বিধিনিষেধ ভেঙে বড় ঝুঁকির দিকে বাংলাদেশ?
৪ মে ২০২০পুলিশের বা অন্য কারো চেকপোষ্টেরও এখন আর দেখা মিলছে না ৷ ফলে বাঁধা দেওয়ারও কেউ নেই৷ কোথাও কোথাও যানজট ফিরে আসছে চেনা চেহারায়৷ ঢাকার প্রবেশ মুখগুলোও এখন উন্মুক্ত৷
‘লকডাউন’ ভেঙে পড়ায় কোন দিকে যাচ্ছে বাংলাদেশ? জানতে চাইলে রোগ তত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মুশতাক হোসেন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমি বুঝতে পারছি না, আমরা কি ব্রাজিল বা যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থার দিকে যাচ্ছি? এখন এই শৈথিল্য ভয়াবহ পরিনতির দিকে আমাদের নিয়ে যাচ্ছে না তো? আমরা বারবার বলছি, এখন শৈথিল্য দেখানো যাবে না৷ কিন্তু রাস্তা ঘাটে যে অবস্থা তাতে মনে হচ্ছে করোনা যুদ্ধে জয়ী হয়ে আমরা উৎসব করছি৷ কিছু মানুষ তো প্রয়োজনে বের হচ্ছেন৷ কিন্তু অপ্রয়োজনে বের হওয়া মানুষের সংখ্যাও কম নয়৷ এদের নিবৃত্ত করতে হবে৷ এই মাস আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ৷ এটা রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদেরও বুঝতে হবে৷’’
ঈদের আগেই দোকান খোলার ইঙ্গিত প্রধানমন্ত্রীর
বাংলাদেশে ৫ মে পর্যন্ত সাধারণ ছুটি রয়েছে৷ এই ছুটির মেয়াদ আরো ১০ দিন বাড়ছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷ সোমবার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে রংপুর বিভাগের আট জেলার কর্মকর্তাদের সঙ্গে মত বিনিময়ের সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘আমাদের সরকারি অফিস আদালত সব সীমিত আকারে আমরা চালু করে দিচ্ছি৷ যাতে মানুষের কষ্ট না হয়৷ সামনে ঈদ৷ ঈদের আগে কেনাকাটা বা যা যা দরকার সেগুলোও যেন মানুষ করতে পারে৷’’ কিন্তু লকডাউন শিথিল হলেও মানুষ যেন সামাজিক ও শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার নিয়ম এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে, সে বিষয়ে সতর্ক করেন সরকারপ্রধান৷
ঈদের আগে দোকানপাট খোলার যে ইঙ্গিত দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী তাতে কি মানুষ একটু বেশি করে রাস্তায় বের হবেন? আইন শৃঙ্খলা বাহিনীও কি শিথিলতা দেখাবে? ডা. মুশতাক বলেন, ‘‘এখন যদি শিথিলতা দেখানো হয়, পরিণতি কি হবে সেটা ধারণা করা কঠিন৷ আমরা তো বলছি, এখন পর্যন্ত আমরা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পেরেছি৷ আর কিছুদিন এটা ধরে রাখতে পারলে সবাই একসঙ্গে বের হতে পারব৷ এখন আরো কঠোর করা উচিত৷’’
লকডাউন বলে কিছুই নেই
সোমবার রাজধানীতে ঢোকার প্রবেশ মুখগুলোতে দেখা গেছে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও, অবাধে প্রবেশ ও বের হচ্ছেন সাধারণ মানুষ৷ বিভিন্ন পয়েন্টে ছিল যানবাহনের দীর্ঘ সারি৷ বেশিরভাগ চেকপোস্টে ছিল না পুলিশের উপস্থিতি৷ এই সুযোগে প্রাইভেটকার, রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্স ও মোটরসাইকেলে অবাধে যাত্রী পরিবহন করতে দেখা গেছে৷ নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ডে দেখা যায়নি আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা৷ গাবতলী ও আব্দুল্লাহপুরেও ছিল না পুলিশ৷ দেখা গেছে যানবাহনের দীর্ঘসারি৷ ছিল ঢাকামুখী মানুষ ও যানবাহনের চাপ৷
পুলিশ কি শিথিলতা দেখাচ্ছে?
চেকপোষ্টে কেন পুলিশ নেই? সোমবার পর্যন্ত ৯১৪ জন সদস্য আক্রান্ত ও ৫ জনের মৃত্যু হওয়ায় পুলিশ কি শিথিলতা দেখাচ্ছে? জবাবে পুলিশের মুখপাত্র ও সহকারী মহাপুলিশ পরিদর্শক (এআইজি) সোহেল রানা ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘পুলিশ কোন শিথিলতা দেখাচ্ছে না৷ বাহিনীর সদস্যদের মনোবলও চাঙা আছে৷ বিপুল সংখ্যক সদস্য আক্রান্ত হওয়ায় এখন নানা ধরনের কৌশল নিতে হচ্ছে৷ পৃথক শিফট করা হচ্ছে৷ যাতে একসঙ্গে সবাই আক্রান্ত না হন৷ আইজিপি এ ব্যাপারে নিয়মিত নির্দেশনা দিচ্ছেন৷ আমরা আক্রান্ত সদস্যদের ব্যাপারে নিয়মিত খোঁজ খবর রাখছি৷ তাদের মনোবল চাঙা রাখতে নিয়মিত উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে৷’’
বিপুল সংখ্যক সদস্য আক্রান্ত হওয়ায় পুলিশের মনোবলে কি চিড় ধরেছে? জানতে চাইলে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক নুরুল হুদা ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এত সদস্য আক্রান্ত হলে একটু সতর্ক তো হতেই হবে৷ তা না হলে পরে দায়িত্ব পালনের লোক খুঁজে পাওয়া যাবে না৷ এখন পুলিশকে নানা ধরনের কৌশল নিতে হবে৷ মাঠ পর্যায়ে দায়িত্বও পালন করতে হবে, আবার সদস্যদেরও নিরাপদে রাখতে হবে৷ এখন উর্ধ্বতনদের দায়িত্বটা বেশি৷ কোন সদস্য যেন মানষিকভাবে ভেঙে না পড়েন সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে৷’’
করোনা আতঙ্কে পুলিশ সদস্যের আত্মহত্যা
এদিকে রাজধানীর খিলগাঁওয়ে পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) এক কনস্টেবল করোনা আতঙ্কে ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করেছেন বলে তার পরিবার অভিযোগ করেছে৷ সোমবার সকালে খিলগাঁও তিলপাপাড়ার বাসার পাঁচতলার ছাদ থেকে লাফ দেন তিনি৷ খিলগাঁও থানার ওসি মশিউর রহমান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘কনস্টেবল তোফাজ্জল হোসেন কয়েক দিন ধরে অসুস্থ ছিলেন৷ এরপর তিনি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত কিনা তার পরীক্ষা করেন৷ কিন্তু পরীক্ষায় রেজাল্ট নেগেটিভ আসে৷ এ নিয়ে তিনি মানসিকভাবে অস্থির ছিলেন বলে তার স্ত্রী আমাদের জানিয়েছেন৷ তোফাজ্জল ভাবছিলেন তিনি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন, হয়তো টেস্টে ধরা পড়েনি৷ গত কয়েকদিন ধরে এসব চিন্তায় তার ঘুম হচ্ছিল না৷’’
২৪ এপ্রিলের ছবিঘরটি দেখুন...