1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘নদী দখলদাররা ক্রাইম করছে, তাদের জেলে পাঠাতে হবে’

২ জুন ২০২৩

দখল আর দূষণে পর্যুদস্ত বাংলাদেশের নদ নদী৷ মাঝে মধ্যেই কিছু উচ্ছেদ হলেও পরক্ষনেই তা আবার দখল হয়ে যাচ্ছে৷ এ যেন চোর পুলিশ খেলা৷ হাইকোর্টের নির্দেশে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন এই নদীগুলোর অভিভাবক৷

https://p.dw.com/p/4S6QG
জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী৷
জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী৷ ছবি: Privat

অভিভাবক হিসেবে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনকী করছে? এসব বিষয়ে ডয়চে ভেলের সঙ্গে কথা বলেছেন কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী৷

ডয়চে ভেলে : বাংলাদেশের নদীগুলোর বাস্তব অবস্থা কী?

ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী : বাংলাদেশে বর্তমানে ৯০০ নদী আছে৷ অনেক নদী যেভাবে থাকা দরকার সেভাবেই আছে৷ এই নদীগুলোর নাব্যতা আছে, দুষণ এবং দখলও তেমন নেই৷ কিন্তু কিছু নদী একেবারে পর্যুদস্ত অবস্থায় পড়ে গেছে৷ দখলও হয়েছে অনেক নদীর অনেক জায়গা আবার দুষণও হয়েছে৷ বড় বড় শহরগুলোর আশপাশ বা ভেতর দিয়ে যে নদীগুলো গেছে সেগুলো খুবই দুষিত হয়ে গেছে৷ শুকনা মৌসুমে এগুলোকে বলা যায় মৃত নদী৷ এগুলো ইকোলজিক্যালি ডেড৷ পানির ফ্লো হয়ত আছে, কিন্তু কোনো প্রাণী বাঁচতে পারে না৷ এটা আসলেই আমাদের জন্য উদ্বেগের কারণ৷

আপনি বলছিলেন, কিছু নদী দখল আর দূষণে বেহাল দশা৷ দখল-দূষণ থেকে রক্ষায় আপনারা কী ধরনের কাজ করছেন?

আমাদের ম্যান্ডেটই হচ্ছে নদীকে দখল ও দুষণ মুক্ত রাখা৷ নাব্যতার বিষয়ে সুপারিশ করা৷ হাইকোর্টের রায় অনুসারে সকল নদ নদী উপকূল এগুলোকে জীবন্ত সত্তা হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে৷ জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন এর অভিভাবক৷ অভিভাবক হিসেবে সেই দৃষ্টিতেই আমরা দেখি৷ যেখানে সমস্যা আছে সেটার বিষয়ে আমরা সুপারিশ করি৷ দুষণের জন্য আমরা প্রায়ই বিভিন্ন জায়গায় যাচ্ছি৷ স্থানীয় সরকারকে আমরা উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করছি৷ আমরা শাস্তি দেওয়ার কথা বলছি৷ শ্রীপুরের মেয়র সেখানকার নদীকে দুষিত করে ফেলছেন৷ আমি চেয়ারম্যান হিসেবে দুই বার সেখানে গিয়েছি৷ কিন্তু কাজ হয়নি৷ ফলে আমরা তাকে পদ থেকে সরিয়ে দিতে স্থানীয় সরকারের সচিবকে চিঠি দিয়েছি৷ ঠিক একইভাবে পটুয়াখালির মেয়রকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য আমরা গত সপ্তাহে স্থানীয় সরকার বিভাগে চিঠি দিয়েছি৷ আমরা জনগণকে উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করছি৷ পাশাপাশি কিছু ব্যবস্থাও নিচ্ছি৷ আমরা সুপারিশ করেছি, ক্লাস থ্রি থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত বইয়ে একটা চ্যাপ্টার রাখার জন্য৷ সরকার সেভাবে করছে৷

‘কিছু নদী একেবারে পর্যুদস্ত অবস্থায় পড়ে গেছে’

নদী দখলদারদের তালিকা তৈরিতে একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছিল জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন৷ এর কাজ শেষ হয় গত ডিসেম্বরে৷ প্রকল্পটির মাধ্যমে ৩৭ হাজার ৩৯৬ নদ-নদী দখলদারকে চিহ্নিত করা হয়৷ এটা ওয়েবসাইটেও প্রকাশ করা হয়েছিল৷ কিন্তু ডিসেম্বরেই এক সভায় নেওয়া সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে সে তালিকা ওয়েবসাইট থেকে আপনারা মুছে দিয়েছেন৷ কেন?

