দীপাবলিতে হইচই, বছরভর দূষণ মোকাবিলা নয় কেন?
১৪ নভেম্বর ২০২০শব্দবাজি আগেই নিষিদ্ধ হয়েছিল৷ এবার করোনা পরিস্থিতির জন্য সব ধরনের বাজির উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে আদালত৷ প্রতি বছর দীপাবলীর আগে বাজি ও তার থেকে হওয়া দূষণ সম্পর্কে বিস্তর আলোচনা শোনা যায়৷ কিন্তু সারা বছর দূষণ নিয়ে এতটা ভাবনা থাকে না৷
দিল্লিতে প্রতি বছরের মতো এবারও দূষণ মাত্রাছাড়া৷ হাজার হাজার একর জমির কৃষিবর্জ্য পোড়ানোর ফলে দূষণ ফের বেড়েছে৷
কলকাতা যে জায়গায় দাঁড়িয়ে
দূষণের ক্ষেত্রে যে কয়েকটি বিষয় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিকর হয়ে ওঠে, তার মধ্যে রয়েছে পরিবহন অর্থাৎ বিভিন্ন গাড়িতে ব্যবহৃত জ্বালানি৷ দিল্লির মতো কলকাতায় সিএনজি ব্যবহার শুরু করা যায়নি৷ এর ফলে নানা ধরনের জ্বালানি থেকে উৎপন্ন ধোঁয়া নিয়মিত কলকাতার বাতাসকে দূষিত করছে৷ রাস্তার ধারে স্থায়ী ও অস্থায়ী খাবারের দোকানে ব্যবহার করা হচ্ছে কাঠকয়লা৷ এই পদার্থটি জ্বলার ফলে ব্যাপক দূষণ ছড়াচ্ছে৷ এর সঙ্গে রয়েছে অপরিকল্পিত নির্মাণ কাজ৷ রাস্তা সংস্কার থেকে বহুতল নির্মাণের সময় কোনো সাবধানতা নেওয়া হয় না৷ উন্মুক্ত স্থানে সিমেন্ট-সহ নির্মাণে প্রয়োজনীয় অন্যান্য সামগ্রী ব্যবহার করা হয়৷ এসব সামগ্রী বাতাসে মিশে তা দূষিত করে তোলে৷
দিল্লি আইআইটি-র অধ্যাপক, বিশেষজ্ঞ সোমনাথ বৈদ্য ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘কালীপুজোয় বাজি পোড়ানো দু-একদিনের ব্যাপার৷ এক্ষেত্রে সতর্কতা অবশ্যই জরুরি৷ কিন্তু বিভিন্ন কারণে দূষণ সারা বছরই হচ্ছে৷ তাকে নিয়ন্ত্রণ করার কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না৷ অর্থাৎ যে কারণে দূষণ তৈরি হচ্ছে তা নির্মূল করার উদ্যোগ নেই৷ শুধু দূষণ হলে তা কমানোর কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে৷ এই পদক্ষেপ জরুরি নয় তা বলছি না, কিন্তু বেশি জরুরি দূষণকে তার উৎস থেকে নিশ্চিহ্ন করা৷''
কলকাতার বাতাসে সাধারণভাবে প্রতি ঘনমিটারে ২০০-৩০০ মাইক্রোগ্রাম পার্টিকুলেট ম্যাটার (পিএম) বা অতি সূক্ষ্ম ধূলিকণা থাকে। দীপাবলির সময় বাজি পোড়ানোর ফলে তা অনেকটা বেড়ে যায়৷ বিষাক্ত গ্যাস বাতাসে মেশে৷ তাতে করোনা আক্রান্ত রোগীর শ্বাসকষ্ট বাড়তে পারে বলে এবার বাজি নিষিদ্ধ করা হয়েছে৷ লকডাউন পর্বে পিএম ১০০-র নীচে নেমে গিয়েছিল৷ কিন্তু আনলক পর্ব শুরু হতেই ফের বাতাসে পিএম-এর মাত্রা বাড়তে শুরু করে৷ প্রতি ঘনমিটারে তা ১৬ মাইক্রোগ্রাম পর্যন্ত বেড়ে গিয়েছে৷ দীপাবলিতে আরও বৃদ্ধির আশঙ্কায় জনস্বার্থ মামলা হয় আদালতে৷ শনি ও রবিবার এই দুদিন দীপাবলি উৎসব পালিত হচ্ছে৷ প্রকাশ্যে বাজি বিক্রি আগেই বন্ধ৷ তা সত্ত্বেও কতটা বাজি পোড়ানো হয় সেটাই দেখার৷ তার থেকেও বড় প্রশ্ন, পরের দীপাবলির আগ পর্যন্ত যে দূষণ নিয়মিত কলকাতার বাতাসে ছড়িয়ে পড়বে, তা রুখতে কতটা তৎপরতা দেখা যাবে বিভিন্ন স্তরে৷ দিল্লির থেকেও বেশি দূষণ ছিল চীনে৷ তারা দ্রুত সেটা কমিয়ে আনতে পেরেছে৷
কলকাতা পারবে না কেন?
কলকাতায় বড় শিল্প প্রতিষ্ঠান নেই৷ তবে বিক্ষিপ্তভাবে ছোটখাটো শিল্প থেকে দূষণ ছড়ায়৷ তাই শুধু বাজিকে দোষ দিয়ে লাভ নেই৷ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিদ্যা বিভাগের অধিকর্তা তড়িৎ রায়চৌধুরী ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সার্বিক দূষণের ফলে শ্বাসকষ্ট শুধু নয়, ত্বকের সমস্যা থেকে ক্যান্সার পর্যন্ত হয়৷ ভারী ধাতু যত বেশি বাতাসে মিশবে, ততই কষ্ট হবে শ্বাস নিতে৷ বাজি নিষিদ্ধ করা ভালো পদক্ষেপ৷ তবে বছরভর দূষণ নিয়ন্ত্রণের উপযোগী ব্যবস্থা নিতে হবে৷''
আমফানে কলকাতার ৫০ হাজার গাছ পড়ে গিয়েছিল৷ তাই পরিবেশ রক্ষার বিকল্প উপায় হিসেবে অন্য রকম উদ্যোগ নেওয়া শুরু হয়েছে৷ নিউটাউনে তৈরি হয়েছে এয়ার পলিউশন আরজি পার্টি৷ নিজেদের উদ্যোগে এই দলের সদস্যরা নজর রাখছেন এলাকায়৷ দরকার হলে তাঁরা পুলিশের সাহায্য নেবেন৷ কলকাতা পুর কর্তৃপক্ষ মিস্ট ক্যানন, মিস্ট ব্লোয়ার মেশিন কিনেছে৷ এই যন্ত্রের সাহায্যে বায়ুদূষণের মাত্রা কমানোর চেষ্টা চলছে৷ কলকাতায় চলছে ইলেকট্রিক বাস, ব্যাটারিচালিত টোটো৷ কিন্তু তা কতটা পর্যাপ্ত, তা নিয়ে প্রশ্ন থাকছেই৷ বিশেষজ্ঞদের মতে, দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনায় উৎসমূলে দূষণ দূর করলে সেটাই হবে সবচেয়ে কার্যকরী পদক্ষেপ৷