কতদিন স্বাস্থ্য-সুরক্ষাবিধি মেনে চলা সম্ভব?
৫ মে ২০২০ফলে দীর্ঘসময় ধরে স্বাস্থ্য ও সুরক্ষাবিধি মেনে চলার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা৷
আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের পূর্বাভাস ছিলো এপ্রিলের শেষ নাগাদ বিশ্বে করোনা প্রকোপ কমবে৷ এখন ইউরোপ-অ্যামেরিকায় এ প্রকোপ কমলেও দক্ষিণ এশিয়ায় কিন্তু সংক্রমণের হার বাড়ছে৷
অন্যদিকে, বাংলাদেশের বিশেষজ্ঞরা এপ্রিল মাসে বলেছিলেন, রোগীদের আক্রান্তের বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ করে তারা ধারণা করেছিলেন এপ্রিলের শেষ বা মে মাসের প্রথম দিকে আক্রান্তের সংখ্যা সর্বোচ্চ হতে পারে৷
তবে নতুন পূর্বাভাসে জুনের শেষ নাগাদ সংক্রমণ কমে আসার কথা জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা৷ অর্থাৎ রোগী ও মৃত্যুর সংখ্যা কমবে৷
প্রথম আলোকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন স্বয়ং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ৷ তবে তিনি এটাও বলেছেন তথ্য উপাত্ত পরিবর্তন হলে পূর্বাভাসের পরিবর্তন হতে পারে৷
এপ্রিলে বিশেষজ্ঞরা বলেছিলেন মে মাসের শেষ নাগাদ ৪৮ হাজার থেকে এক লাখ মানুষ আক্রান্ত হতে পারে৷ এখন যা সংখ্যা দেখা যাচ্ছে তা পূর্বাভাসের সঙ্গে না মেলার দুটো কারণ থাকতে পারে: এক. একসাথে অনেক নমুনা পরীক্ষা না করা এবং দুই. সংক্রমণের হার কম৷
যেসব বিষয় বিশ্লেষণ করে বিশেষজ্ঞরা এসব পূর্বাভাস দেন, তার মধ্যে আবহাওয়া ও সংক্রমণ প্রতিরোধে সরকারের উদ্যোগ অন্যতম৷
আমাদের দেশে সরকারি উদ্যোগের দিকে একটু তাকানো যাক:
দেশে সরকারি ছুটি বাড়ানো হয়েছে এ মাসের ১৫ তারিখ পর্যন্ত৷ তবে রমজান ও ঈদের কারণে কড়াকড়ি শিথিল করা হয়েছে৷ পূর্বাভাস তৈরির ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞরা ঈদের সময় সামাজিক মেলামেলার বিষয়টি হিসেব করেছিলেন, কিন্তু গার্মেন্টস শ্রমিকদের কাজে যোগ দেয়া বা রমজান উপলক্ষ্যে দোকান খুলে দেয়ার বিষয়টি তো তাদের চিন্তায় ছিলো না৷ তাহলে কি তাদের এই পূর্বাভাসের সময়টা আরও দীর্ঘমেয়াদী হবে?
দেশে প্রতিদিন অন্তত ১০ হাজার নমুনা পরীক্ষার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা, সেখানে হচ্ছে ছয় হাজারের বেশি৷
কোন জেলায় ১০০ রোগী থাকলে সেই জেলা এবং কোন এলাকায় ১০ জন রোগী থাকলে তা লকডাউনের পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা৷ এখন এই রোগীদের চিহ্নিত করা কীভাবে সম্ভব?
সরকার অনেক জায়গায় লকডাউন দিয়েও জনগণকে বাইরে বের হওয়া থেকে বিরত রাখতে ব্যর্থ হয়েছে৷ এমনকি পুলিশ আক্রান্তের সংখ্যা বেশি হওয়ায় বর্তমানে পুলিশকেও রাস্তায় কম দেখা যাচ্ছে৷ সেক্ষেত্রে পরিস্থিতি আসলে কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব?
বিশেষজ্ঞদের ধারণা ১৭ মে পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি মানুষ আক্রান্ত হবে৷ ঈদের পর থেকে রোগের প্রাদুর্ভাব কমবে৷ ১১ জুনকে তারা শেষ সময় হিসেবে চিহ্নিত করেছেন৷ বলছেন এরপর রোগীর সংখ্যা কমে আসবে৷ আর ২৫ জুনে রোগীর সংখ্যা নেমে আসবে শূণ্যের কোঠায়৷
জুলাইয়ের শুরুর দিকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে কি হবে?
করোনা পরিস্থিতিতে হাত ধোয়া, মাস্ক ব্যবহার এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার বিষয়টি অভ্যাসে পরিণত করার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা৷ ঘনবসতিপূর্ণ আমাদের এই দেশে সামাজিক দূরত্ব সব সময় বজায় রাখা সম্ভব নয়৷ মাস্ক কেনার সাধ্য সবার নেই৷ হাত ধোয়ার ব্যবস্থা সব জায়গায় নেই৷ ফলে কীভাবে স্বাস্থ্য-সুরক্ষাবিধি মেনে চলবে দেশের সব মানুষ?
বিশেষজ্ঞরা বরাবরই বলছেন সংক্রমণ বাধাগ্রস্ত করার দিকে জোর দিতে হবে৷ কিন্তু কড়াকড়ি শিথিল করলে সংক্রমণ বাধাগ্রস্ত করা সম্ভব নয়৷ ফলে ভবিষ্যতে বাংলাদেশের জন্য কি পরিস্থিতি অপেক্ষা করছে তা নিয়ে আশংকা বাড়ছে বই কমছে না৷
তবে সবচেয়ে ভয়াবহ যে কথাটি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তাহল সংক্রমণ কমে এলেও এই ভাইরাস মানুষের শরীরে থেকে যাবে, অর্থাৎ পরিস্থিতি একেবারে আগের মত হওয়া সম্ভব নয়৷ তাই সবকিছু স্বাভাবিক হলেও এখনকার মতই যতটা সম্ভব স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা কি আমাদের দেশের প্রতিটা মানুষের পক্ষে সম্ভব?
২৪ এপ্রিলের ছবিঘরটি দেখুন...