হাইকোর্টের রুল
২৫ নভেম্বর ২০১৩গত ১০ই নভেম্বর দুর্নীতি দমন কমিশন সংশোধন আইন সংসদে পাশ হয়৷ আইনের ৩২ (ক) ধারায় বলা হয়েছে, এই আইনের অধীনে মামলা দায়েরের ক্ষেত্রে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৯৭ ধারা আবশ্যিকভাবে পালন করতে হবে৷ এছাড়া ফৌজদারি কার্যবিধির ১৯৭ ধারায় বলা হয় যে, জজ, ম্যাজিস্ট্রেট এবং সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী কোনো অভিযোগে অভিযুক্ত হলে, আদালত সরকারের অনুমোদন ছাড়া মামলা আমলে নিতে পারবে না৷ আর কোন আদালতে এই মামলার বিচার হবে, তা সরকারই নির্ধারণ করে দেবে৷
আইনটি পাশ হওয়ার পর প্রতিবাদ ওঠে৷ এমনকি দুদক সংবাদ সম্মেলন করে এই আইনের বিরোধিতা করে৷ অবশেষে সোমবার মানবাধিকার সংগঠন ‘হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ' দুদক আইনের এই ধারাটি চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করে৷ সোমবারই বিচারপতি কাজী রেজাউল হক এবং বিচারপতি এ বি এম আলতাফ হোসেনের বেঞ্চ শুনানি শেষে আইনটি কেন সংবিধান পরিপন্থি বলে ঘোষণা করা হবে না – তা জানতে চেয়ে চার সপ্তাহের রুল জারি করেন৷ জাতীয় সংসদের স্পিকার, মন্ত্রিপরিষদ সচিব, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব, আইন সচিব এবং জাতীয় সংসদের সচিবকে রুলের জবাব দিতে হবে৷
রিটকারী আইনজীবী মনজিল মোরসেদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, দুদকের এই আইনের মধ্য দিয়ে প্রথমত আইনের চোখে ‘দেশের সকল নাগরিক সমান' – সংবিধানের এই স্বীকৃত বিষয়টিকে উপেক্ষা করা হয়েছে৷ শুধু তাই নয়, দুর্নীতি দমন কমিশনের স্বাধীনতাও খর্ব করা হয়েছে৷ কারণ, সরকারি কর্মকর্তার দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়া গেলেও দুদক সরকারের অনুমতি ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারবে না৷ তিনি বলেন, সরকার এই আইনের মধ্য দিয়ে দুদককে একটি নখদন্তহীন বাঘে পরিণত করেছে৷ সংবিধানের ২৬ অনুচ্ছেদের সঙ্গে দুদকের এই নতুন আইন সাংঘর্ষিক এবং বাতিলযোগ্য বলে মনে করেন মনজিল মোরসেদ৷
এদিকে টিআইবি-র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান ডয়চে ভেলেকে বলেন, সরকার শেষ সময়ে এসে উদ্দেশ্যমূলকভাবে এই আইনটি পাশ করেছে৷ এই আইন বহাল থাকলে প্রশাসনে দুর্নীতি উত্সাহিত হবে৷ তিনি মনে করেন, এই আইন সুশাসন এবং আইনের শাসনের পরিপন্থি৷ কেন না, একই দেশে সাধারণ নাগরিক এবং সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য একই অপরাধে দুই রকম বিধান হতে পারে না৷ ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, তাদের সরকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যে সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক এই আইন পাশ করা হবে না৷ কিন্তু সরকার তার প্রতিশ্রুতি রাখেনি৷ তাই তিনি আশা করেন, সর্বোচ্চ আদালত এই আইন বাতিল করে কমিশনকে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ করে দেবে৷