ক্ষমা চাইলেন তাপস পাল
১ জুলাই ২০১৪বিরোধী দলের সমর্থক মহিলাদের ধর্ষণ করার প্রকাশ্য হুমকি দিয়েছিলেন পশ্চিমবঙ্গের কৃষ্ণনগরের তৃণমূল সাংসদ তাপস পাল৷ বিরোধীদের গুষ্টি শেষ করে দেওয়া এবং গুলি করে দেওয়ার পাশাপাশি ছিল তাঁর এই ধর্ষণের হুমকি৷ তৃণমূল কংগ্রেসের তরফ থেকে মঙ্গলবার সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে জানিয়ে দেওয়া হল, দলের নেত্রী এবং পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাপস পালের এই মন্তব্যে ব্যথিত এবং মর্মাহত! তাপস পালকে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে এবং তাঁকে বলা হয়েছে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে৷ এর পরই তাপস পাল চিঠি লিখে দলের প্রত্যেকের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন, যে চিঠির প্রতিলিপি সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া হল তৃণমূলের পক্ষ থেকে৷
কিন্তু সর্বসমক্ষে ক্ষমা চাওয়া হলো কি তাতে? তৃণমূলের সর্বভারতীয় সম্পাদক মুকুল রায় ক্ষুব্ধ হয়ে বললেন, নয় কোটি রাজ্যবাসীর কাছে জনে জনে গিয়ে তো আর ক্ষমা চাওয়া যায় না, তাই চিঠি৷ আর তাপস পালের বিরুদ্ধে আর কি কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেবে না দল?
মুকুল রায় জানালেন, তাপস পালের কাছে জবাবদিহি চাওয়া হয়েছে৷ সেই বক্তব্য জানার পর দল সিদ্ধান্ত নেবে৷ তবে মুকুল রায় রীতিমত গর্বের সঙ্গে দাবি করেন যে সারা দেশে আর একটা দল দেখানো যাবে না, যারা অভিযোগ ওঠার পর এত তাড়াতাড়ি ব্যবস্থা নিয়েছে৷ যদিও তাপস পাল এই মন্তব্য সম্প্রতি করেননি, লোকসভা ভোটের প্রচার চলার সময় করেছিলেন৷ তবু ঘটনাটি জানাজানি হওয়ার দু' ঘণ্টার মধ্যে দলের মুখপাত্র ডেরেক ও ব্রায়েন পরিষ্কার জানিয়েছিলেন, দলীয় সাংসদের এই মন্তব্যকে অনুমোদন করছে না তৃণমূল কংগ্রেস৷ আর ২২ ঘণ্টার মধ্যেই সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে তাপস পালের ক্ষমা চাওয়ার কথা জানিয়ে দেওয়া হলো৷
চিঠিতে কী লিখেছেন তাপস পাল? দলের সবাইকে সম্বোধন করে ইংরেজিতে লেখা ওই চিঠিতে তৃণমূল সাংসদ বলেছেন, ‘এরর অফ জাজমেন্ট' বা সিদ্ধান্তের ভুলের কথা৷ বহু প্ররোচনা সত্ত্বেও এমন মন্তব্য করাটা তাঁর উচিত হয়নি বলে তিনি ক্ষমা চেয়েছেন তাঁর দল, পরিবার এবং পশ্চিমবঙ্গের মানুষদের কাছে, সেই সঙ্গে মহিলাদের কাছেও৷
যদিও যখন তাপস পালের মন্তব্য নিয়ে সারা দেশ জুড়ে হইচই শুরু হয়েছে, দেশের সবকটি টিভি নিউজ চ্যানেলে তীব্র ভাষায় সমালোচিত হচ্ছে একজন সংসদ সদস্যের এমন অশালীন হুমকি, তখন এক টিভি অনুষ্ঠানে তাপস পাল টেলিফোনে জানিয়েছিলেন, তিনি ‘রেপ' বলতে চাননি, তিনি বলেছিলেন ‘রেড'৷ তাঁর ছেলেরা ‘রেড' করে চলে যাবে৷ বহু লোকের হট্টগোলে কথাটা ঠিকমত শোনা যায়নি৷ প্ররোচনার কথাটা প্রথম বলেন তাপস পালের স্ত্রী, পরে যেটিকে সাফাইয়ের মূল সুর হিসেবে বজায় রাখা হলো৷
কিন্তু সারা ভারতের গণমাধ্যমে এখন আলোচনার মূল বিষয় হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গের এই খুনোখুনির রাজনীতি, যেখানে রাজনৈতিক প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য মেয়েদের ধর্ষণ করাটাও একটা হাতিয়ার হয়ে উঠেছে৷ যে পশ্চিমবঙ্গে মধ্যযুগীয় কায়দায় বিরোধী রাজনৈতিক কর্মীদের সালিশি সভার নাম করে ডেকে এনে পিটিয়ে, কুপিয়ে খুন করা হয়৷ যেখানে বিরোধী রাজনীতিকদের তো বটেই, পুলিশের ওপরেও বোমা মারার প্ররোচনা দেন শাসকদলের নেতারা, অথচ প্রশাসন-পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নেয় না!
সঙ্গত কারণেই পাশাপাশি উঠে আসছে কামদুনি, মধ্যমগ্রাম বা পার্ক স্ট্রিটের ধর্ষণ প্রসঙ্গ, যেখানে অপরাধীরা শাস্তি পায়নি, এমনকি অনেকে ধরাও পড়েনি৷ অথচ পুরুলিয়ার কৃষক শিলাদিত্য চোধুরি থেকে শুরু করে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অম্বিকেশ মহাপাত্র বা নাট্যকর্মী সুমন মুখোপাধ্যায়কে বিনা অপরাধে হেনস্থা করতে প্রশাসন এবং পুলিশ অতি-তৎপর! আর এই সব ঘটনা থেকেই স্পষ্ট হচ্ছে এক বিপজ্জনক প্রবণতা৷ গণতন্ত্রের মৌলিক শর্তগুলিকেই অস্বীকার করা হচ্ছে এই রাজ্যে৷ অন্যায় বরং বরদাস্ত করা হচ্ছে, কিন্তু বিরোধিতার গণতান্ত্রিক অধিকারকে মেনে নেওয়া হচ্ছে না৷ ফলে অন্য রাজনৈতিক দলের সমর্থক মহিলাদের ধর্ষণ করার হুমকি দিয়েও, স্রেফ চিঠি লিখে ক্ষমা চাইলেই হয়ে যাচ্ছে!