1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বাল্যবিবাহ কমলেও আশঙ্কা রয়েই গেছে

২৫ নভেম্বর ২০১৬

বাংলাদেশে গত দুই দশকে বাল্যবিবাহ উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে৷ এই সময়ে বাল্যবিবাহের হার শতকরা ৬২ দশমিক ৩ ভাগ থেকে কমে ৪৩ ভাগ হয়েছে৷ ওয়াশিংটনভিত্তিক থিংক ট্যাংক আইএফপিআরআই-এর এক গবেষণায় এই তথ্য বেরিয়ে এসেছে৷

https://p.dw.com/p/2TFln
Bangladesch Kinderheirat
৩২ বছরের হাসামুর রহমানের সঙ্গে ২০১৫ সালে ১৫ বছরের নওশিন আক্তারের বিয়ে হয়েছিলছবি: Getty Images/A. Joyce

‘ইন্টারন্যাশনাল ফুড পলিসি রিচার্স ইন্সটিটিউট’ আইএফপিআরআই-এর গবেষণায় দেখা যায়, ১৯৯৬ থেকে থেকে ২০০৫ সালে বাংলাদেশে ১৫ বছরের কম বয়সি মেয়েদের বিয়ের হার ছিল শকরা ১৫ দশমিক ৯ ভাগ, ১৫ থেকে ১৮ বছর বয়সিদের বিয়ের হার ছিল ৪৬ দশমিক ৫ ভাগ৷ সব মিলিয়ে বাল্য বিবাহের হার ছিল শতকরা ৬২ দশমিক ৩ ভাগ৷

আর ২০০৬ সাল থেকে ২০১৫ সালে ১৫ বছরের কম বয়সি মেয়েদের বিয়ের হার শকরা ৫ দশমিক ৪ ভাগ, ১৫ থেকে ১৮ বছর বয়সিদের বিয়ের হার ৩৭ দশমিক ৮ ভাগ৷ সব মিলিয়ে বাল্য বিবাহের হার শতকরা ৪৩ দশমিক ২ ভাগ৷

দৃশ্যত বাল্যবিয়ের হার কমলেও তাতে আত্মতৃপ্তির তেমন কোনো কারণ নেই৷ গত দুই দশকে ১৫ বছরের কম বয়সিদের বিবাহের হার উল্লেখযোগ্যভাবে কমলেও মধ্যবর্তী ১৫ থেকে ১৮ বছর বয়সিদের বিয়ের হার বেশি কমেনি৷ মাত্র ১০ভাগের মতো কমেছে৷ বাল্যবিবাহ কমার কারণ হিসেবে দেখানো ১৫ বছর বয়সিদের বিবাহের হার উল্লেখযোগ্য হারে কমা বাল্যবিবাহের হার কমায় ভূমিকা রেখেছে৷ 

এই গবেষণা প্রতিবেদনটি এমন এক সময়ে প্রকাশ করা হলো যখন বাংলাদেশ সরকার  বিশেষ ক্ষেত্র ছাড়া ১৮ বছরের আগে মেয়েদের বিবাহ নিষিদ্ধ আইনের খসড়া অনুমোদন করেছে৷ বাল্যবিবাহ রোধ আইন-২০১৬-এর ওই খসড়ায় বলা হয়েছে মেয়েদের বিয়ের সর্বনিম্ন বয়স ১৮ বছর৷ তবে পিতা-মাতা ও আদালতের অনুমতিসাপেক্ষে বিশেষ বিবেচনায় ১৮ বছরের নীচেও বিয়ে বৈধ হবে৷ আর ছেলেদের বিয়ের বয়স ২১ বছর৷

আইএফপিআরআই এই গবেষণাটি পরিচালনা করেছে ২০১৫ সালে বাংলাদেশ সরকারের হাউজহোল্ড সার্ভের তথ্য ব্যবহার করে৷ আর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অনুরোধে তারা এই গবেষণাটি করে ২০ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে জমা দেয়৷

