জলবায়ু সম্মেলন
৩০ নভেম্বর ২০১২রাশিয়ায় ২০১০ সালের গ্রীষ্মে যেরকম ভয়ানক গরম পড়েছিল, সেটাই হয়ত স্বাভাবিক হয়ে দাঁড়াবে; সমুদ্রে জলের উচ্চতা বাড়বে; গ্রীষ্মমণ্ডলের উন্নয়নশীল দেশগুলিকে যুঝতে হবে তীব্র খরার সঙ্গে৷ এ সবই ঘটবে যদি না তথাকথিত গ্রিনহাউস গ্যাসগুলির নির্গমন কমানো সম্ভব হয়৷ বিশ্বব্যাংকের প্রকাশিত একটি রিপোর্টে এই ছবিই এঁকেছেন জার্মানির পটস্ডাম জলবায়ু গবেষণা প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞানীরা৷ বিশ্বের তাপমাত্রা তিন ডিগ্রি সেলসিয়াস অবধি বাড়ার কথা বলেছেন তাঁরা৷
দু'বছর আগে মেক্সিকোর কানকুনে অনুষ্ঠিত জলবায়ু সম্মেলনে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল যে, পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি দুই ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমাবদ্ধ রাখা হবে, কেননা তার পরই পরিস্থিতি বিপজ্জনক হয়ে দাঁড়াবে, অন্তত জাতিসংঘে সেই ধরণেরই একটা সমঝোতা পরিলক্ষণ করা গিয়েছিল৷ তবুও দোহা সম্মেলনে কার্বন নির্গমন হ্রাস সম্পর্কে কোনো গালভরা প্রতিশ্রুতি পাবার সম্ভবনা কম৷ জার্মানওয়াচ পরিবেশ সংরক্ষণ সংগঠনে আন্তর্জাতিক জলবায়ু নীতির উপর নজর রাখেন সোয়েন হার্মেলিং৷ তিনি বলেন:
‘‘এর একটা কারণ হল, বহু দেশ ইতিমধ্যেই তাদের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ফেলেছে এবং সে অনুযায়ী তাদের জাতীয় আইনেরও রদবদল করেছে৷ কাজেই তাদের পক্ষে এখন বলা শক্ত, ‘আমরা আরো খানিকটা যোগ করবো'৷ কেননা তারা জানেই না, তারা এ পর্যন্ত যে লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে, তা-ই অর্জ্জিত হবে কিনা৷''
মাত্র স্বল্প কয়েকটি উন্নয়নশীল দেশের কাছ থেকে কার্বন নির্গমন হ্রাস সংক্রান্ত নতুন প্রতিশ্রুতি পাবার আশা আছে বলে হার্মেলিং মনে করেন৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন:
‘‘এখনও প্রায় ১০০টি দেশ আছে, বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশ, যারা বিগত কয়েক বছরে জলবায়ুর সুরক্ষা সংক্রান্ত কোনো রকম ঘোষণাই দেয়নি৷ এদের মধ্যে ফিলিপাইনস, থাইল্যান্ড, সৌদি আরব, এমনকি এবারকার সম্মেলনের আয়োজনকারী দেশ কাতারও রয়েছে৷ এবং কিছু কিছু আশাজনক আভাস পাওয়া যাচ্ছে যে, এ সব দেশের কাছ থেকে আমরা অপ্রত্যাশিত কোনো ঘোষণা পেতে পারি৷''
দোহা সম্মেলনের সাফল্য-অসাফল্যের মূল মাপকাঠি হবে, কিয়োতো চুক্তির মেয়াদ বাড়ানো সম্ভব হলো কিনা৷ ২০০৫ সালের এই চুক্তি অনুযায়ী শিল্পোন্নত দেশগুলি তাদের কার্বন নির্গমন ১৯৯০ সালের তুলনায় পাঁচ শতাংশ কমাতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ৷ ২০০৮ সাল থেকে ২০১২ সালের মধ্যে তাদের সেটা করার কথা ছিল৷ এই তথাকথিত প্রথম প্রতিশ্রুতি পর্বের মেয়াদ শেষ হচ্ছে এ বছর৷ কিন্তু একটি দ্বিতীয় প্রতিশ্রুতি পর্ব সম্পর্কে দোহায় একমত হবার সম্ভাবনা বিশেষ ঊজ্জ্বল নয় বলেই মনে করেন পটস্ডাম জলবায়ু গবেষণা প্রতিষ্ঠানের মুখ্য অর্থনীতিবিদ অটমার এডেনহোফার৷ তিনি বলেন:
‘‘দোহায় কিয়োতো চুক্তির মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে আমি মনে করি না৷ সম্মেলনের প্রাক্কালে আলাপ-আলোচনার পরিস্থিতি সম্পর্কে আমার ধারণা, আমরা একটা কূটনৈতিক কানাগলিতে ঢুকে পড়েছি৷ এবং দোহায় এই সুবিশাল সমস্যার সমাধান করা সম্ভব হবে বলে আমার মনে হয় না৷''
অথচ গতবছর ডারবান সম্মেলনেই কিন্তু দ্বিতীয় প্রতিশ্রুতি পর্বের মেয়াদ বাড়ানোর কথা স্থির হয়ে গিয়েছিল৷ ইউরোপীয় ইউনিয়ন তাই দোহাতে সেই রকমের নিশ্চয়তা চায়৷ কিন্তু এখন গোল বেঁধেছে কিয়োটো চুক্তির মেয়াদ ২০১৮, না ২০২০ সাল অবধি বাড়ানো হবে, তাই নিয়ে৷ জার্মানওয়াচের সোয়েন হার্মেলিং বলেন:
‘‘ইউরোপীয় ইউনিয়ন চায় যে, কিয়োতো চুক্তির দ্বিতীয় মেয়াদ ২০২০ সাল অবধি চলুক৷ অন্যদিকে বিশেষ করে ছোট দ্বীপরাজ্যগুলি বলছে, তারা চায় পাঁচ বছরের মেয়াদ৷ নয়ত জলবায়ু সুরক্ষার এই অতি নিম্ন পর্যায়ের লক্ষ্যমাত্রা আরো আট বছর ধরে বজায় থাকবে বলে তাদের আশঙ্কা৷''
অথচ দোহাতে যদি কিয়োটো চুক্তির মেয়াদ বাড়ানো সম্ভব না হয়, তবে সেটা জলবায়ু সুরক্ষার ক্ষেত্রে একটা বড় মাপের বিপর্যয় হবে, কেননা কিয়োটো চুক্তিই হল একমাত্র চুক্তি, যেখানে কার্বন নির্গমন হ্রাসের আইনগতভাবে বাধ্যতামূলক লক্ষ্যগুলি নির্দিষ্ট করা আছে৷