এটা সঠিক নয়, বিভ্রান্তিকর৷ কোন কিছুই মুছে দেওয়া হয়নি৷ এই তালিকাটা প্রকাশই করা হয়নি৷ তালিকাটা যাচাই বাছাইয়ের জন্য জেলা প্রশাসনকে পাঠানো হয়েছে৷ প্রজেক্টের লোকেরা যে তথ্যগুলো এনেছেন শুধু দখলদার নয়, দুষণের বিষয়ে, নাব্যতার বিষয়ে৷ সেখানে অনেকগুলো তথ্য সঠিক ছিল না৷ ফলে আমরা জেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছে পাঠিয়েছি, যে আপনারা দেখেন তারপর আমরা ওয়েবসাইটে পাবলিশ করব৷ তিন চারটি নদীর পূর্ণাঙ্গ তথ্য পাওয়া গেছে৷ আমরা ডিসিদের তাগিদ দিচ্ছি৷ এর বাইরেও যে বিষয়টা জটিলতার সৃষ্টি করেছে, সেটা হলো নামধারী পরিবেশবাদী একটা গ্রুপ আছে৷ তারা চাঁদাবাজির সুযোগ নেওয়ার জন্য এটা করেছে৷ এখানে ৫৭ হাজার দখলদারের তালিকা কিন্তু আমাদের ওয়েবসাইটে আছে৷ জেলা প্রশাসক ও ইউএনওরা এগুলো দেখে দিয়েছেন৷ ধারাবাহিকভাবে তাদের উৎখাত করা হচ্ছে৷ তালিকাগুলো নিয়মিত আপডেট করা হয়৷ ডিসিরা আপডেট করে দিলে ৩৭ হাজারের তালিকাটাও ওয়েবসাইটে দেওয়া হবে৷

আমরা বিভিন্ন গবেষণার রিপোর্ট থেকে যেটা দেখেছি, গত ৫০ বছরে প্রায় অর্ধেক নদী শুকিয়ে মরে গেছে৷ নদীগুলো এভাবে হারিয়ে গেলে কী হবে?

আসলে কতগুলো নদী শুকিয়ে গেছে তার কি কোনো রেফারেন্স আছে? অনেক কথা অনেকে বলে৷ দেশে ২০টা নদ নদী জলাশয় আইন আছে৷ কোনো আইনেই কিন্তু নদীকে সংজ্ঞায়িত করা হয়নি৷ আমরা নদী রক্ষা কমিশন থেকে নদীর সংজ্ঞা ও সংখ্যা নিয়ে কাজ করছি৷ সংজ্ঞার উপর নির্ভর করবে নদীর সংখ্যা৷ আমরা জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে পুঙ্খানুপুঙ্খ তথ্য নিচ্ছি৷ আগে ৮৫৭টা নদী ছিল৷ এখন কিছুটা বেড়ে ৯০০ হয়েছে৷ অনেকেই নদীর সংখ্যা দেড় হাজার বলে৷ এটা ঠিক না৷

নদী রক্ষায় সরকারি ও বেসরকারি যথাযথ উদ্যোগ কি নেওয়া হচ্ছে?

উদ্যোগ কিছু নেওয়া হয়েছে৷ কিন্তু আইনের প্রয়োগ হয়নি৷ ঢাকার চারদিকে চারটা নদী৷ এই চারটা নদীকে হাইকোর্ট ২০০৯ সালে ইকোলজিক্যালি ক্রিটিক্যাল এরিয়া হিসেবে ঘোষণা করার জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরকে বলেছে৷ সে হিসেবে পরিবেশ অধিদপ্তর এই চারটি নদীকে গেজেটের মাধ্যমে ইকোলজিক্যালি ক্রিটিক্যাল এরিয়া হিসেবে ঘোষণা করেছে৷ এগুলো করলে কিছু স্টেপ নিতে হয়, কমিটি করতে হয়৷ দুষণ বন্ধে কিছু পদক্ষেপ নিতে হয়৷ নাব্যতা রক্ষা করে নদীকে আবার রিস্টোর করতে হয়৷ কিন্তু গত ১১ বছরে এই ধরনের কোন কাজই করা হয়নি৷ তারা শুধু ডিক্লারেশন দিয়ে বসে আছে৷ আমি অনেকবার তাদের চিঠি দিয়েছি, বলেছি কিন্তু তারা কোনো উত্তর দেয়নি৷