২০১৫ সালের হাউজহোল্ড সার্ভে করা হয় দেশের সাতটি বিভাগ ঢাকা, বরিশাল, খুলনা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, রংপুর ও সিলেটের ৬,৫০০ পরিবারের কাছ থেকে নেয়া তথ্যের ওপর ভিত্তি করে৷

গবেষণায় যে বিষয়টি নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে তা হলো, অনিরাপদ মাতৃত্ব৷ বাংলাদেশের গর্ভবর্তী মায়েদের শতকরা ৬০ ভাগই কিশোরী৷ ফলে সন্তান জন্ম দেয়ার সময় নানা জটিলতার সৃষ্টি হয়৷ তারা কম ওজন এবং এবং অপুষ্ট শিশু জন্ম দেন৷ আর কিশোরী বয়সে বিয়ে হওয়ার কারণে তাদের পড়াশুনা ছেড়ে দিতে হয়৷ পরবর্তীতে তারা কর্মক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়ে নারীর ক্ষমতায়নে ভূমিকা রাখার ক্ষেত্রেও পিছিয়ে পড়ে৷ এই মায়েরা নিজগৃহে নির্যাতনের শিকার হন৷ অর্থনৈতিক , সামাজিক এবং পারিবারিকভাবে তাদের সম্ভাবনার মৃত্যু ঘটে৷

অনিরাপদ মাতৃত্ব আরো বেড়ে যাবে: এলিনা খান

নারী নেত্রী এবং মানবাধিকার কর্মী অ্যাডভোকেট এলিনা খান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘মানুষের মধ্যে এক ধরণের সচেতনতা বেড়েছে আর সে কারণেই ১৫ বছর বয়সের নীচে মেয়েদের বিবাহের হার উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে৷ কিন্তু প্রধান আশঙ্কার জায়গা হলো, ১৫ থেকে ১৮ বছর বয়সিদের ক্ষেত্রে ইতিবাচক পরির্তন তেমন হয়নি৷ আর এই বয়সের মেয়েদের প্রধানত বাংলাদেশে নিরাপত্তার কারণে অভিভাবকরা বিয়ে দিয়ে দেন৷''

তিনি বলেন, ‘‘সরকার নতুন যে আইন অনুমোদন করেছে তাতে এই আশঙ্কা আরো বেড়ে যাবে৷ বিশেষ ব্যবস্থায় অভিভাবকরা আদালতের অনুমতি নিয়ে ১৮ বছরের নিচের মেয়েদেরও বিয়ে দিতে পারবেন৷  এই আইনের অপব্যাহার হবে৷ এতে ওই ধরণের বিবাহ বেড়ে যাবে এবং অনিরাপদ মাতৃত্ব আরো বেড়ে যাবে, কারণ, বিয়ে বৈধ হলে মাতৃত্ব অবৈধ করা যায়না৷’’

১৫ থেকে ১৮ বছর বয়সের মেয়েদের গর্ভধারণ খুবই ঝুকিপূর্ণ: ডা. হাসিনা

তিনি মনে করেন, ‘‘এর ফলে নারী উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হবে৷ শিক্ষা ও ক্ষমতায়নের প্রশ্নে নারীর পিছিয়ে পড়ার আশঙ্কা আছে৷''

আর ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের শিশু সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. কানিজ হাসিনা ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘১৫ থেকে ১৮ বছর বয়সের মেয়েদের গর্ভধারণ খুবই ঝুঁকিপূর্ণ৷ এই বয়সে গর্ভধারণ নানা শারীরিক জটিলতার সৃষ্টি করে৷ তা দীর্ঘমেয়াদে মায়ের শরীরের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে৷ এর ফলে অপুষ্ট এবং কম ওজনের শিশু জন্ম নেয়৷ ওই শিশু নানান জটিল রোগে আক্রান্ত হয়৷''

তাই তাঁর পরামর্শ, ‘‘ওই বয়সে মাতৃত্ব বা গর্ভধারণ কোনোভাবেই উৎসাহিত করা ঠিক না৷’’

প্রিয় পাঠক, আপনি কিছু বলতে চাইলে নীচে মন্তব্যের ঘরে লিখুন৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান