1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মুসলিম নারীদের ন্যায্য অধিকার

শীর্ষ বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতা
১৭ অক্টোবর ২০১৬

ভারতে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালু করার বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকার সুপ্রিম কোর্টকে জানিয়েছে, তারা অভিন্ন বিধির পক্ষে৷ এই অবস্থান ক্ষিপ্ত করেছে সংখ্যালঘু মুসলিমদের৷ কেন কেবল মুসলিম সম্প্রদায় অভিন্ন দেওয়ানি বিধিতে আপত্তি জানাচ্ছে?

https://p.dw.com/p/2RIgr
Afghanen in Indien Gesundheitstouristen
কলকাতার গড়ের মাঠে নামাজ পড়ছেন মুসলমানরাছবি: DESHAKALYAN CHOWDHURY/AFP/Getty Images

অভিন্ন বিধি সবচেয়ে বেশি ধাক্কা মারবে ‘‌তিন তালাক'‌ এবং সম্পর্কচ্ছেদ করা স্ত্রীকে খোরপোষ না দেওয়ার প্রচলিত প্রথায়৷ এ কারণেই ‘মুসলিম পার্সোনাল ল' বোর্ড' বলেছে, ‘‘ভারতের হিন্দুত্ববাদী মোদী সরকার উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মুসলিমদের ধর্মীয় অধিকারে হস্তক্ষেপ করতেই অভিন্ন দেওয়ানি বিধি আনতে তৎপর হয়েছে৷'' মুসলিম সমাজ চলে শরিয়ত আইন মেনে, সেই আইনের কোনোরকম রদবদল করা যায় না বলেই দাবি করছেন তাঁরা৷

সত্যিই কি তাই?‌ আজকের মুসলিম নেতারা বলছেন, ভারত বহু ধর্ম, সম্প্রদায়, ভাষা, সংস্কৃতির দেশ৷ সেই ‘বহুত্ব' রক্ষা করার দায় সরকারের, বিচারবিভাগের৷ মুসলিম সমাজে যদি তিন তালাকে বিয়ে ভাঙা বা বিবাহবিচ্ছিন্ন মহিলাদের প্রাক্তন স্বামীর থেকে খোরপোষ না পাওয়ার অধিকারই স্বীকৃত থাকে, তা হলে সেটাই চলতে দিতে হবে৷ যদি বাকি দেশের আইন-কানুনের সঙ্গে তার সামঞ্জস্য না থাকে, তা হলেও!

কিন্তু ঘটনা হলো, স্বাধীনতার পর ভারতের যে নেতারা দেশের সংবিধান প্রণয়ন করেছিলেন, সেই জওহরলাল নেহেরু, বল্লভ ভাই প্যাটেল, ভি আর আম্বেদকর এবং মওলানা আবুল কালাম আজাদ, এঁরা সবাই অভিন্ন দেওয়ানি বিধিরই পক্ষে ছিলেন৷ অর্থাৎ এক দেশ, একটিই আইন৷ সব সম্প্রদায়, সব ধর্ম, নারী–পুরুষ নির্বিশেষে সবার জন্যে এক আইন৷ আজকে নয়, সেই ১৯৪৯ সালে এটা নিয়ে প্রথম বিতর্ক হয়েছিল সংসদে৷ অমীমাংসিত সেই প্রশ্ন তার পর ফের উত্থাপিত হয় ১৯৫১ এবং '‌৫৪ সালে৷ কিন্তু সংসদ সদস্যরা কোনো ঐকমত্যে পৌঁছতে না পারায় এ বিষয়ে নীতি নির্ধারণের ভার রাজ্যগুলির হাতে তুলে দেওয়া হয়৷ তার জেরেই তৈরি হয় বিভিন্ন পার্সোনাল ল বোর্ড, ধর্ম এবং সম্প্রদায়ভিত্তিক, পরস্পরের থেকে আলাদা৷ কিন্তু ভারত যে বহুত্বের ধারণা থেকে একদিন এক ঐক্যবদ্ধ দেশের চেহারা নেবে, সংবিধান–প্রণেতাদের এই মৌলিক ভাবনায় কোনো দ্বিমত ছিল না৷

কাজেই নরেন্দ্র মোদীর সরকার নির্দিষ্টভাবে কোনো সম্প্রদায়কে উত্যক্ত করতে বা তাদের অধিকারে হস্তক্ষেপ করার উদ্দেশ্যে কিছু করার চেষ্টা করছে না৷ তারপরও প্রশ্ন উঠতে পারে, কেন হঠাৎ দীর্ঘ ৬২ বছর পর বিষয়টা নিয়ে তৎপরতার দরকার হলো?‌ এটা জেনেও যে এ ধরনের কোনো উদ্যোগ কার্যত মৌচাকে ঢিল মারার সামিল!‌ এখানেও বোঝাপড়ার অভাব ঘটছে যে মোদী সরকারই বুঝি এমনটা করতে চাইছে৷ কিন্তু প্রসঙ্গটা আসলে উত্থাপন করেছে সুপ্রিম কোর্ট৷

