নাগরিকত্ব বিলের বিরোধিতায় বঙ্গের বিশিষ্টজনেরা
১০ ডিসেম্বর ২০১৯সোমবার লোকসভায় নাগরিকত্ব বিল পেশ করার সময় একাধিকবার পশ্চিমবঙ্গের নাম উল্লেখ করেছেন দেশের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। বলেছেন, এর ফলে বাংলাদেশ থেকে আসা সে দেশের সংখ্যালঘু উদ্বাস্তু পশ্চিমবঙ্গে সম্মানের সঙ্গে বাস করতে পারবেন। কিন্তু যে কায়দায় এই বিল পেশ করা হয়েছে তার প্রতিবাদে সরব হয়েছেন বঙ্গীয় বিশিষ্টজনেরা। সকলেরই বক্তব্য, এনআরসি এবং নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল কেবল সংবিধানের পরিপন্থী নয়, একই সঙ্গে অগণতান্ত্রিক। আইনসভায় বিল পাশ হলেও এ নিয়ে বিতর্ক চলতেই থাকবে।
বাংলার বিশিষ্ট লেখক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ভারত বহু বর্ণ, বহু ভাষা, বহু ধর্মের দেশ। বরাবর এ দেশ সমস্ত মানুষকে সমান অধিকার দিয়েছে। কিন্তু বর্তমান সরকার দেশের এই ঐতিহ্যটাকেই ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা করছে। তারা ভারতকে হিন্দু রাষ্ট্রে পরিণত করার চেষ্টা করছে। এর বিরুদ্ধে সকলের সরব হওয়া উচিত। বিল পাশ হলেও তা নিয়ে বিতর্ক বন্ধ করা যাবে না। মনে রাখতে হবে, বিজেপি বরাবরের জন্য সরকারে থাকবে না। পরবর্তী সরকার এসে আবার এই আইন বদলাবে। কারণ, এই আইন গণতান্ত্রিক নয়।
শীর্ষেন্দুবাবুর কথাকেই সমর্থন করেছেন বিশিষ্ট সংবিধান বিশেষজ্ঞ অমল মুখোপাধ্যায়। প্রেসিডেন্সি কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষের বক্তব্য, সরকার সংখ্যার জোরে আইনসভায় এই বিল পাশ করিয়ে নিতে পারে। কিন্তু বাস্তবে এই বিলে এক দিকে অগণতান্ত্রিক এবং অন্য দিকে অসাংবিধানিক। অমলবাবুর বক্তব্য, দেশের সংবিধান ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলে। সেখানে কোনও ভাবেই কয়েকটি নির্দিষ্ট ধর্মের উল্লেখ করে আইন তৈরি করা যায় না। এটি সংবিধানে অধিকারের যে ব্যাখ্যা রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
ফলে আদালতে এই বিষয়টি উল্লেখ করে মামলা হতেই পারে। একই সঙ্গে অমলবাবুর মন্তব্য, বিলটি অগণতান্ত্রিক কারণ, বিলে প্রতিবেশী দেশ হিসেবে মাত্র তিনটি রাষ্ট্রের উল্লেখ করা হয়েছে। যদি প্রতিবেশী সার্ক রাষ্ট্রগুলির কথা বলা হত, তাহলেও বোঝা যেত একটি কোনও মাপকাঠি ব্যবহার করা হয়েছে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে তিনটি দেশের নাম উল্লেখ করে সরকার বুঝিয়ে দিয়েছে তারা গণতান্ত্রিক ধারণাগুলিকেও ভেঙে দিতে চাইছে। এটা মেনে নেওয়া যায় না।
নাট্য ব্যক্তিত্ব বিভাস চক্রবর্তীর অভিযোগ, নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের সঙ্গে জাতীয় নাগরিক পঞ্জি বা এনআরসির সরাসরি সংযোগ আছে। তাঁর বক্তব্য, অসমে কী ভাবে এনআরসি হয়েছে, সেটাই তাঁর কাছে স্পষ্ট নয়। এখন সরকার বলছে নাগরিকত্ব বিল পাশ হয়ে গেলে গোটা দেশে এনআরসি করা হবে। এটা তিনি কোনও ভাবেই মেনে নেবেন না।
কারণ, দেশ ভাগের সময় কী ভাবে মানুষ এক দেশ ছেড়ে অন্য দেশে এসে বসবাস করতে শুরু করেছিলেন, সে ইতিহাস ভোলার নয়।
শুধু পশ্চিমবঙ্গের বিশিষ্টরাই নন, এনআরসি এবং নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের বিরোধিতায় নেমেছেন গোটা দেশের বিদ্বজ্জনেরা। প্রায় এক হাজার বিজ্ঞানী এর বিরুদ্ধে সরকারকে খোলা চিঠি দিয়েছেন। দেশের প্রথমসারির বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র এবং শিক্ষকেরাও এর বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন। এরই মধ্যে সোমবার লোকসভায় এই বিল পাশ হওয়ার পরে গোটা উত্তর পূর্ব ভারত উত্তাল হয়ে উঠেছে। অসমে রাতেই মিছিল করেছে ছাত্ররা। মঙ্গলবার গোটা উত্তর পূর্ব ভারতে এর বিরুদ্ধে বনধের ডাক দেওয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে আইনসভায় স্বস্তির নিশ্বাস ফেললেও দেশ জুড়ে খুব স্বস্তিতে নেই নরেন্দ্র মোদীর সরকার।