1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সংসদ উত্তাল এনআরসি বিতর্কে

২ ডিসেম্বর ২০১৯

আগামী সপ্তাহেই সংসদে পেশ হতে পারে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল৷ তার হাত ধরেই কি দেশ জুড়ে জাতীয় নাগরিকপঞ্জির প্রক্রিয়া শুরু হবে? নাগরিক সমাজে জল্পনা তুঙ্গে৷ বিতর্কের পারদ চড়ছে সংসদেও৷

https://p.dw.com/p/3U64x
ছবি: picture alliance/dpa

নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলকে সামনে রেখে এবার কি গোটা দেশ জুড়েই জাতীয় নাগরিক পঞ্জি (এনআরসি)-র পরিকল্পনা করছে বিজেপি? সংসদের শীতকালীন অধিবেশনে এটাই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন, কারণ, বিজেপির তরফে খবর, আগামী সপ্তাহেই সংসদে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পেশ করা হবে৷ 

আসামে এনআরসি পর্বে বিজেপি একাধিকবার দাবি করেছিল, এর ফলে বাংলাদেশ থেকে আসা অনুপ্রবেশকারীদের চিহ্নিত করা যাবে৷ তবে বিরোধীদের দাবি ছিল, নাগরিকপঞ্জির আড়ালে সাম্প্রদায়িক রাজনীতির চেষ্টা চালাচ্ছে গেরুয়া শিবির৷ বস্তুত, সে সময় পশ্চিমবঙ্গে এসেও বিজেপির শীর্ষ নেতারা নাগরিকপঞ্জির প্রয়োজনীয়তার কথা বলতে গিয়ে সরাসরি ধর্মীয় মেরুকরণের রাস্তায় হেঁটেছিলেন৷ পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তন বসু মন্তব্য করেছিলেন, ‘‘এনআরসি করে বাংলাদেশি মুসলিমদের দেশ ছাড়া করা হবে৷’’ 

লোকসভায় যে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পেশ করতে চলেছে, বিজেপি তাতে মূলত দু'টি পরিবর্তন রয়েছে৷ এক, ভারতের প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলি থেকে হিন্দু, শিখ, জৈন কিংবা খ্রিস্টানরা এ দেশে প্রবেশ করলে তাদের শরণার্থী হিসেবে দেখা হবে এবং দ্রুত নাগরিকত্ব দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে৷ কিন্তু মুসলিমদের অনুপ্রবেশকারী হিসেবে চিহ্নিত করা হবে৷ দুই, শরণার্থীরা ৬ বছর এ দেশে বাস করলে নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারবেন৷ আগে যা ছিল ১১ বছর৷ বিজেপির দাবি, নাগরিকত্ব সংশধোনী বিল পাস হলেই দেশ জুড়ে এনআরসির প্রক্রিয়া শুরু হবে৷

এখানেই আপত্তি বিরোধীদের৷ লোকসভায় কংগ্রেস দলনেতা অধীর চৌধুরীর বক্তব্য, ‘‘এনআরসি এবং নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল নিয়ে ধর্মীয় মেরুকরণের রাজনীতি করছে বিজেপি৷ ভারতের মতো ধর্মনিরপেক্ষ দেশে এভাবে ধর্মভিত্তিক আইন তৈরি করা যায় না৷ কংগ্রেস এই বিলের বিরোধিতা করবে৷'' সোমবার লোকসভার অধিবেশনে এনআরসি সংক্রান্ত বিতর্কে অধীর বলেন, ‘‘আমিও উদ্বাস্তু, অমিত শাহ এবং লালকৃষ্ণ আদাবানিও উদ্বাস্তু৷’’

এনআরসি এবং নাগরিকত্ব বিলের লাগাতার বিরোধিতা করছে তৃণমূলও৷ দলের সাংসদ এবং মুখপাত্র ডেরেক ও'ব্রায়েনের কথায়, ‘‘বিজেপি এনআরসি এবং নাগরিকত্ব বিল ব্যবহার করে হিন্দুপ্রীতি দেখানোর চেষ্টা করছে৷ কিন্তু আসামে প্রমাণ হয়ে গিয়েছে, এনআরসির ফলে হিন্দুরাও সমস্যায় পড়েছেন৷ এমন যে হতে পারে আমরা আগেই তা বলেছিলাম৷ সংসদে আমরা নাগরিকত্ব বিলের তীব্র বিরোধিতা করব৷’’ 

রাজনৈতিক মহলের একাংশের বক্তব্য, আসামে এনআরসি করে সাম্প্রদায়িক মেরুকরণের যে তাস বিজেপি খেলবে ভেবেছিল, বাস্তবে তা বুমেরাং হয়ে গিয়েছে৷ ১৯ লক্ষ মানুষের যে তালিকা তৈরি হয়েছে, তার মধ্যে প্রায় ১১ লক্ষ হিন্দু৷ ফলে তড়িঘড়ি নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল এনে হিন্দুদের আশ্বস্ত করার চেষ্টা করছে বিজেপি৷ বোঝানোর চেষ্টা করছে, নাগরিকপঞ্জিতে নাম না থাকলেও তাঁদের চিন্তার কারণ নেই৷ নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পাস হলে তাঁরা যাতে দ্রুত নাগরিকত্ব পান তার ব্যবস্থা করা হবে৷ যদিও আদৌ এ ধরনের ধর্মভিত্তিক আইন সংবিধান গ্রাহ্য কিনা, তা নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন৷

বাম শীর্ষ নেতৃত্বের বক্তব্য, ভারতের মতো ধর্মনিরপেক্ষ দেশে নির্দিষ্ট কিছু ধর্মীয় সম্প্রদায়ের নাম ব্যবহার করে বিজেপি যে আইন আনতে চলেছে, তা সংবিধানবিরোধী৷ তাঁদের আরো বক্তব্য, কিসের ভিত্তিতে নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হচ্ছে এবং কীভাবে তা ফিরিয়ে দেওয়া হবে, সেটাই স্পষ্ট নয়৷ আসলে গোটাটাই বিজেপির সংকীর্ণ ধর্মীয় রাজনীতি৷ ডেরেকও একই কথা বলেছেন৷ তাঁর বক্তব্য, ‘‘দীর্ঘদিন ধরে যিনি এ দেশের নাগরিক ছিলেন, কেন তাঁর নাগরিক অধিকার কেড়ে নেওয়া হবে এবং নতুন করে নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য লড়াই করতে হবে?’’

বিরোধীরা তো বটেই, বিজেপির শরিক দলগুলির ভিতরেও নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল নিয়ে ভিন্নমত রয়েছে৷ উত্তর-পূর্ব ভারতে বিজেপির শরিক দলগুলি ইতিমধ্যেই তাদের বিল বিরোধী অবস্থান স্পষ্ট করেছে৷ সূত্রের খবর, উত্তর-পূর্ব ভারতে বিজেপির এক সাংসদও দলীয় বৈঠকে নিজের আপত্তি জানিয়েছেন৷

দেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী, তথা বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ অবশ্য এখনো দাবি করছেন, যতই বিরোধিতা আসুক, সংসদের চলতি অধিবেশনেই নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পাস করা হবে৷ এবং তারপর দেশ জুড়ে এনআরসির প্রক্রিয়াও চালু হবে৷

এসজি/এসিবি

৩১ আগস্টের ছবিঘরটি দেখুন...