1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

নারী অধিকার

১ নভেম্বর ২০১২

ইউরোপে নারীদের অধিকার সুপ্রতিষ্ঠিত৷ তাদের ভোট দেয়ার অধিকার আছে, একক মাতৃত্বের অধিকার আছে, আছে সঙ্গী বা পেশা নির্বাচনসহ অন্যান্য অধিকার৷ তারপরও সরকার, প্রশাসন বা বিভিন্ন কোম্পানির শীর্ষ পদে থাকা নারীর সংখ্যা এখনো নগণ্য৷

https://p.dw.com/p/16alj
ছবি: Joanna Impey

ক্ষমতার শীর্ষে ইউরোপীয় নারী – এই শিরোনামে যদি একটা তালিকা করা যায়, তবে সেই তালিকায় কার কার নাম আসতে পারে বলুন তো? ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র বিষয়ক প্রধান ক্যাথেরিন অ্যাশটন, জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল আর....আর...? সাধারণ মানুষের কাছে তালিকাটি হয়ত এখানেই শেষ৷ কিন্তু এর কারণ কী?

আসলে ইউরোপে কাগজে-কলমে নারীদের অধিকারকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হলেও বাস্তবে এর প্রতিফলন খুব কম দেখা যায়৷ তবে আর এহেন পরিস্থিতি মেনে নিতে রাজি নন ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সদস্যরা৷

এই যেমন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিচার বিভাগীয় কমিশনার ভিভিয়ান রেডিং শেয়ারবাজারে নথিভুক্ত কোম্পানিগুলির ব্যবস্থাপনা স্তরে কমপক্ষে ৪০ শতাংশ নারীর উপস্থিতি দেখতে চান, চান নারীদের জন্য ৪০ শতাংশ আসন সংরক্ষণ করতে৷

এটা ঠিক যে ইউরোপে উচ্চশিক্ষিত, দক্ষ নারীর অভাব নেই৷ অথচ তা সত্ত্বেও তাঁদের ক্ষমতা যে ঠিকমতো কাজে লাগানো হচ্ছে না – সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই৷ তাই তাঁদের অধিকার সংরক্ষণের পক্ষে রেডিংয়ের বক্তব্য, ‘‘শীর্ষ স্তরে পুরুষ ও নারীর ভারসাম্য থাকলে প্রতিষ্ঠানেরও লাভ৷ নারীরা কোনো প্রতিষ্ঠানের জন্য বোঝা হয়ে থাকেন না৷ তাছাড়া এই আর্থিক সংকটের সময় যখন ইউরোপে সহজে উচ্চ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও পারদর্শী কর্মী পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে, ঠিক তখনই এক ধাপ এগিয়ে নারীদের মধ্যে সুপ্ত প্রতিভা খোঁজা উচিত৷''

Deutschland Geschichte Kapitel 6 1999 – 2009 Bundeskanzlerin Angela Merkel
জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলছবি: picture-alliance/dpa/dpaweb

আশ্চর্যের বিষয়, ভিভিয়ান রেডিংয়ের এমন যুক্তির পরও তাঁর প্রস্তাবটি খসড়া আকারেই থেকে গেছে, কার্যকর হয়নি এখনও৷ এর পেছনে যুক্তিও দেখালেন ইউরোপীয় পার্লামেন্টে জার্মানির প্রতিনিধি রেবেকা হার্মস৷ বললেন, ‘‘বিচ্ছিন্নভাবে শুধু পরিচালনা পরিষদে নারীদের বসানোর চেষ্টা না করে সার্বিক কৌশলগত লক্ষ্য স্থির করা উচিত বলে মনে করি আমি৷ আর সে জন্য চাই সুস্পষ্ট আইন, যা এই সংরক্ষণ নীতি থেকেই উঠে আসতে পারে৷''

প্রথমে ২০১২ সালের মার্চ মাসের মধ্যে ইউরোপীয় অঞ্চলের বড় বড় প্রতিষ্ঠানের বোর্ডে ৩০ শতাংশ নারীর অন্তর্ভুক্তির লক্ষ্যমাত্রা স্থির করা হয়েছিল৷ তারপর ধাপে ধাপে সেই মাত্রা বাড়ানোর লক্ষ্য স্থির করা হয়৷ ২০১৫ সালের মধ্যে ৩০ শতাংশ এবং ২০২০ সালের মধ্যে ৪০ শতাংশ নারী কর্পোরেট জগতের শীর্ষে থাকবেন – এমন এক স্বপ্ন দেখছেন ভিভিয়ান৷ অথচ আশ্চর্যের বিষয় হলো, তাঁর কমিশনের নারী সদস্যরাই এই খসড়া প্রস্তাবের বিরুদ্ধে!

