বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন নিয়ে দুদকের প্রশ্ন
১৯ জুন ২০১৩বিশ্বব্যাংক প্যানেলের এই প্রতিবেদন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)৷ প্রতিষ্ঠানটির বিদায়ী চেয়ারম্যান গোলাম রহমান বুধবার সেগুনবাগিচায় দুদকের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের কাছে বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন নিয়ে কথা বলেন৷ তিনি বলেন, বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন স্বতঃসিদ্ধ নয়৷ বিশ্বব্যাংকের উচিত ছিল আরও কিছুটা সময় নিয়ে প্রতিবেদন জমা দেয়া৷ আগামী ২৩শে জুন দুদকের চেয়ারম্যান পদে তাঁর মেয়াদ শেষ হবে৷
গোলাম রহমান বলেন, বিশ্বব্যাংক তাদের প্রতিবেদনে সব সময়ই একজন ব্যক্তির (সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন) নাম বলেছে৷ তাঁকে এজাহারভুক্ত আসামি করার জন্য চাপ দিয়েছে৷ কিন্তু দুদকের করা এফআইআরে এ নামটি সন্দেহভাজন তালিকায় রাখা হয়েছে৷ কাউকে আসামি করতে হলে যথেষ্ট তথ্য-প্রমাণ দরকার৷ কিন্তু দুদকের অনুসন্ধানে যে ৩২ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে, তাদের কেউ ওই ভদ্রলোকের নাম বলেননি৷ এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর অর্থবিষয়ক উপদেষ্টা মশিউর রহমানকে সরিয়ে দেয়ার জন্য বিশ্বব্যাংক চাপ দিয়েছিল৷ তাদের চাপের কারণেই শেষ পর্যন্ত উপদেষ্টা মশিউর রহমানকে দায়িত্ব থেকে শেষ পর্যন্ত সরিয়ে দেয়া হয়৷
লুইস মোরেনো ওকাম্পো-র নেতৃত্বাধীন বিশ্বব্যাংকের প্যানেল তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, দুর্নীতি দমন কমিশনের তদন্ত পূর্ণাঙ্গ ও নিরপেক্ষ হচ্ছিলো বলে তাদের মনে হয়নি৷ সাত জনকে আসামী করে আবুল হোসেনের নাম বাদ দিয়ে তদন্ত কার্যক্রম শুরু করে দুদক৷ সাবেক যোগাযোগ মন্ত্রীর বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রমাণ দেয়া সত্ত্বেও দুদক তাঁর বিরুদ্ধ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি৷ তদন্তে প্রাথমিক তালিকা থেকে সাবেক যোগাযোগমন্ত্রীর নাম বাদ দেয়ার কোনো আইনগত যুক্তি আছে বলে মনে করে না এই প্যানেল৷ তাই তাদের মনে হয়েছে দুদকের কার্যক্রম প্রশ্নবিদ্ধ৷
এদিকে যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিশ্বব্যাংকের তদন্ত প্রতিবেদন ও মন্তব্য পদ্মা সেতু বাস্তবায়নে কোনো প্রভাব ফেলবে না৷ আগামী অর্থবছরে পদ্মা সেতু নির্মাণে তিন হাজার কোটি টাকা প্রয়োজন পড়বে, যা যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের হাতে রয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি৷ বুধবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে মন্ত্রী বলেন, এরই মধ্যে পদ্মা সেতুর অ্যাপ্রোচ রোডের টেন্ডার করা হয়েছে৷ চলতি মাসেই মূল সেতুর টেন্ডার আহ্বান করা হবে৷ আগামী মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একসঙ্গে সবগুলো কাজের উদ্বোধন করবেন৷
তত্কালীন যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন বুধবার বিভিন্ন পত্রিকা ও টেলিভিশন চ্যানেলে পাঠানো এক বিবৃতিতে বলেছেন, বিশ্বব্যাংক বিশেষজ্ঞ প্যানেলের চূড়ান্ত রিপোর্টের মধ্যে কোনো নতুনত্ব, যুক্তি, প্রমাণ, সততা, ইন্টিগ্রিটি এবং জুরিসপ্রুডেন্স নেই৷ বিশ্বব্যাংক এক্সটারনাল বিশেষজ্ঞ প্যানেলের এ রিপোর্ট আন্তর্জাতিক আইন, ব্যক্তির মৌলিক অধিকার ও একটি সার্বভৌম স্বাধীন দেশের প্রচলিত আইন ও বিধিবিধানের প্রতি অবজ্ঞার সামিল৷ এ রিপোর্ট আন্তর্জাতিক দাদাগিরির এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত বলে প্রতীয়মান৷
সৈয়দ আবুল হোসেন আরও বলেন, ‘‘পরামর্শক নিয়োগে আমার কোন সম্পৃক্ততা প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়ে ঢাকা সফরের সময় বিশেষজ্ঞ প্যানেল চেয়ারম্যান লুইস মোরেনো ওকাম্পো দুদক ও বাংলাদেশ সরকারের উপর আমাকে অভিযুক্ত করতে চাপ দিয়েছিল – এ রিপোর্ট তারই পুনরাবৃত্তি৷ এজাহারে আমাকে আসামি না করায় 'দুদক-এর তদন্ত পরিপূর্ণ ও সঠিক হয়নি' বলে বিশ্বব্যাংক প্যানেল বিশেষজ্ঞদের দেয়া মতামত অগ্রহণযোগ্য এবং আইন ও বিচারে ভুল সিদ্ধান্ত৷''