বাল্যবিবাহ রোধ আইন পাশ না করার দাবি
২ ডিসেম্বর ২০১৬মন্ত্রিসভায় পাশ হলেও, এখন নিয়ম অনুযায়ী আইনটি সংসদে পাশের জন্য বিল আকারে উত্থাপন করা হবে৷ আর বিল পাশ হলে তবে এটি আইনে পরিণত হবে৷ জানা গেছে, প্রস্তাবিত এই আইনে মেয়েদের বিয়ের সর্বনিম্ন বয়স ১৮ এবং ছেলেদের ২১ বছর রাখা হয়েছে৷ তবে আইনে বিশেষ বিবেচনায় মেয়েদের ১৮ বছরের কম বয়সেও বিয়ের সুযোগ রাখা হয়েছে৷ এক্ষেত্রে অবশ্য পিতা-মাতা এবং আদালতের অনুমতি লাগবে৷
মার্কিন মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বা এইচআরডাব্লিউ মনে করে, ঐ আইন পাস হলে তা মেয়েদের আরও বেশি বাল্যবিয়ের ঝুঁকির মুখে ঠেলে দেবে৷ তাই রাজনৈতিক চাপের কাছে নতি স্বীকার না করে ঐ বিল বাতিল করা সংসদ সদস্যদের দায়িত্ব৷
এইচআরডাব্লিউ-র উইমেন রাইটস বিভাগের জ্যেষ্ঠ গবেষক হিদার বার শুক্রবার এক বিবৃতিতে বলেন, ‘‘সরকারের এই উদ্যোগ বাংলাদেশকে অনেক পেছনে ঠেলে দেবে৷ নতুন আইনের খসড়ায় ২১ বছরের কম বয়সি ছেলে ও ১৮ বছরের কম বয়সি মেয়েদের অপ্রাপ্তবয়স্ক বলা হলেও, আইন শিথিলের বিশেষ প্রেক্ষাপটে ন্যূনতম কোনো বয়সের কথা বলা হয়নি৷ শুধু তাই নয়, খসড়া আইনে বাল্যবিবাহে বন্ধে কঠোর শাস্তির কথা বলা হলেও অপ্রাপ্তবয়স্করা বিয়ে করলে সর্বোচ্চ ১৫ দিনের আটকাদেশ বা পাঁচ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে৷ ঐ ১৫ দিনের আটকাদেশের মধ্য দিয়েই কিছু বাল্যবিয়ে বৈধতা পেয়ে যাবে, যা বর্তমান আইনের চেয়েও বড় দুর্বল৷''
তিনি আরো বলেন, ‘‘আইন শিথিল করা হলে বাল্য বিয়ে বন্ধের লড়াইয়ের পথে তা একটি বড় প্রতিবন্ধকতা তৈরি করবে৷ এই আইন সারা দেশে অভিভাবকদের এই বার্তা দেবে যে, অন্তত কিছু ক্ষেত্রে সরকার বাল্য বিয়েকে যৌক্তিক মনে করছে৷''
নতুন এই আইনের পক্ষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, ‘‘আমাদের দেশে তো ১০-১১ বছরেও পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করে ‘প্রেগনেন্ট' হয়ে যায়৷ এ সমস্যাগুলো থাকার ফলেই একটা ব্যবস্থা রেখেছে সরকার৷''
সরকারের এই যুক্তিতে অবশ্য উদ্বেগ প্রকাশ করে এইচআরডাব্লিউ বলেছে, ‘‘এবার তো ধর্ষণের কারণে কোনো মেয়ে গর্ভবতী হলে, তাকেও এই আইন দেখিয়ে ধর্ষকের সঙ্গে বিয়েতে বাধ্য করা হতে পারে৷''
বাংলাদেশের নারী অধিকার, মানবাধিকার ও উন্নয়ন সংগঠনগুলো প্রস্তাবিত আইনের ঐ বিশেষ ধারা বাতিলের দাবিতে ঢাকায় মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছে৷ তারা এই প্রস্তাবিত আইনের বিরোধিতা করে ধারাবাহিক কর্মসূচিও ঘোষণা করা হয়েছে৷ প্রয়োজনে তারা এই আইনের বিরুদ্ধে আদালতে যাওয়ার কথা বলছেন৷
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভানেত্রী আয়শা খানম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা আশা করেছিলাম, নতুন আইনটি পুরনো আইনের তুলনায় অনেক ভালো হবে৷ কিন্তু ঘটেছে উল্টো৷ এটি আগের আইনের চেয়ে দুর্বল এবং ত্রুটিপূর্ণ৷ এই আইনের কারণে বাল্যবিবাহ বেড়ে যাবে৷ নারী তার শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পুষ্টি এবং ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে পিঠিয়ে পড়বে৷ আমরা এরইমধ্যে আমাদের কথা সংবাদ সম্মেলন করে সরকারকে জানিয়েছি৷ আমরা নারীবান্ধব এবং নারীর ক্ষমতায়নের জন্য যিনি অনেক কিছু করেছেন, সেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আবেদন করছি আইনটি পাশ না করতে৷ আমাদের আশা, তিনি আমাদের আবেদন শুনবেন৷''
তিনি আরো বলেন, ‘‘এই আইন হলে তা হবে বুমেরাং-এর মতো৷ তাই আমি মনে করি, এই আইন পাশ করা একটি আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত হবে৷''
অন্যদিকে, বিষয়টি নিয়ে কয়েকজন সরকার দলীয় সংসদ সদস্যের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তারা কথা বলতে রাজি হননি৷
ইউনিসেফ-এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশে বাল্যবিবাহের হার সবচেয়ে বেশি৷ ১৮ বছর বয়স হওয়া আগেই বাংলাদেশের ৬৬ শতাংশ মেয়ের বিয়ে হয়ে যায়৷
তবে ওয়াশিংটন ভিত্তিক ‘থিংক ট্যাংক' ইন্টারন্যাশনাল ফুড পলিসি রিচার্স ইন্সটিটিউট (আইএফপিআরআই)-এর এক গবেষণায় গত সপ্তাহে বলা হয়, বাংলাদেশে গত দুই দশকে বাল্যবিবাহের হার শতকরা ৬২.৩ ভাগ থেকে কমে ৪৩ ভাগ হয়েছে৷
বন্ধুরা, এ বিষয়ে আপনার কী বলার আছে? লিখুন নীচে, মন্তব্যের ঘরে৷