নওয়াজের পর ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক
১ আগস্ট ২০১৭পানামা আর্থিক কেলেঙ্কারি মামলায় পাকিস্তানের শীর্ষ আদালতের রায়ে প্রধানমন্ত্রীর পদ খুইয়েছেন নওয়াজ শরিফ৷ এই নিয়ে তিন-তিনবার প্রধানমন্ত্রী হয়েও মেয়াদ ফুরাবার আগেই তাঁকে গদি ছাড়তে হলো৷ বর্তমান রায়ে শাস্তি ঘোষিত হয়নি৷ এমনকি শাস্তি কী হবে – তা নিয়েও ধোঁয়াশা যথেষ্ট৷ সেটা কাটলে বোঝা যাবে নওয়াজ শরিফের রাজনৈতিক ভবিষ্যত কী হবনে৷ পোড় খাওয়া নওয়াজ শরিফ অতীতে অবশ্য তিনবারই ঘুরে দাঁড়িয়েছেন৷ বসেছেন প্রধানমন্ত্রীপদে৷ তাই এবার তিনি কী করেন, সেটাই এখন দেখার৷ তবে পাকিস্তানের এই রাজনৈতিক নেতৃত্ব পরিবর্তনে এখনও পর্যন্ত মুখ খোলেনি মোদী সরকার৷ জানায়নি কোনো সরকারি প্রতিক্রিয়া৷ শুধুমাত্র পাকিস্তানের পরিস্থিতির দিকে চোখ রেখে চলছে নতুন দিল্লি৷ সে যাই হোক, আপাতত দিল্লি-ইসলামাবাদ সম্পর্কে কোনো হেরফের বলে বলে মনে করছে না দিল্লির কূটনৈতিক মহল৷
এই প্রসঙ্গে পাকিস্তান-বিশেষজ্ঞ সাংবাদিক ইন্দ্রানী বাগচি ডয়চে ভেলেকে জানান, পাকিস্তানে যে সংকটটা হয়েছে, তাতে দু'দেশের সম্পর্কে খুব যে বেশি প্রভাব পড়বে তা মনে করি না৷ আসলে পাকিস্তানের ভারত-নীতি নিয়ন্ত্রণ করে সেদেশের সেনা কর্তৃপক্ষ৷ রাজনৈতিক নেতৃত্ব সেখানে গৌণ৷ তাই এর পরোক্ষ প্রভাব দেখবো দু'টো জায়গায়৷ আগামী নির্বাচন, অর্থাৎ আগামী বছরের মাঝামাঝি পাকিস্তানে যে সাধারণ নির্বাচন হবার কথা৷ সেটা যদি পিছিয়ে যায়৷ তাহলে সেনাশক্তি বেড়ে যাবে৷ সেটা এক রকমের নেতিবাচক প্রভাব৷ অতীত ইতিহাস বলছে, সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণ বেড়ে গেলে সন্ত্রাসী তত্পরতাও বেড়ে যায়৷ সেনাবাহিনী তখন বোঝাতে চেষ্টা করে যে, দ্যাখো, ভারত কীভাবে পাকিস্তানের ক্ষতি করার চেষ্টা করছে৷ একটা মেকি জাতীয়তাবাদ জাগাবার চেষ্টা করতে পারে৷ এছাড়া অন্য কোনো প্রভাব পড়বে বলে মনে হয় না, বললেন সাংবাদিক ইন্দ্রানী বাগচি৷
উল্লেখ্য মঙ্গলবারই দক্ষিণ কাশ্মীরের ফুলওয়ামা এলাকায় লস্কর-ই-তৈয়বার শীর্ষ জঙ্গি আবু দুজানা ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে নিহত হয়৷ দুজানাসহ আরো কিছু জঙ্গি একটি বাড়িতে লুকিয়ে আছে – গোয়েন্দা সূত্রে এ খবর পেয়ে নিরাপত্তা বাহিনী পুরো এলাকা ঘিরে ফেলে৷ বোমা মেরে উড়িয়ে দেয় বাড়িটি৷ উদ্ধার করা হয় আবু দুজানার মৃতদেহ৷ আবু কাশিম নিহত হবার পর ২০১৫ সাল থেকে লস্কর-ই-তৈয়বার নেতা ছিল দুজানা৷
এখন নওয়াজ শরিফের জায়গায় প্রধানমন্ত্রী কে হবেন? যিনিই হন, তিনি অবশ্যই হবেন সংখ্যাগরিষ্ট পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ দলের এবং নওয়াজ শরিফের মনোনীত বিশ্বস্ত কেউ৷ সেক্ষেত্রে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে প্রথমেই উঠে আসছে পাঞ্জাব প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের ভাই শাহবাজ শরিফের নাম৷ কিন্তু তিনি যেহেতু সংসদ সদস্য নন, তাই ভোটে জিতে প্রধানমন্ত্রী পদে না আসা পর্যন্ত কিছু দিনের জন্য অন্তর্বর্তি প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন নওয়াজ শরিফের অতি কাছের লোক প্রাক্তন পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী শাহিদ আব্বাসি৷ তবে পাঞ্জাবে ক্ষমতা ছাড়লে তাঁর জায়গায় কে আসবেন, তাই নিয়েও রয়েছে বিস্তর হিসেব-নিকেশ৷ সেখানেও এমন একজনকে বসাতে হবে যিনি নওয়াজ শরিফের পরিবারতন্ত্রকে নিরাপদ রাখতে পারবেন৷ সেক্ষেত্রে সম্ভাব্য প্রার্থী শাহবাজ শরিফের ছেলে হামজা শাহবাজ৷
প্রধানমন্ত্রী যিনিই হন, শেষপর্যন্ত সেনা এবং আইএসআই-এর হাত ধরেই তাঁকে চলতে হবে৷ নওয়াজ শরিফ যখন প্রধানমন্ত্রী হন, ভারতের সঙ্গে একটা ইতিবাচক সম্পর্কের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন তিনি৷ দুই প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত রসায়নে দিল্লির মনে কিছুটা আশা জেগেছিল৷ নরেন্দ্র মোদীর শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে দিল্লি আসেন তিনি৷ নওয়াজ শরিফের জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানাতে অনির্ধারিত সফরে মোদী ছুটে গিয়েছিলেন লাহোরে৷ কিন্তু সেইসব শুভেচ্ছার বাস্তব প্রতিফলন হয়নি৷ উলটে পাঠানকোট ও উরিতে হয়েছিল জঙ্গি হামলা৷ মোট কথা, এখন ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক তলানিতে৷ পারস্পরিক যোগাযোগ নেই বললেই হয়৷ এটাই আপাতত চলবে, এমনটাই মনে করছে দিল্লির সাউথ ব্লক৷