জামায়াত কি টিকে থাকবে?
১১ মে ২০১৬বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ ইসলামি রাজনৈতিক দল জামায়াতের ভবিষ্যত নিয়ে মিশ্র চিন্তা করছেন বিশ্লেষকরা৷ জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রহমান মনে করেন, ‘‘জামায়াতের হাল ধরবে তরুণ নেতৃত্ব৷ তবে জামায়াত নামটি আর থাকবে না৷ আমার মন হয়, তারা হয়ত এবার নতুন নামে দল করবে৷''
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার মনে করেন, ‘‘জামায়াত আবার ঘুরে দাঁড়ালে বিস্মিত হওয়ার কিছু থাকবে না৷ কারণ অতীতেও জামায়াত নিষিদ্ধ হয়েছিল৷ তবে এটা নির্ভর করবে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির ওপর৷''
যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরুর সময় জামায়াতে ইসলামী এবং তাদের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র শিবির ব্যাপক তৎপর ছিল৷ তারা হরতাল ডেতে মাঠে থাকত এবং প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করত৷ ট্রাইব্যুনালে জামায়াত নেতা মাওলানা দেলাওয়ার হোসেন সাঈদীর মৃত্যুদণ্ডের রায়ের পর, তারা দেশে ব্যাপক সহিংসতা এবং তাণ্ডব চালায়৷ কিন্তু ধীরে ধীরে তাদের আন্দোলন এখন প্রতিবাদ এবং কর্মসূচি দেয়ার মধ্যেই সীমবাদ্ধ হয়ে পড়েছে৷^
ড. তারেক শামসুর রহমানের কথায়, ‘‘জামায়াতের তরুণ নেতৃত্বের মধ্যে উপলব্ধি এসেছে৷ তারা বুঝতে পারছে য, যুদ্ধাপরাধের দায় মাথায় নিয়ে রাজনীতিতে সক্রিয় থাকা যাবে না৷ জামায়াতের একাত্তর পরবর্তী প্রজন্ম জামায়াতের একাত্তরের দায় নিতে চাইছে না৷'' তাই তিনি মনে করেন, ‘‘জামায়াতে ইসলামী নামে সংগঠনটি থাকবে না৷ কারণ জামায়াতের নিবন্ধন ইতমধ্যেই বাতিল হয়েছে৷ অর্থাৎ আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে হলে নতুন নামে দল করতে হবে৷''
জামায়াতে ইসলামী অতীতে জাতীয় সংসদে উল্লেখযোগ্য সংখক আসন পেয়েছে৷ তাদের দু'জন নেতা মন্ত্রীও হয়েছেন৷ বিশেষ করে বিএনপির সঙ্গে জোট বেধে নির্বাচন করলে বিএনপি এবং জামায়াত উভয়েই লাভবান হয়৷ সেই প্রেক্ষাপটে জামায়াতের নতুন নেতৃত্বে যারা আসবেন, তাদের মাথায় কি এ কথা থাকবে? এমন প্রশ্নের জবাবে ড. তারেক বলেন, ‘‘যদি জামায়াত নতুন নামে আত্মপ্রকাশ করে, তাহলে তাদের রাজনীতির শত্রু-মিত্র কারা হবে তা এখনই নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না৷
জামায়াতের ভবিষ্যৎ প্রশ্নে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘জামায়াত নামে দলটি টিকে না থাকলেও তাদের যে ভাবাদর্শ, তা সহজে যাবে বলে মনে হয় না৷ কারণ বাংলাদেশে স্বাধীনতার বিরোধীতা বা যুদ্ধাপরাধের পক্ষে সামাজিক উপাদান আছে৷''
তবে তাঁর কথায়, ‘‘জামায়াতের ভবিষ্যৎ অনেকটাই তাদের বিদেশি বন্ধুদের সহায়তা এবং সমর্থনের ওপর নির্ভর করে৷ এখন যা অবস্থা, তাতে অভ্যন্তরীণ শক্তি দিয়ে জামায়াতের দাঁড়ানো কঠিন৷''
জামায়াতের এই অবস্থায় আওয়ামী লীগ রাজনৈতিকভাবে বা ভোটের হিসেবে কতটা লাভবান হবে? এ প্রশ্নের উত্তরে ড. মজুমদার বলেন, ‘‘এটা ঠিক যে শেখ হাসিনা যুদ্ধাপরাধের বিচারে দৃঢ়তা দেখিয়েছেন৷ এখন মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে হবে. মুক্তিযুদ্ধের চেতনা একক কোনো দলের নয়৷ এটা করতে পারলে আওয়ামী লীগ বা শেখ হাসিনা তো বাহবা পাবেনই৷''
বন্ধু, শীর্ষ নেতাদের প্রায় কেউই নেই৷ এ অবস্থায় জামায়াত কি টিকে থাকবে? লিখুন নীচের ঘরে৷