির্বাচনি প্রতিশ্রুতি পালনের আহামরি ফল এখনো চোখে পড়ছে না৷
অন্যদিকে আম আদমি পার্টি জাতীয় রাজনৈতিক দল নয় ঠিকই, প্রকৃত অর্থে নিছক দিল্লি-কেন্দ্রিক আঞ্চলিক দল৷ দিল্লির স্থানীয় সমস্যা বিশেষ করে নিম্নবর্গের খেটে খাওয়া মানুষদের অভাব অভিযোগ সম্পর্কে অনেক বেশি ওয়াকিবহাল৷ তাই বিদ্যুৎ, পানি ও আবাসন ছিল দলের প্রধান নির্বাচনি ইস্যু৷ বিদ্যুতের দাম অর্ধেক করার এবং নিম্নবিত্তদের জন্য ২০ হাজার লিটার জল বিনা পয়সায় দেবার অঙ্গীকার বহাল আছে৷
ধর্মনিরপেক্ষতা বা গণতন্ত্রের মতো ঐ সব ভারি ভারি কথায় খেটে খাওয়া মানুষদের মন টানে না৷ সবথেকে বড় কথা, আম আদমি পার্টির তরুপের তাস দুর্নীতি দমন৷ এই প্রশ্নে অন্যদের তুলনায় কেজরিওয়াল অনেক বেশি সজাগ ও তাঁর অবস্থান অনেক বেশি কঠোর৷ এই প্রশ্নেই মুখ্যমন্ত্রী পদে ইস্তফা দিয়েছিলেন কেজরিওয়ালে৷ আর দিল্লির মধ্যবিত্ত সমাজ মনে করে, আম আদমি পার্টি বিজেপি বা কংগ্রেসের মতো জাতীয় রাজনৈতিক দলগুলির বিকল্প না হলেও এক বিকল্প রাজনীতির সন্ধান দিতে পারে৷ ২০১৫ সালের ৭ই ফেব্রুয়ারির ভোটে যে বিপুল সংখ্যাগরিষ্টতা পেয়েছেন কেজরীবাল, তাতে এবার দুর্নীতি বা অন্যান্য জনমুখী কর্মসূচি পালনে তাঁর অসুবিধা হবার কথা নয়৷ নিরহঙ্কারি মানুষ কেজরিওয়াল ভোটের ফলাফল দেখে নিজেই বলেছেন, এবার তাঁর বীজমন্ত্র হবে দিল্লির উন্নয়ন৷ তবে এখানেও একটা কিন্তু থেকে যাচ্ছে৷ দিল্লি দেশের রাজধানী, কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল, দিল্লির উন্নয়নের অনেকটাই নির্ভর করছে কেন্দ্রীয় সরকারের অর্থানুকুল্যের ওপর৷ কেন্দ্রের সাহায্য কতটা আদায় করতে পারবেন কেজরিওয়াল, সেটাও দেখার৷