আত্মঘাতী হওয়ার প্রস্তুতি ছিল সবার!
২৬ ডিসেম্বর ২০১৬ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান জানান, শনিবার ভোররাত থেকে রবিবার সন্ধ্য পর্যন্ত ঢাকার পূর্ব আশকোনার একটি বাড়িতে পুলিশি অভিযানে সারিকা আত্মসমর্পণের ভান করে এক পর্যায়ে আত্মঘাতী হয়৷ নিজের শরীরে বাধা ‘সুইসাইড ভেস্ট'-এর বিস্ফোরণ ঘটায় সে৷ ফলে সঙ্গে থাকা শিশু সন্তানটি আহত হয়৷ আর অপর দু'জন নারী জঙ্গি শিলা ও তৃষামনি দুই শিশুকে নিয়ে আত্মসমর্পণ করে৷''
এছাড়া অভিযানে আফিফ কাদেরি নামে আরো একজন নিহত হয়৷ সোমবার লাশের ময়না তদন্ত শেষে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ময়নাদন্তকারী চিকিৎসক সোহেল মাহমুদ জানান, ‘‘গুলিতেই আফিফ কাদেরি নিহত হয়েছিলেন৷''
পুলিশের একাধিক সূত্র জানায়, ‘‘পহেলা জুলাই হোলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার পর জঙ্গিবিরোধী অভিযোন জোরদার করা হলে এ পর্যন্ত মোট ৩৫ জঙ্গি নিহত হয়েছে বাংলাদেশে৷ আশকোনা এলাকার জঙ্গি আস্তনায় পলাতক এবং নিহত জঙ্গিদের স্ত্রী ও পরিবারের সদস্যরা অবস্থান করছিল৷ আর তাদের কেন্দ্র করেই পলাতক নব্য জেএমবি-র জঙ্গিরা সংগঠিত হওয়ার কাজ চালিয়ে আসছিল৷''
আসামি দুই নারী জঙ্গির মধ্যে একজন হলো, মেজর জাহিদুল ইসলামের স্ত্রী রিমান্ডে নেয়া জেবুন্নাহার ওরফে শীলা৷ আর তৃষামনি ওরফে উম্মে আয়েশা নব্য জেএমবি-র এখনকার প্রধান আবু মুসার স্ত্রী৷ পুলিশ মুসাকে খুঁজছে৷ আত্মঘাতী নারী জঙ্গি সারিকা অন্য এক পলাতক জঙ্গি সুমনের স্ত্রী৷ গুলিতে নিহত আফিফ কাদেরি আজিমপুরে নিহত তানভীর কাদেরির ছেলে৷
মাসুদুর রহমান জানান, ‘‘নারী জঙ্গিরা প্রধানত স্বামী অথবা পরিবারের মাধ্যমে জঙ্গি দলে ভিড়েছে৷ দুঃখের বিষয়, এই নারীদের ব্যবহার করেই জঙ্গিদের একটি অংশ সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করেছিল৷''
তিনি জানান, ‘‘আশকোনার ঐ বাড়ি থেকে মোট তিনটি ‘সুইসাইড ভেস্ট' উদ্ধার করা হয়েছে৷ গ্রেনেড দিয়ে তৈরি এই ভেস্ট ব্যবহার করে জঙ্গিরা আত্মঘাতী হামলা চালাতে সক্ষম৷ আমাদের ধারণা, তিন নারী জঙ্গিই আত্মঘাতী হওয়ার জন্য প্রস্তুত ছিল৷ আমাদের অভিযানের সময় মোটিভেশনের মাধ্যমে দু'জনকে আত্মসমর্পণ করাতে পারি৷ কিন্তু একজন আত্মসমর্পণের ভান করে আত্মঘাতী হামলা চালাতে গিয়ে নিহত হয়৷''
এদিকে পুলিশ এখন নব্য জেএমবি-র অন্যতম সমন্বয়ক মেজর জিয়া এবং নতুন নেতা মুসাকে আটকের চেষ্টা করছে৷ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সংবাদমাধ্যমেকে বলেছেন, ‘‘এই দু'জনই পুলিশের নজরদারির মধ্যে রয়েছে৷ আশা করছি তারা অচিরেই ধরা পড়বে৷''
মাসুদুর রহমানের কথায়, ‘‘আমরা মনে করি জঙ্গিদের শক্তি এখন শেষ পর্যায়ে রয়েছে৷ যারা এখনো ধরা পড়েনি, তারা খুব তাড়াতাড়ি ধরা পড়বে৷''
প্রসঙ্গত, পুলিশ ঐ বাড়ি থেকে ‘সুইসাইড ভেস্ট' ছাড়াও ১৯টি গ্রেনেড উদ্ধার করে৷ পুলিশের একাধিক সূত্র দাবি করছে যে, ঐ তিন নারী ছাড়াও নিহত কিশোর আফিফ কাদেরিও মোটিভেটেড ছিল৷
মাসুদুর রহমান জানান, ‘‘আমরা এখন তাদের মোটিভেশনের নতুন কোনো প্রক্রিয়া আছে কিনা তা জানার চেষ্টা করছি৷ বাংলাদেশে প্রথম নারী জঙ্গির আত্মঘাতী হওয়ার ঘটনা জঙ্গিদের আরো গভীর মোটিভেশনের ইঙ্গিত দেয়৷''