দ্বিতীয় ধাপের ইউপি নির্বাচনেও সহিংসতার আশঙ্কা
৯ নভেম্বর ২০২১খোদ নির্বাচন কমিশন কেবল "বিব্রত ও উদ্বিগ্ন'' হওয়ার মধ্যেই দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে।
এই সংঘাত-সংঘর্ষ ঠেকানোর দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের বলে মনে করেন বিশ্লেষকেরা। তবে নির্বাচন কমিশনের কথা হলো, প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে সংঘাত হওয়ায় অনেক সময় ঠেকানো যায় না।
১১ নভেম্বর ৮৪৬ টি ইউনিয়ন পরিষদে দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচন। এরইমধ্যে ৮১টি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বিনা ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন। আর এবার বিএনপি দলীয়ভাবে নির্বাচনে না থাকলেও তাদের চেয়ারম্যান পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী আছে। আছে জাতীয় পার্টি এবং জামায়াতের। আর আছে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরা। তারাই আলোচনার তুঙ্গে। কেন্দ্র থেকে সতর্কতা, হুশিয়ারি কিছুই দমাতে পারেনি তাদের। এর প্রধান কারণ হলো স্থানীয় পর্যায়ে এমপি বা কেন্দ্রীয় নেতাদের গ্রুপিং। তাই প্রথম ধাপের দুই দফার নির্বাচনের তুলনায় এবার ত্রিমুখি সংঘর্ষের আশঙ্কা প্রবল।
নানা সূত্রে যে খবর পাওয়া গেছে তাতে আওয়ামী লীগের ৬৯১ জন বিদ্রোহী প্রার্থী আছে। কোনো কোনো ইউপিতে একাধিক বিদ্রোহী প্রার্থীও আাছে। বিএনপির স্বতন্ত্র প্রার্থী আছে ৩১১ জন। জাতীয় পাটির প্রার্থী আছেন ১০১ জন।
দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনকে সামনে রেখে এপর্যন্ত ৩০ জন নিহত এবং চার শতাধিক আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সোমবার মেহেরপুরের গাংনি উপজেলায় দুই ভাইকে কুপিয়ে হত্যার মত ঘটনাও ঘটেছে। ওই ঘটনায় অন্তত ২৫ জন আহত হয়েছেন। গত বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশন বৈঠক করে এই সহিংসতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে। ওই বৈঠকের পরও সহিংসতায় কমপক্ষে সাতজন নিহত হওয়ার খবর পাওয় গেছে। বৈঠকের দিনই নরসিংদীর রায়পুরায় নির্বাচনী সহিংসতায় চারজন নিহত হন। ওই সংঘর্ষ রীতিমত ‘‘টেটাযুদ্ধে” রূপ নেয়। অধিকাংশ সংঘাত-সংঘর্ষ হয়েছে আওয়ামী লীগ ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীদের কর্মী সমর্থকদের মধ্যে।
নির্বাচন কমিশন এরই মধ্যে তৃতীয় ধাপের নির্বাচনেরও তারিখ ঘোষণা করেছে। ২৮ নভেম্বর এক হাজার সাতটি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন হবে।
এপ্রিলে মোট ৩৭১টি ইউনিয়ন পরিষদের ভোট হওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু করোনা সংক্রমণ বেশি হওয়ায় ২০৪টি ইউনিয়ন পরিষদের ভোট হয়। বাকিগুলো স্থগিত করা হয়। তখন নির্বাচনের দিন সহিংসতায় তিন জন নিহত হয়। আর বিনা ভোটে নির্বাচিত হন ৭১ জন।
স্থগিত থাকা ইউনিয়ন পরিষদগুলোর মধ্যে ১৬০টিতে নির্বাচন হয় ২০ সেপ্টেম্বর। এরমধ্যে ৬৯ টি ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যান প্রার্থীরা আগেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। ভোটের দিন সহিংসতায় নিহত হন চারজন।
সুশাসনের জন্য নাগরিকের(সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার এই সংঘাত-সহিংসতা ঠেকাতে না পারার জন্য প্রধানত নির্বাচন কমিশনকেই দায়ী করছেন। তিনি বলেন," পরিস্থিতি দেখে নির্বাচন কমিশন আছে কী নাই সেই প্রশ্ন উঠছে। তারা বিব্রত হলে নাগরিকেরা কী করবেন? আমি তো শুনেছি নির্বাচন কমিশনের একজন কর্মকর্তা বলেছেন তাদের দায় নেই। ”
তিনি বলেন,"তারা দায়িত্ব পালন করছেন না। দায়িত্ব পালন করলে আমরা ব্যবস্থা নিতে দেখতাম। যেখানে কারচুপি, সহিংসতা হয়েছে সেখানে নির্বাচন স্থগিত করতে দেখতাম, দায়ীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে দেখতাম। তা তো দেখি না।”
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,"রাজনৈতিক দলগুলো যদি দায়ী হয়ে থাকে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে পারে। তা তো নিচ্ছে না।”
এ প্রসঙ্গে নির্বাচন কমিশনের যুগ্ম সচিব এস এম আসাদুজ্জামান বলেন,"যেসব সহিংসতা হচ্ছে তা প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী চেষ্টা করেও অনেক সময় তা ঠেকাতে পারছেনা। এখানে কে দায়ী বা কার দায়দায়িত্ব সেটা বিষয় নয়। আমরা সহিংসতা ঠেকাতে সর্বাত্মক চেষ্টা করছি। পুলিশ প্রশাসনকে নিয়ে বৈঠক করেছি। ডিআইজি এবং এসপিরা ছিলেন। সহিংসতা ঠেকাতে আমাদের কড়া নির্দেশনা আছে।”
তিনি আরো বলেন,"প্রতিদ্বদ্বী প্রার্থীদের কর্মী সমর্থকেরা সংঘাত সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ছে। অনেক সময় সেটা প্রত্যন্ত গ্রামে হওয়ায় তা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।”
এদিকে বৃহস্পতিবারের নির্বাচনে ব্যালট পেপারসহ নির্বাচনী সামগ্রী জেলা পর্যায়ে পাঠানো হয়েছে। বুধবার কেন্দ্রগুলোতে সেগুলো পাঠানো হবে বলে জানান তিনি।