1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

দুর্নীতি ও বঞ্চনা থেকে মুক্তির দাবি মুক্তিযোদ্ধা ফেরদৌসীর

৬ ফেব্রুয়ারি ২০১১

মহান মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় ভূমিকা রেখে, জান-মান বাজি রেখেও অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধা এখনও শোষিত-বঞ্চিত৷ মানুষের অসহায়ত্ব আর দেশে বিরাজমান দুর্নীতি দেখে হতাশা ঝরে পড়ে মুক্তিযোদ্ধা ফেরদৌসী বেগমের কণ্ঠে৷

https://p.dw.com/p/10BEM
Ferdousy, Begum, Female, Freedom, Fighter, Liberation, War, 1971, Jessore, Bangladesh, দুর্নীতি, শোষণ-বঞ্চনা, মুক্তি, দাবি, মুক্তিযোদ্ধা, ফেরদৌসী,
মুক্তিযোদ্ধা ফেরদৌসী বেগমছবি: Ferdousy Begum,

ফেরদৌসী বেগম৷ পিতা গোলাম সরওয়ার মোল্লা৷ মাতা হামিদা খাতুন৷ ১৯৫২ সালের ১৬ জানুয়ারি মাগুরায় জন্ম৷ ১৯৬৯ সালে বিয়ের সূত্রে যশোরে পাড়ি জমান ফেরদৌসী৷ স্বামী হাসনুল করিম কামাল একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা৷ স্বামীর উৎসাহ আর অনুপ্রেরণায় নিজেকে স্বাধীনতা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করেন ফেরদৌসী৷

মুক্তিযুদ্ধ শুরুর সময় কলেজ ছাত্রী ফেরদৌসী৷ সরাসরি বেশ কয়েকটি সম্মুখ যুদ্ধে অংশ নেন ফেরদৌসী এবং যশোরের আরো কিছু বীর নারী৷ তবে যুদ্ধের কৌশলগত কারণে পুরুষ যোদ্ধাদের পেছনে দ্রুত সরে আসার সময় নারীদের কারণে কিছুটা সমস্যা হতো৷ তাই পরবর্তীতে নারীদের যুদ্ধে অংশগ্রহণ না করার পরামর্শ দেওয়া হয়৷ বরং আহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা সেবা ও শুশ্রূষা করার দায়িত্ব দেওয়া হয় তাঁদেরকে৷

Ferdousy Begum, Freiheitskämpfertin Liberation War 1971 Jessore Bangladesch mit ihren Töchtern
মেয়েদের সাথে মুক্তিযোদ্ধা ফেরদৌসী বেগমছবি: Ferdousy Begum

ডয়চে ভেলের কাছে যুদ্ধের শুরুর দিকের একটি ঘটনা তুলে ধরেন এভাবে৷ ‘‘যশোর সেনানিবাসে পাক সেনাদের অবরুদ্ধ করে রেখেছিল যশোরের মুক্তিযোদ্ধারা৷ কিন্তু মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে যথেষ্ট অস্ত্রশস্ত্র না থাকার কারণে তিনদিনের মাথায় পাক সেনারা ভারি সাঁজোয়া যান নিয়ে সেনানিবাস থেকে বের হয়ে আসে৷ গোটা শহরে ধ্বংসযজ্ঞ চালাতে থাকে৷ আগুন ধরিয়ে দেয় বহু ঘর-বাড়ি ও স্থাপনায়৷ সেসময় আমাদের সাথে থাকা হেলেনা আপা সম্ভবত ঘটনা বুঝে উঠতে না পারার কারণে রাজাকারদের সহায়তায় পাক সেনাদের হাতে পড়ে যায়৷ আমরা দূর থেকে দেখতে পেলাম যে, হেলেনা আপাকে জনসম্মুখে ধর্ষণ করল, নির্যাতন করল এবং শুধু তা-ই নয় তাকে গাড়ির পেছনে বেঁধে টানতে টানতে নিয়ে গেল৷ মোহাম্মদপুর থেকে মাগুরা পর্যন্ত প্রায় আট থেকে দশ কিলোমিটার নিয়ে যায়৷ সেখানে গিয়ে তাঁকে গুলি করে নদীতে ফেলে দেয়৷ এই কঠিন দৃশ্য থেকেই আমাদের নিজেদের অবস্থা কল্পনায় ভেসে উঠতো৷''

ফেরদৌসী বেগমের শ্বশুর বাড়িতেই ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্প৷ দুই ঘর ভর্তি অস্ত্র রাখা ছিল৷ সেগুলো দেখা-শোনা রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব ছিল তাঁর উপর৷ একদিন পাক সেনারা সেখানে আক্রমণ চালায়৷ সেদিন বাড়ির সামনে তাঁর শ্বশুর পাহারায় ছিলেন৷ সেনারা প্রথমে তাঁকে বেতের পর বেত দিয়ে আঘাত করে আহত করল৷ তারপর তারা বাড়ি-ঘরে আগুন জ্বালিয়ে দিল৷ পাশেই ছাপাখানা ছিল৷ সেটা জ্বলে-পুড়ে গেল৷ সেদিন বাড়ির পেছনে পাটক্ষেতে আশ্রয় নিয়ে প্রাণে বেঁচে যান ফেরদৌসী৷

Ferdousy Begum, Freiheitskämpfertin Liberation War 1971 Jessore Bangladesch
ফেরদৌসী বেগমছবি: Ferdousy Begum

আরেকদিনের সরাসরি যুদ্ধের কথা তুলে ধরেন ফেরদৌসী৷ ‘‘আমার স্বামী এলএমজি নিয়ে গুলি করে যাচ্ছেন৷ আর আমি তাঁর পাশে থেকে গুলি সরবরাহ করে যাচ্ছি৷ সেদিন বিরোধী শিবিরের ৬৪ জন নিহত হয়েছিল৷ এক পর্যায়ে আমার স্বামী আহত হন৷ আমাকে তিনি সরে যেতে বললেন৷ আমি অন্ধকারে পাশে ঝোপের আড়ালে চলে গেলাম৷ কিছুক্ষণ পর দেখি কয়েকজন পাক সেনা এসে উনার গায়ে বুট দিয়ে আঘাত করে মনে করল মারা গেছে৷ ফলে আর কিছু না বলে সেখান থেকে চলে যায়৷ এরপর থেকে মুক্তিযোদ্ধা স্বামীসহ আহত অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধার চিকিৎসা ও সেবা-শুশ্রূষা করে কাটিয়েছি মুক্তিযুদ্ধের ভয়ংকর দিনগুলি৷''

দেশ স্বাধীন করার পরও দেশ ও জাতির সেবা থেকে পিছিয়ে আসেননি ফেরদৌসী৷ যশোর পৌরসভায় কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন৷ এখনও সক্রিয়ভাবে জড়িত রয়েছেন সমাজসেবার সাথে৷ যে প্রত্যাশা নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন তার কতোটা পূরণ হয়েছে - এমন প্রশ্নের উত্তরে ফেরদৌসী বলেন, ‘‘দেশ স্বাধীন হয়েছে এটাই আমার কাছে সবচেয়ে বড় পাওয়া৷ তবে স্বাধীনতা আমরা যে উদ্দেশ্যে চেয়েছিলাম তা এখনও পূরণ হয়নি৷ কারণ দেশে দুর্নীতি, শোষণ এবং জনগণের অসহায়ত্বের দিকে তাকালেই আমাদের বুকটা হাহাকার করে ওঠে৷ পাট-কাগজসহ বাংলাদেশের বিপুল পরিমাণ সম্পদ নিয়ে গিয়ে পশ্চিম পাকিস্তানিরা নিজেরা তা ভোগ করতো৷ তাদের শোষণ এবং বঞ্চণা থেকে বাঁচতে আমরা যুদ্ধ করেছি৷ অথচ দেশ স্বাধীন হওয়ার পরও মানুষ মুক্তি পায়নি সেই শোষণ ও বঞ্চনা থেকে৷ মেলেনি অর্থনৈতিক মুক্তিও৷ এখনও আমরা ন্যায় বিচার কিংবা ন্যায্য অধিকার পাচ্ছি না৷ এছাড়া আমি আরো বলবো যে, দেশের জেলায় জেলায় যেসব মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কিংবা ঢাকায় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় করা হয়েছে৷ তবে তাদের কার্যক্রমের দিকেও সরকারের আরো দৃষ্টি দিতে হবে৷ কারণ দেখা যাচ্ছে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা এখনও অসহায়, দরিদ্র আর দুঃসহ জীবন যাপন করছেন৷''

প্রতিবেদন: হোসাইন আব্দুল হাই

সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান