উন্নাওতে পুলিশের জবাব
১০ ডিসেম্বর ২০১৯''ধর্ষণ তো হয়নি, আগে হোক, তারপর অভিযোগ জানাতে আসবেন৷'' উত্তর প্রদেশের উন্নাওতে ধর্ষণের অভিযোগ জানাতে আসা মহিলার প্রতি এই ছিল পুলিশের জবাব৷ যে গ্রামে একজনকে প্রথমে ধর্ষণ, তারপর পুড়িয়ে মারা হল, সেখানেই পুলিশের এই আচরণে ফের আলোড়ন শুরু হয়েছে গোটা দেশ জুড়ে।
হায়দরাবাদে ধর্ষণ এবং অভিযুক্তদের বিতর্কিত পরিস্থিতিতে পুলিশের গুলিতে মৃত্যু, দিল্লি, জয়পুর, রাঁচি সহ একের পর এক শহরে ধর্ষণ ও পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় দেশ যখন উত্তাল, তখন উন্নাওয়ের পুলিশ বুঝিয়ে দিল, তারা আগের মতোই সংবেদনহীন এবং মেয়েদের রক্ষার কাজে তাদের কতটা অনীহা রয়েছে৷ উন্নাওয়ের যে গ্রামের সাহসিনী ধর্ষণের পরে অভিযোগ জানান, মামলা করেন এবং আদালতের পথে যাওয়ার সময় অভিযুক্ত ধর্ষক ও তার বন্ধুরা তার গায়ে আগুন ধরিয়ে দেয় এবং শেষ পর্যন্ত সেই আগুনে তাঁর প্রাণ যায়, সেই এলাকারই ঘটনা এটা৷ যেখানে সাহসিনীর গায়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছিল, সেখানেই তিনজন তাঁকে ধর্ষণের চেষ্টা করেছিল৷ অভিযোগ জানাতে থানায় গিয়ে মহিলাকে শুনতে হয়েছে, এখনও তো ধর্ষণ হয়নি৷ হলে তখন আসবেন৷
ওই মহিলা জানিয়েছেন, কয়েক মাস আগে গ্রামেরই তিনজন যুবক তাঁকে ধর্ষণ করার চেষ্টা করেন৷ তিনি তিনজনকেই চিহ্নিত করেছেন৷ কিন্তু পুলিশ কিছুতেই অভিযোগ নিতে চাইছে না। মহিলার কথায়, ''মাস তিনেক আগে আমি ওষুধ কিনতে গিয়েছিলাম৷ তখন তিনজন আমায় থামায়৷ তারপর পোষাক নিয়ে টানাটানি শুরু করে৷ পরে আমি মহিলা সুরক্ষার জন্য নির্দিষ্ট ফোন নম্বরে ডায়াল করি। ওরা বলে ১০০ তে ফোন করতে। সেটাও করি। তারা বলে থানায় অভিযোগ জানাতে। কিন্তু থানায় গিয়ে ওই জবাব শুনতে হয়েছে৷'' মহিলার অভিযোগ, এরপরেও একাধিকবার তিনি থানায় গিয়েছেন। কিন্তু ফল হয়নি৷ এখন প্রতিদিন অভিযুক্তরা বাড়ি এসে তাঁকে হুমকি দিচ্ছে।
অধিকাংশ রাজ্যে পুলিশের বিরুদ্ধে এফআইআর না নেওয়ার অভিযোগ ওঠে। কিন্তু ধর্ষণ নিয়ে পুরো দেশ এবং উন্নাও নিয়ে বিশেষ করে উত্তর প্রদেশ তোলপাড়, তখন এটাই প্রত্যাশিত ছিল যে, পুলিশের মনোভাবে পরিবর্তন হবে৷ কিন্তু উন্নাও দেখাল, ধর্ষণের অভিযোগ নিয়ে পুলিশ এফআইআর তো নেয়ইনি, তার ওপর অমানবিক ও সংবেদনহীন মন্তব্য করেছে। বোঝা যাচ্ছে, যাই হোক না কেন, যত ভয়ঙ্কার ঘটনা ঘটুক, প্রতিবাদের বন্যা বয়ে যাক, অন্তত উন্নাওতে পুলিশ আছে সেই তিমিরেই।
জিএইচ/এসজি(হিন্দুস্তান টাইমস)