সর্বোচ্চ আদালতের তাগাদাতেই কেন্দ্র সরকার নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করে জানিয়েছে যে, হ্যাঁ, তাদের অবশ্যই সায় আছে অভিন্ন দেওয়ানি আইনে৷ ঘটনাচক্রে ভারতীয় জনতা পার্টি বহু দিন ধরেই এই অভিন্ন বিধির পক্ষে৷ ১৯৯৮ সালে অটলবিহারী বাজপেয়ীর নেতৃত্বে বিজেপি যখন কেন্দ্রে ক্ষমতায় আসে, এটাও ছিল তাদের অন্যতম নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি৷

কিন্তু সরকার নয়, বিচারবিভাগ এবার প্রশ্নটা তুলেছে৷ কেন?‌ কারণ সারা বছর অসংখ্য মামলা সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত গড়াচ্ছে, যেখানে মুসলিম নারীরা তালাকের পর খোরপোষ না পেয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন৷ তাঁরা মনে করছেন, মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ডের বেঁধে দেওয়া আইন পুরুষদের প্রতি চরম পক্ষপাতদুষ্ট৷ মুসলিম মহিলাদের স্বার্থ সেই আইনে আদৌ সুরক্ষিত নয়৷ তারই সুযোগ নিয়ে মুসলিম পুরুষরা যথেচ্ছ বিয়ে করে, বিচ্ছেদ ঘটায় এবং পরবর্তীতে প্রাক্তন স্ত্রীদের ভরণপোষণের কোনো অর্থনৈতিক দায়িত্ব নিতে অস্বীকার করে৷ সামাজিক ও অর্থনৈতিক স্তর নির্বিশেষে বহু মুসলিম মহিলা এই বৈষম্যের শিকার হয়েই চলেছেন৷

ভারতের একাধিক নারী অধিকার সুরক্ষা সংগঠন এই বিতর্কে নিজেদের যুক্ত করেছেন৷ এই প্রসঙ্গে তাদের বক্তব্যও বিশেষ প্রনিধানযোগ্য৷ তারা বলছে, অভিন্ন দেওয়ানি আইন কোনো বিশেষ ধর্মীয় অনুশাসনের বিরোধিতা করতে নয়, বরং নারী পুরুষের মধ্যে বৈষম্যমূলক সামাজিক প্রথার বিলোপ ঘটাতে৷ এর সঙ্গে ধর্মের কোনো সম্পর্ক নেই, যদি থাকত, তা হলে একাধিক ইসলামি দেশ নিজেদের বিবাহ বিচ্ছেদ সংক্রান্ত আইন সংশোধন করে নারী অধিকার সুরক্ষিত রাখার ব্যবস্থা করত না৷

মোদী সরকারের আইনমন্ত্রী রবিশংকর প্রসাদ, মন্ত্রী এবং আইনজীবী অরুণ জেটলি থেকে শুরু করে সকলেই এই একটি বিষয়ের ওপর জোর দিচ্ছেন, যে ধর্মীয় অনুশাসনের দোহাই দিয়ে এরকম বিচ্যুতি আর চলতে দেওয়া যায় না৷ এটা সময়ের দাবি৷

এ প্রসঙ্গে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মামলার উদাহরণ দেওয়া যায়৷ ১৯৯৫ সালে সরলা মুদগল বনাম ভারত সরকার মামলা৷ সরলা মুদগলের হিন্দু স্বামী দ্বিতীয় একটি বিয়ে করবেন বলে মুসলিম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন হিন্দু বৈবাহিক আইনে তাঁর প্রথম বিবাহটি বিচ্ছেদ না ঘটিয়েই৷ সুপ্রিম কোর্ট সেই দ্বিতীয় বিয়েটি অবৈধ ঘোষণা করে৷ কিন্তু তার চেয়েও বড় কথা, ওই মামলা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়, অভিন্ন দেওয়ানি বিধি না থাকার কারণে পুরুষতন্ত্র কীভাবে পরিস্থিতির অন্যায় সুযোগ নেয়৷ এছাড়া ১৯৮৫ সালের শাহ বানু মামলা এখনও অনেকেরই মনে আছে৷ বৃদ্ধা শাহ বানুকে তিন তালাক দিয়ে কার্যত রাস্তায় বের করে দিয়েছিলেন তাঁর স্বামী৷ সেই সময়ও সুপ্রিম কোর্ট রায় দিয়েছিল, ভারতীয় দণ্ডবিধিতে খোরপোষ পাওয়ার পূর্ণ অধিকার আছে একজন বিবাহবিচ্ছিন্ন মুসলিম নারীর৷ কিন্তু সেবারও বাধ সেধেছিল মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ড৷ কাজেই এবারের আইনি প্রক্রিয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে এই প্রশ্নে যে, ধর্মীয় বিধান আগে, না মানুষ!‌

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য