বাংলাদেশের নদীগুলোকে দখল ও দূষণমুক্ত করতে আদালত থেকে বার বার নির্দেশনা এসেছে৷ সরকারও প্রায়ই নদীর ওপর অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করছে৷ কিন্তু পরক্ষণেই আবার নদীগুলো দখল হচ্ছে৷ এগুলো দেখার দায়িত্ব কার?

নদীর মালিকানা জনগণের এবং পক্ষে কালেকটর অর্থাৎ ডিসি৷ ডিসির উপর সকল দায়িত্ব বর্তায়৷ কিছু কিছু দায়িত্ব আবার আছে বিআইডাব্লিউটি-এর৷ কিছু দায়িত্ব আছে পোর্ট অথরিটির৷ নদীর তীর ভূমি থেকে ৫০ গজ বন্দর এলাকা৷ এখানে জেলা প্রশাসনের কোন এখতিয়ার নেই৷ এটার এখতিয়ার বিআইডাব্লিউটি-এর৷ এই ৫০ গজের ভেতর দিয়ে অনেক পাইপ যাচ্ছে৷ এটা তাদের আমি অনেকবার বলেছি, এই পাইপগুলো বন্ধ করে দেন৷ আমি এটাও বলেছি, যে সব ফ্যাক্টরির বর্জ্য যাচ্ছে তাদের নাম লিখে লাল পতাকা উড়িয়ে দেন৷ তাহলে তাদের লজ্জা বোধ থেকে তারা এটা বন্ধ করবে৷ কিন্তু তারা সেটা করে না৷

নদী রক্ষায় আসলে আর কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া উচিৎ?

আইনে শুধু ফাইন আছে৷ শুধু ফাইনে হবে না, তাদের জেলে দিতে হবে৷ যারা দখল করছে তারা ইকোলজিক্যাল ক্রাইম করছে৷ সাভারে নয়টা ইন্ডাস্ট্রিয়াল ক্লাস্টার আছে৷ যে ডায়িং ইন্ড্রাষ্ট্রি আছে, সেখানে এক কেজি কটন ওয়াশিংয়ে ২২০ লিটার পানি লাগে৷ এগুলো তারা মাটির নিচ থেকে উঠিয়ে আনছে৷ এরপর যে ওয়েস্ট ওয়াটার হচ্ছে সেটা আশপাশে চলে যাচ্ছে৷ এখন তো তারা নাকি মাটির নিচে দিয়ে দিচ্ছে৷ কোন কোন কারখানায় ৭-৮টি ডিপ রয়েছে৷ এত পানি উঠানোর ফলে কিন্তু গ্রাউন্ড ওয়াটারের লেবেল নেমে যাচ্ছে৷ কেমিক্যাল মিশ্রিত পানি যদি তারা আবার মাটির নিচে দিয়ে দেয় তাহলে তো সেটা ভয়াবহ ব্যাপার৷ এটা তো স্লো জেনোসাইড৷ এখানে যে ক্রাইম হয়ে যাচ্ছে সেটা ঠেকাতে হবে৷ 

আপনারা কেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছেন না?

আমরা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারি৷ কিন্তু তারা অত্যন্ত চালাক৷ আমরা পরিবেশ অধিপ্তরের লোক নিয়ে যায়, তারা ছোটখাট ৫০ হাজার বা এক লাখ টাকা জরিমানা করে৷ এটা তাদের কাছে কিছুই না৷ আমরা চেষ্টা করছি, মালিক ও ম্যানেজার তারা যাতে জেলে যায় সে ব্যবস্থা করব৷ জাতিকে বাঁচাতে হলে একশন নিতেই হবে৷

ডয়চে ভেলের ঢাকা প্রতিনিধি সমীর কুমার দে৷
সমীর কুমার দে ডয়চে ভেলের ঢাকা প্রতিনিধি৷
স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য