ধূসর শহর যদি রঙিন করা যেত!
৩১ মে ২০১৯ধূসর বাস্তব থেকে বড় শহরের রঙিন স্বপ্নময় জগত৷ বাড়ির বাইরে সাদামাটা জ্যামিতিক নক্সার কাজ৷ তার উজ্জ্বল রং অতি সাধারণ ভবনকেও আকর্ষণীয় করে তোলে৷ এমন চমকপ্রদ রূপান্তর ঘটাচ্ছেন জার্মানির আলোকচিত্রী ও স্থাপত্যের ছাত্র পাউল আইস৷ তিনি বলেন, ‘‘অনেক এমন ভবন রয়েছে, যা চোখেই পড়ে না৷ নির্বিচারে সেগুলির উপর শহরের বাকি অংশের মতো ধূসর রং করা হয়েছে৷ ফলে এমন বাড়িঘর প্রায় অদৃশ্য হয়ে যায়৷’’
অনেক বড় শহরে ধূসরের নানা হেরফের মনকে বিষণ্ণ করে তোলে বলে মনে করেন পাউল৷ তাই ২০১৫ সালে তিনি রঙিন ছবির এক সিরিজ শুরু করেন৷ বার্লিনে জন্ম হলেও ২১ বছরের এই তরুণ বর্তমানে অস্ট্রিয়ার লিনৎস শহরে উচ্চশিক্ষা নিচ্ছেন৷ শহরের পুরানো তামাকের কারখানা তাঁর কাছে বিশেষভাবে আকর্ষণীয়৷ সংরক্ষিত এই শিল্পকাঠামো বাউহাউস শৈলির কারণে খ্যাতি অর্জন করেছে৷ প্রায় ১০০ বছর আগে সেটি ছিল এক বৈপ্লবিক নির্মাণ শৈলি৷ আজও সেই শৈলি পাউল আইস-কে মুগ্ধ করে৷ তিনি বলেন, ‘‘জানালার মতো খুঁটিনাটি বিষয়গুলির দিকে নজর দিলে বোঝা যাবে, কতটা চতুরভাবে নানা সমস্যার সমাধান করা হয়েছে৷ সে সময় এত সূক্ষ্ম কাঠামো ছিল না৷ এমন প্রচেষ্টা ছিল সম্পূর্ণ নতুন৷ কোনো মহাকাশযান এনে খাড়া করে আজ যদি বলা হয়, এটাই হলো নতুন স্থাপত্য – বিষয়টি অনেকটা সে রকম৷’’
নিজের ছবির মাধ্যমে তিনি সমসাময়িক স্থাপত্যের সমালোচনা করতে চান৷ তাঁর মতে, আধুনিক স্থাপত্যশৈলির মধ্যে পরীক্ষানিরীক্ষা ও সাহসি আইডিয়ার অভাব রয়েছে৷ পাউল আইস মনে করেন, ‘সে সময়কার বড় আকারের নির্মাণ শৈলির ক্ষেত্রে দেখা যায়, সস্তায় বিপুল পরিমাণ নির্মাণের সুযোগ ছিল৷ কিন্তু অগ্রগতির লক্ষ্যে এই চিন্তাধারার সেই প্রবণতা আজ হারিয়ে গেছে৷ স্থাপত্যের ক্ষেত্রে আমাদের কোনো উদ্ভাবন নেই৷’’
কমপক্ষে রঙের ছোঁয়া দিতে পাউল আইস একাই এগিয়ে এসেছেন৷ লিনৎস শহরে একটি পাড়াকে তিনি লাল, হলুদ ও নীল রঙে সাজিয়েছেন৷ নেদারল্যান্ডসের এক চিত্রশিল্পীর কাছ থেকে তিনি সেই প্রেরণা পেয়েছেন৷
তবে বাউহাউস শৈলির স্থপতিদের ঐতিহ্যও তাঁর কাছে অনুকরণীয়৷ ব্রুনো টাউট বার্লিনে শ্রমিকদের বসতির নক্সার যে খসড়া তৈরি করেছিলেন, তাতে আকার-আয়তন, কার্যকারিতার পাশাপাশি রঙেরও একটা ভূমিকা ছিল৷
স্থপতি ও আলোকচিত্রী হিসেবে পাউল আইস পুরানো তামাকের কারখানা ভবনের মৌলিক সংস্কার করছেন৷ কম্পিউটারের পর্দায় তিনি অপ্রয়োজনীয় অংশ সরিয়ে, দৃষ্টিভঙ্গির সংশোধন করে এক একটি অংশ রং করছেন৷ পাউল বলেন, ‘‘বাউহাউস শৈলির মতো মৌলিক রং এখানে ব্যবহার করিনি৷ বরং তার এক আধুনিক ব্যাখ্যা দেবার চেষ্টা করেছি৷’’
ফলে এমন এক মোটিফ স্থাপত্যের ক্ষেত্রে আরও কিছু করার সাহস তুলে ধরছে৷ উচ্চশিক্ষা শেষ করে পাউল আইস নিজেই উদ্ভাবনী ভবনের নক্সা তৈরি করতে চান৷ তাতে রংয়ের বাহার তো থাকবেই৷
ক্রিস্টিয়ান ভাইবেসান/এসবি