দুর্ঘটনা
১৪ মে ২০১২প্রথমে উন্নত বিশ্বের ছবিটা দেখা যাক৷ ১৯৫০ সালের ব্রিটেনের কথা বলি৷ সেদেশে সে সময়ে নথিভূক্ত গাড়ির মোট সংখ্যা ছিল ৪.৪ মিলিয়ন৷ সেই একই দেশে ২০১০ সালের পরিসংখ্যান বলছে, নথিভূক্ত গাড়ির মোট সংখ্যা ৩৪ মিলিয়ন৷ তার অর্থ হল, জনসংখ্যা দিয়ে এই সংখ্যাটাকে ভাগ করলে দেখা যাচ্ছে, প্রতি ১১ জন মানুষের জন্য একটি করে গাড়ি রয়েছে সেদেশে৷
অনুন্নত দেশগুলি, কিংবা যদি তথাকথিত তৃতীয় বিশ্বের দিকে তাকানো যায়, তাহলে সেখানেও দেখা যাবে গাড়িদের সংখ্যাবৃদ্ধি ঘটছে একেবারে উল্কার গতিতে৷ ঢাকার রাস্তায় ট্রাফিক জ্যাম ছাড়া রাস্তায় চলার বা কোন গন্তব্যে সময়মত পৌঁছানোর কথা তো ভাবাই যায় না৷ একই অবস্থা ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলংকা, নেপাল বা দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশগুলোর শহরাঞ্চলের৷ ট্রাফিক জ্যাম, নিত্য নৈমিত্তিক দুর্ঘটনার খবর, ঠিকমত মেরামতি না করেই যানবাহনকে রাস্তায় নামানো এ এক চেনা ছবি আমাদের৷
সে ছবিটা অন্যরকমের উন্নত দেশগুলোতে৷ সেখানে নিরাপত্তার ছবিটা একটু স্পষ্ট৷ প্রশাসন উদাসীন নয় সর্বত্র কিংবা হয়তো আইনকানুন যথেষ্ট কড়া আর দুর্নীতি তার ডালপালা সেভাবে মেলতে পারেনি প্রশাসনের সর্বস্তরে৷ তাই সেসব দেশে পরিস্থিতি অনেকটাই ভিন্ন৷ কারণ রাস্তাঘাটের মেরামতি বা দেখভালও সেখানে অনেকটাই ভালো রকমের৷
ফলে গাড়িরাও সেখানে সংখ্যায় বেশি৷ যেমন ব্রিটেনের পরিস্থিতি, যেখানে প্রতি ১১ জনের জন্য একটি করে গাড়ি, তেমনই জার্মানি, ফ্রান্স বা বেলজিয়ামের চেহারা৷ অর্থাৎ যানবাহনের কোন অপ্রতুল নেই৷ প্রয়োজনে লাগুক না লাগুক, গাড়িবাহিত হয়েই চলাফেরাটা পছন্দ করে মানুষ৷ আর্থিক স্বাচ্ছন্দ্য সেই পছন্দকে বাস্তবায়িত করে দেয় যখন দরকার, তখনই৷
শুধুমাত্র ব্যক্তি দৃষ্টিভঙ্গিতে যদি দেখা যায়, তবে এই নিত্যনিয়ত গাড়ির ব্যবহার, জ্বালানির খরচ, বিশ্ব উষ্ণায়নের দৈত্যের মাসল আরও ফুলিয়ে দেওয়া ইত্যাকার কাজকর্ম গাডিওয়ালারা নিয়মিতই করে চলেছেন৷ তার কুফলগুলো নিয়ে শুধু কোনরকমের চিন্তাভাবনাই নেই৷
কিন্তু কুফলগুলো তো রয়ে গেছে৷ বিশেষ করে সবচেয়ে বড় যে কুফল, তাহল দুর্ঘটনা৷ পরিসংখ্যানের দ্বারস্থ হয়ে দেখা যাচ্ছে, উন্নত দেশগুলোতে, যেখানে নিরাপত্তা ব্যবস্থা, নিয়মিত গাড়ির শারীরিক অবস্থা পরীক্ষার ব্যবস্থা, রাস্তার অবস্থা ইত্যাদি বিচার বিবেচনার পর দেখা যাচ্ছে, দুর্ঘটনার পরিমাণ কিছুটা হলেও কমেছে৷ কিন্তু দুর্ঘটনা ঘটা বন্ধ হয়নি৷ জার্মানির মত দেশে, যেখানে মহাসড়ক বা হাইওয়েতে কোন স্পিড লিমিট বা গতিবেগের নিয়ন্ত্রণ বহু জায়গাতেই নেই, সেখানে কিছু কিছু ক্ষেত্রে তো এমনও দেখা গেছে, একটা গাড়ি দুর্ঘটনায় পড়লে তার সঙ্গে জড়িয়ে যায় আরও পাঁচ দশখানা গাড়ি৷ তখন দুর্ঘটনায় ক্ষতির মাত্রাটা আরও বহুগুণ বেড়ে যায়৷
তারপরেও গাড়ির সংখ্যা বাড়তেই থাকে৷ নামজাদা গাড়ি তৈরি করার সংস্থাগুলো আরও আধুনিকতম গাড়ির পসরা নিয়ে আসে মানুষের সামনে৷ লোভনীয় সেইসব গাড়ি পথে নামে কিছুদিনের মধ্যেই৷ তারপর পথিকদের জন্য ত্রাস হয়ে ওঠে তাদের অনেকেই৷ সুতরাং, শুধুই স্বাচ্ছন্দ্য বা বড়লোকি দেখানো নয়, যানবাহন বাড়ানোর আরেকটা অর্থ যে জীবনের জন্য বিপদ ডেকে আনা, এই সত্যটার দিকেও তাকাতে হবে মানুষকে৷
প্রতিবেদন: সুপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায়, এপি, রয়টার্স
সম্পাদনা: রিয়াজুল ইসলাম