যে কোনো সময় নিজামীর ফাঁসি
১০ মে ২০১৬জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামীর রিভিউয়ের পূর্ণাঙ্গ রায় ট্রাইব্যুনাল হয়ে কারাগারে গেছে এবং নিজামীকে তা পড়ে শোনানো হয়েছে৷ এরপর রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাইলেই কেবল ‘যুদ্ধাপরাধী' নিজামীর মৃত্যুদণ্ড রহিত হতে পারে বলে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ডয়চে ভেলেকে জানান৷ নিজামীর আইনজীবী অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম ইতিমধ্যে ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ‘‘নিজামী প্রাণ ভিক্ষা চাইবেন না৷'’
তিনি বলেন, ‘‘নিজামী তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করার সময় জানিয়েছেন, জীবন-মরণের মালিক আল্লাহ৷ প্রাণভিক্ষা চাওয়ার প্রশ্নই আসে না৷’’ তবে তার পরিবারের সদস্যরা এখন আর সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলছেন না৷
কারাসুত্র জানিয়েছে, ‘‘মঙ্গলবারের মধ্যেই একজন ম্যাজিস্ট্রের সামনে নিজামী প্রাণভিক্ষা চাইবেন কিনা তা জানতে চাওয়া হবে৷’’
যে কোনো সময় ফাঁসি
এ প্রসঙ্গে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘নিজামী যদি রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চান, তাহলে তার প্রক্রিয়া শেষ হতে কিছুটা সময় লাগবে৷ আর না চাইলে সরকার যে কোনো সময় ফাঁসি কার্যকর করতে পারবে৷ এরজন্য কোনো নির্দিষ্ট সময় নেই৷ আর প্রাণভিক্ষারও নির্দিষ্ট কোনো সময় নেই৷' নিয়ম অনুযায়ী কারা কর্তৃপক্ষ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে এই আবেদন রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠান৷’’
মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে নিজামীর রিভিউ আবেদন খারিজের রায় সোমবার প্রকাশ করা হয়৷ সোমবারই সেই রায় ট্রাইব্যুনাল হয়ে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়৷ রাতে নিজামীকে তা পড়ে শোনানো হয়৷
এর আগে রবিবার নিজামীকে কাশিমপুর কারাগার থেকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নেয়া হয়৷ গত ৫ মে নিজামীর রিভিউ আবেদন খারিজ করে দেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ৷ প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের চার সদস্যের এই বেঞ্চের অন্য সদস্যরা হলেন বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী৷
নিজামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় পাবনায় হত্যা, ধর্ষণ, বুদ্ধিজীবী হত্যা ও গণহত্যার দায়ে ২০১৪ সালের ২৯ অক্টোবর নিজামীকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডের রায় দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল৷ নিজামী আপিল করলে ২০১৫ সালের ৯ সেপ্টেম্বর আপিল শুনানি শুরু হয়৷ গত ৬ জানুয়ারি আপিলে ফাঁসির আদেশ বহাল রাখে আপিল বিভাগ৷ এরপর গত বৃহস্পতিবার রিভিউ আবেদনও খারিজ হয়ে যায়৷
২০১০ সালের ২৯ জুন ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের একটি মামলায় মতিউর রহমান নিজামীকে আটক করা হয়৷ পরে ২ আগস্ট তাকে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়৷ নিজামী একাত্তরে ‘আলবদর' প্রধান ছিলেন৷ আর তিনিই এখন বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামীর সর্বোচ্চ নেতা৷ ১৯৯১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় তিনি শিল্পমন্ত্রী ছিলেন৷
প্রসঙ্গত, নিজামী আরো একটি মামলায় ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি৷ ২০১৪ সালের ৩০ জানুয়ারি চট্টগ্রামে ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলায় মতিউর রহমান নিজামীসহ ১৪ জনের মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেয় আদালত৷
২০০৪ সালের ১ এপ্রিল গভীর রাতে চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেড বা সিইউএফএল জেটিঘাটে ধরা পড়ে ১০ ট্রাক অস্ত্র৷ নিজামী তখন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের শিল্পমন্ত্রী ছিলেন৷
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের বিরোধীতা
ওদিকে নিজামীর ফাঁসি স্থগিত রাখার আহ্বান জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ৷ সোমবার এক বিবৃতির মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ এই মামলাটির বিচার আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী না হওয়া এবং ন্যায় বিচার নিয়ে প্রশ্ন থাকায় রায় কার্যকর করা থেকে বাংলাদেশ সরকারকে বিরত থাকার জন্য বলে তারা৷
সংস্থাটির এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক ব্র্যাড অ্যাডামস বলেন, ‘‘হিউম্যান রাইটস ওয়াচ সব ধরনের মৃত্যুদণ্ডের বিরোধিতা করে৷ এটি একটি অমানবিক ও নিষ্ঠুর শাস্তি৷ এর মাধ্যমে দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তির কোনো অনুশোচনা বা পরিবর্তন হয় না৷'’
বন্ধু, আপনি কি এই মৃত্যুদণ্ডকে সমর্থন করেন? জানান আমাদের, লিখুন নীচের ঘরে৷