জলবায়ু পরিবর্তন
১৪ ডিসেম্বর ২০১২দোহায় জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলনের সভাপতি কাতারের আবদুল্লাহ বিন হামাদ আল-আতিয়া দোহার ঐকমত্যকে ‘‘দোহা ক্লাইমেট গেটওয়ে'' বা দোহার জলবায়ু তোরণ নাম দিয়ে মানরক্ষার চেষ্টা করেছিলেন৷ এমনকি জার্মান পরিবেশ মন্ত্রী পেটার আল্টমায়ার, যাঁকে শেষ মুহূর্তে কোনোরকম রুদ্ধদ্বার আপোশের একটা চেষ্টার দায়িত্ব দেওয়া হয়, তিনিও পরে স্বীকার করেন, ‘‘গোড়ায় যা ভাবা গিয়েছিল, তার চেয়ে অনেক কম প্রগতি হয়েছে৷ তবে উন্নয়নশীল দেশগুলির মধ্যে, ছোট ছোট দ্বীপরাজ্যগুলির মধ্যে, উত্থানশীল দেশগুলির মধ্যে এবং শিল্পোন্নত দেশগুলির মধ্যে বেশ কিছুটা ঐকমত্য দেখা গিয়েছে৷ এবং তা থেকে বোঝা যায়, যে ফলাফল অর্জিত হয়েছে, তা অন্তঃসারশূন্য নয়৷''
অন্তত কিয়োটো চুক্তির মেয়াদটা বাড়ানো হয়েছে৷ তথাকথিত দ্বিতীয় চুক্তিবদ্ধ মেয়াদটি ২০১৩ সালের পয়লা জানুয়ারি শুরু হবে এবং ২০২০ সালের শেষ অবধি চলবে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন যেমনটি চেয়েছিল৷ এক্ষেত্রে সকলের হাঁফ ছাড়াটা এই কারণে যে, কেননা কিয়োটো চুক্তিই হলো একমাত্র চুক্তি, যা আইনগতভাবে বাধ্যতামূলক এবং যার মাধ্যমে কার্বন নির্গমন বাস্তবিক হ্রাস হওয়ার কথা৷
অপরদিকে ২০১৫ সালের মধ্যে একটি নতুন চুক্তি নিয়ে আলাপ-আলোচনা শেষ হবার কথা, যে চুক্তি অনুযায়ী শুধু শিল্পোন্নত দেশগুলিই নয়, উন্নয়নশীল দেশগুলিও তাদের গ্রিনহাউস গ্যাসগুলির নির্গমন হ্রাস করবে৷ এই নতুন চুক্তি কার্যকর হবে ২০২০ সাল থেকে৷
এই আপোশে পরিবেশ আন্দোলনকারীদের সমালোচনা হলো, ‘দ্বিতীয়' কিয়োটো চুক্তিতে কার্বন নির্গমন হ্রাসের যে সব লক্ষ্য দেওয়া হয়েছে, তা খুবই নীচু৷ এছাড়া কার্বন নির্গমন হ্রাসে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ দেশগুলির সংখ্যাও কমে গেছে৷ তার ওপর আবার প্রথম কিয়োটো চুক্তিতে সব দেশকে বিশেষ বিশেষ এমিশন রাইটস বা নির্দিষ্ট পরিমাণ কার্বন নির্গমনের অধিকার দেওয়া হয়েছিল৷ পূর্ব ইউরোপের দেশগুলি নানা কারণে সেগুলির পুরো সদ্ব্যবহার না করতে পারার ফলে তারা দোহায় অন্য একটি আপোশের সূত্র আদায় করেছে৷ সেটি হলো তারা ঐ নির্দিষ্ট পরিমাণ কার্বন নির্গমনের একাংশ ২০২০ সাল অবধি ব্যবহার করতে পারবে৷ সেই সঙ্গে রয়েছে এই আশঙ্কা যে, রাশিয়া এবং অপরাপর দেশ কিয়োটো-পরবর্তী চুক্তি নিয়ে আলাপ-আলোচনার সময়েও এই বাঁচোয়া এমিশন রাইটসের প্রসঙ্গ ওঠাবে৷
উন্নয়নশীল দেশগুলি দোহা থেকে জানতে চেয়েছিল, কার্বন নির্গমন হ্রাস এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কুপ্রভাব মোকাবিলা করার জন্য ২০২০ সাল অবধি তাদের যে প্রতিবছর মোট দশ হাজার কোটি ডলার অর্থসাহায্যের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, তার কি হবে, সেটা কিভাবে এবং কখন পাওয়া যাবে? দোহায় এ'প্রশ্নেরও কোনো উত্তর পায়নি তারা৷
তবে জলবায়ু পরিবর্তনের দরুণ ঘূর্ণিঝড় ইত্যাদির মাধ্যমে যে স্বল্পমেয়াদের ক্ষয়ক্ষতি হয়, তার মোকাবিলার জন্য অর্থসাহায্যের প্রশ্নে দোহায় ঐকমত্য পরিলক্ষিত হয়েছে, যা গ্রিনপিসের মতো সংগঠনও একটা বড় প্রগতি বলে মনে করছে৷ নয়তো দোহার সম্মেলন সম্পর্কে সামগ্রিকভাবে অক্সফ্যামের প্রতিনিধি ইয়ান কোভালস্কি বলেন, ‘‘আমরা এখন জানি, আগামী কয়েক বছরে আমরা কি প্রত্যাশা করতে পারি৷ তবে আসলে আমরা খুবই নিরাশ হয়েছি, কেননা এখানে আমরা এতোটুকুও বেশি জলবায়ু সুরক্ষার ব্যবস্থা করতে পারিনি৷''
গ্রিনপিসের মার্টিন কাইজারের মত হলো, ‘‘এই প্রক্রিয়া আর এ'ভাবে চলতে পারে না বলে আমার ধারণা৷ প্রতিবছর বিশ্বের জনমতকে বলা যে, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে সংগ্রামে প্রগতি অর্জিত হয়েছে, অথচ শেষমেষ আসলে কিছুই হয়নি -এ'সবের দিন ফুরিয়েছে বলে আমার বিশ্বাস৷''
অর্থাৎ দোহার সম্মেলনের মতো মেগা সম্মেলন, যেখানে সারা বিশ্ব থেকে বিশ হাজার প্রতিনিধি উড়ে গিয়ে সপ্তাহ দুয়েক ধরে দরাদরি, ধরাধরি করেন - এ'ধরণের ‘মেগা ইভেন্ট'-এর দিন ফুরিয়েছে কিনা, তাই নিয়েই এবার প্রশ্ন উঠেছে৷ অনেক বিশ্লেষক বলছেন, জলবায়ু সুরক্ষার ব্যাপারটা প্রতিনিধিদের হাতে ছেড়ে না দিয়ে প্রতিটি দেশের সরকারের নিজস্ব নীতির অঙ্গ করা উচিৎ৷