1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ভারতে ম‌ুসলিম হত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ

শীর্ষ বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতা
২৯ জুন ২০১৭

হিন্দুত্ববাদীদের হিংস্র, সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষের বিরুদ্ধে ক্রমশ জোটবদ্ধ হচ্ছে, রুখে দাঁড়াচ্ছে ভারতের নাগরিক সমাজ৷ তাদেরই প্রতিবাদ হলো দেশজুড়ে৷

https://p.dw.com/p/2fc6Q
মুসলিম হত্যার প্রতিবাদে কলকাতায় বিক্ষোভছবি: DW/S. Bandopadhyay

ভারতে গরু জবাই সরকারিভাবে নিষিদ্ধ করে দেওয়ার আগে থেকেই ছড়াতে শুরু করেছিল বিদ্বেষ৷ যাঁরা গরুর মাংস খান, তাঁরা আদতে হিন্দু ধর্মের শত্রু— এমন এক বিকৃত, বিদ্বেষী ধারণা ক্রমশই জোরদার করে তোলা হচ্ছিল দেশের বিভিন্ন অংশে৷ উত্তরপ্রদেশের মোহাম্মদ আখলাখকে পিটিয়ে মারার ঘটনা আজও দগদগে ক্ষতের মতো হয়ে আছে ভারতের ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শের শরীরে৷ আখলাকের ঘটনায় পুলিশ প্রশাসনের প্রতিক্রিয়া ছিল বড় বিচিত্র৷ তারা আখলাকের রান্নাঘর থেকে মাংসের নমুনা সংগ্রহ করে ফরেনসিক পরীক্ষা করিয়েছিল এটা নিশ্চিত করতে যে, ওটা আদতে কীসের মাংস ছিল৷ না, প্রমাণ হয়নি ওটা গরুর মাংস ছিল৷ কিন্তু যদি প্রমাণ হতো?‌ তা হলে কি একজন মানুষকে পিটিয়ে মারা বৈধতা পেয়ে যেতো?‌ স্রেফ সে গরুর মাংস খাচ্ছিল বলে!

Indien Kalkutta Straßenszene
ছবি: DW/S. Bandopadhyay

এর পর সারা দেশ জুড়েই গো-হত্যা নিষিদ্ধ করার সরকারি ফরমান‌ ওই উগ্রবাদী অপশক্তিকেই যে আরও উৎসাহিত করেছে, তার প্রমাণ গত সপ্তাহে জুনায়েদ খানের হত্যা৷ ঈদের বাজার করে বাড়ি ফিরছিল জুনায়েদ৷ ভাই এবং পরিবারের লোকেদের সঙ্গে৷ প্রথমে তাঁদের ‘‌গোখাদক’ এবং ‘‌দেশদ্রোহী’ বলে গালি-গালাজ করা হয়৷ তার পর শুরু হয় প্রবল মারধর৷ একটা সময় ছুরি দিয়ে কোপানো হয় ১৬ বছরের জুনায়েদকে, ফেলে দেওয়া হয় চলন্ত ট্রেন থেকে৷ বুধবার পর্যন্ত চারজন গ্রেপ্তার হয়েছে এই ঘটনায়, যাদের একজন দিল্লির সরকারি কর্মী৷ খোঁজ চলছে পঞ্চমজনের, যে জুনায়েদকে ছুরি মেরেছিল৷

দেশের নাগরিক সমাজ অত্যন্ত বিচলিত হয় এই ঘটনায়৷ এতদিন নানা পর্যায়ে, টিভিতে বলে, খবরের কাগজে লিখে যার প্রতিবাদ চলছিল, এবার সেটাই নেমে আসে রাজপথে৷ সাবা দেওয়ান নামে এক তথ্যচিত্র পরিচালক প্রথম ডাক দেন, বুধবার সন্ধেয় দিল্লির যন্তরমন্তরে নীরব প্রতিবাদে সামিল হতে৷

 

নাইন ইলেভেনের পর অ্যামেরিকার শান্তিকামী মানুষ যে যুদ্ধবিরোধী স্লোগান নিয়ে রাস্তায় নেমেছিলেন, সেই ‘‌নট ইন আওয়ার নেম’-এর ছায়ায় পরবর্তীতে ‘নট ইন মাই নেম’ শিরোনামে বেশ কিছু আন্দোলন চাঙ্গা হয়৷ সেই ‘‌নট ইন মাই নেম’ আবারও পুনরুজ্জীবিত হয়, হয়ে ওঠে সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ-বিরোধী নাগরিক প্রতিবাদের নয়া মন্ত্র৷ স্পষ্টভাষায় জানিয়ে দেওয়া, এই সন্ত্রাস, এই হত্যায় আমার সায় নেই, আমি নেই ওই দলে, আমার নামে যেন এই অপরাধ বৈধতা না পায়৷ নট ইন মাই নেম৷

কলকাতার সমাবেশের অন্যতম উদ্যোক্তা যা বললেন

দিল্লি ছাড়াও পাটনা, পুণে, লখনউ, এলাহাবাদ, চণ্ডীগড়, জয়পুর, হায়দরাবাদ, বেঙ্গালুরু, চেন্নাই, কোচি, অর্থাৎ দেশের সব বড় শহরে এবং কলকাতায় বুধবার ধ্বনিত হয়েছে এই প্রতিবাদ৷ কলকাতার সমাবেশের যিনি অন্যতম উদ্যোক্তা, সেই শর্মিষ্ঠা দত্তগুপ্ত জমায়েতের আগে ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছিলেন, যাঁরা শারীরিকভাবে উপস্থিত থাকতে পারছেন না, তাঁরাও কবিতা পাঠিয়ে, লিখিত বক্তব্য পাঠিয়ে এই প্রতিবাদে শামিল হচ্ছেন৷ আর বুধবার বিকেলে দক্ষিণ কলকাতার এক শপিং কমপ্লেক্সের সামনে এই সমাবেশে অন্তত হাজার খানেক মানুষকে দেখা গেল, যাঁরা এসেছেন বিবেকের তাগিদে৷ লেখক, কবি, শিল্পীরা ছাড়াও ছিলেন ধৃতিমান চট্টোপাধ্যায়, অপর্ণা সেন, অঞ্জন দত্ত'র মতো বিশিষ্টরা, যারা ভারতের ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শের পক্ষে সরব হয়েছিলেন৷ ঝিরঝিরে বৃষ্টি অগ্রাহ্য করে তাঁরা হাজির থাকলেন আগাগোড়া৷

Indien Proteste Not In My Name
দিল্লিতেও বিক্ষোভ হয়েছেছবি: Getty Images/AFP/C. Khanna

সোশ্যাল মিডিয়াতেও এদিন ভারতের অন্যান্য শহরের এই প্রতিবাদ সমাবেশের স্বতস্ফূর্ত, প্রাণবন্ত চেহারা দেখা গেছে৷ সব ধর্মের মানুষ যেখানে এগিয়ে এসে বলেছেন, এই সাম্প্রদায়িক হিংসা আর বিদ্বেষ চলবে না৷ নট ইন মাই নেম!

প্রিয় পাঠক, আপনি কিছু বলতে চাইলে লিখুন নীচে মন্তব্যের ঘরে...