ডিজিটাল অ্যাজেন্ডা বিষয়ক কমিশনার নেদারল্যান্ডসের নেলি ক্রুস, ইইউ'র স্বরাষ্ট্র বিষয়ক কমিশনার সুইডেনের সিসিলিয়া মাল্মস্ট্র্যোম, জলবায়ু বিষয়ক কমিশনার ডেনমার্কের কনি হেডেগার্ড, এমনকি ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র বিষয়ক প্রধান ক্যাথেরিন অ্যাশটনও  রয়েছেন তাঁদের মধ্যে!

সমস্যাটা অন্য জায়গায়৷ ইইউ'র সদস্য দেশ হওয়া সত্ত্বেও নারীর জন্য ‘কোটা' সংরক্ষণের ক্ষেত্রে প্রতিটি দেশেই রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন আইন৷ জার্মানিতে এ নিয়ে আলোচনা এখন তুঙ্গে৷ ইটালি ও নেদারল্যান্ডসেও সংরক্ষণ নীতি রয়েছে৷  ফ্রান্সেও এ ধরণের আইন হয়েছে সম্প্রতি৷ অন্যদিকে, ব্রিটেন এর একেবারে বিরোধী৷ কাজেই ইউরোপীয় কমিশনে যে এ নিয়ে মতানৈক্য থাকবে – তাতে তো অবাক হওয়ার কিছু নেই৷

স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশগুলি অবশ্য নারীর ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে অনেকটাই এগিয়ে৷ মেয়ে হিসেবে সেখানে নানাবিধ সুযোগ-সুবিধে রয়েছে৷ কিন্তু তারপরও শুধু কোটা-ব্যবস্থার মাধ্যমে কোনো প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ স্তরে নারীদের উপস্থিতি সম্ভব করে তোলার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন অনেকে৷ তাঁদেরই একজন লুক্সেমবার্গের ইউরোপীয় পার্লামেন্টে কর্মরত আস্ট্রিড লুলিং৷ তাঁর কথায়, ‘‘আমার মনে হয় কোটা বা সংরক্ষণের চেয়েও বেশি প্রয়োজন নারীদের সমানাধিকার নিশ্চিত করা৷ পুরো বিষয়টিকে এমনভাবে দেখা যাতে তাঁরা  পছন্দের পেশাটি বেছে নেয়ার ব্যাপারে পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা পান৷ অতীতে আমরা খুব কম সংখ্যক নারী ব্যাংকার পেয়েছি, কারণ, অতীতে খুব কম নারীই গণিত অথবা অ্যাকাউন্ট্যান্সি নিয়ে পড়াশোনা করতেন৷''

Atomgesprächen mit dem Iran in Moskau Catherine Ashton
ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র বিষয়ক প্রধান ক্যাথেরিন অ্যাশটনছবি: AP

তবে শুধু সুযোগের অভাই নয়, এ ক্ষেত্রে সুযোগের ভুল ব্যাবহারের কথাও উল্লেখ করেছেন আস্ট্রিড লুলিং, বললেন, অতীতে এমনও হয়েছে যে নারীকে কোনো একটি বিশেষ পদে বসানো হলো, শুধুমাত্র এজন্য যে যার ফলে পুরুষই শেষ পর্যন্ত লাভবান হয়৷ অর্থাৎ নারীকে সেখানে সাজিয়ে-গুছিয়ে বসানো হয়েছে অন্য কোনো পুরুষ সদস্যকে ওই পদ থেকে বাইরে রাখার জন্য৷

বলা বাহুল্য, বৈচিত্র্যের মধ্যেই লুকিয়ে থাকে সাফল্যের চাবিকাঠি৷ তাই শুধু নারী-পুরুষের ভারসাম্য নয়, বিভিন্ন দেশ ও সংস্কৃতির মানুষ, বিভিন্ন বয়সের মানুষ একসঙ্গে কাজ করলে সাফল্য আসতে যে বাধ্য!

প্রতিবেদন: ডাফনে গ্রাথভোল/ডিজি

সম্পাদনা: আশীষ চক্রবর্ত্তী

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য