নারী দিবস উপলক্ষে পদযাত্রায় মমতা
৭ মার্চ ২০২৪আগামীকাল ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস। সেই উপলক্ষে রাজ্যের শাসক ও বিরোধী দল কর্মসূচি নেয়।
পদযাত্রায় মমতা
প্রতি বছর নারী দিবস উপলক্ষে পদযাত্রা করেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আগামীকাল, শুক্রবার শিবরাত্রির পার্বণ থাকায় সেই কর্মসূচি আজই অনুষ্ঠিত হয়।
কলেজ স্কোয়ার থেকে শুরু হয় তৃণমূলেরপদযাত্রা। একেবারে সামনে ছিলেন তৃণমূল নেত্রী। তার সঙ্গে হেঁটেছেন শাসকদলের নারী সংগঠনের নেত্রী ও কর্মীরা। ছিলেন নারী জনপ্রতিনিধিরা। সাংসদ দোলা সেন, সুস্মিতা দেব, মালা রায়, সাগরিকা ঘোষ, বিধায়ক জুন মালিয়া, লাভলি মৈত্র প্রমুখ পদযাত্রায় অংশ নেন।
মিছিলে নারী বাহিনীর পিছনে ছিলেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তার সঙ্গে পদযাত্রায় অংশ নেন তৃণমূলের অন্যান্য নেতৃত্ব।
পদযাত্রায় অংশ নেয়া অনেকের মুখেই ছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখোশ। বিভিন্ন ধরনের প্ল্যাকার্ডে নারী কর্মীরা তুলে ধরেন রাজ্য সরকারের নানা প্রকল্পের কথা। লক্ষ্মীর ভান্ডার থেকে কন্যাশ্রী কিংবা রূপশ্রী, রাজ্যের এমন একগুচ্ছ প্রকল্পের কেন্দ্রে রয়েছেন নারীরা। তার কথাই এদিনের পদযাত্রায় তুলে ধরা হয়।
এই মিছিলে হেঁটেছেন উত্তর চব্বিশ পরগনার সন্দেশখালির কয়েকজন নারী। সুন্দরবন লাগোয়া এই জনপদে নারী নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের স্থানীয় নেতাদের বিরুদ্ধে।
নিগ্রহের অভিযোগ তোলা কয়েকজন গতকাল বারাসতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর জনসভায় হাজির ছিলেন। নারী দিবসকে সামনে রেখেই ছিল তার সেই সভা। সন্দেশখালির নারীরা একান্তে কথাও বলেন প্রধামন্ত্রীর সঙ্গে।
মার্চের প্রথম সপ্তাহে পশ্চিমবঙ্গে তিন তিনটি জনসভা করেছেন মোদী। প্রতিটিতেই উঠে এসেছে সন্দেশখালি প্রসঙ্গ। এ নিয়ে তৃণমূল সরকারকে তীব্র আক্রমণ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। তারপরের দিনই নারীদের সামনে রেখে পথে নামলেন মমতা।
উত্তর কলকাতার কলেজ স্কোয়ার থেকে এসএন ব্যানার্জি রোড হয়ে পদযাত্রা শেষ হয় ডোরিনা ক্রসিংয়ে। সেখানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পথসভা করেন।
মোদীকে জবাব
সন্দেশখালি প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, "এই পুণ্যভূমিতে মা-বোনেদের উপর অত্যাচার করে তৃণমূল ঘোর পাপ করেছে।" তার দাবি, গোটা রাজ্যে সন্দেশখালির ঝড় উঠবে।
এর জবাবে তৃণমূল নেত্রী বলেন, "কলকাতা সবচেয়ে নিরাপদ শহর। রাজ্যের কোথাও কোনো ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। সবটা আমাদের জানা থাকে না। জানা গেলে আমরা ব্যবস্থা নিই। নিজেদের দলের লোকেদেরও গ্রেপ্তার করি।"
মণিপুর থেকে বিলকিস বানু ও বক্সার নিগ্রহের প্রসঙ্গ উঠে আসে মমতার বক্তৃতায়। তিনি বলেন, "এখানে এতবার কেন্দ্রীয় দল পাঠাচ্ছেন। কিন্তু মণিপুর, হাথরাসে যে ঘটনা ঘটেছে, সেখানে কতবার দল পাঠিয়েছেন? কী ব্যবস্থা নিয়েছেন নারী নিগ্রহকারী সাংসদের বিরুদ্ধে?"
আগামী রবিবার ব্রিগেডে তৃণমূলের জনগর্জন সভা। এদিনের কর্মসূচি ছিল কার্যত তার মহড়া, সেদিনের সভায় সবাইকে হাজির হওয়ার আবেদন জানান তৃণমূল নেত্রী।
এদিন বিজেপির নারী মোর্চার নেত্রীরা সন্দেশখালি যাওয়ার চেষ্টা করেন। নিউটাউনের আগেই তাদের পাকড়াও করে পুলিশ। আটক করা হয় সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়, বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পাল, বিজেপি নেত্রী ভারতী ঘোষকে।
পদযাত্রায় দেখা গিয়েছে রানাঘাট দক্ষিণের বিজেপি বিধায়ক মুকুটমণি অধিকারীকে। মতুয়া অধ্যুষিত নদিয়ার এই এলাকায় এর আগের নির্বাচনগুলিতে ভালো ফল করেছে। রানাঘাট লোকসভা কেন্দ্রে বিজেপি আবার বর্তমান সাংসদ জগন্নাথ সরকারকে প্রার্থী করায় ক্ষোভ জানিয়েছিলেন মুকুটমণি।
তৃণমূলের এদিনের যাত্রাপথ ছিল উত্তর কলকাতা লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে। এখানকার প্রবীণ নেতা, সাবেক বিধায়ক তাপস রায় তৃণমূল নেতৃত্বের বিরুদ্ধে ক্ষোভ জানিয়ে গতকাল যোগ দিয়েছেন বিজেপিতে। তিনি এই কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থী হতে পারেন বলে জল্পনা চলছে।
কলকাতা উত্তর কেন্দ্রের তৃণমূল সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় ফের এখানে টিকিট পেতে পারেন। তাকে এদিনের পদযাত্রায় দেখা গিয়েছে। ছিলেন সুদীপের স্ত্রী, বিধায়ক নয়না বন্দ্যোপাধ্যায়ও।
সাংবাদিক সুমন ভট্টাচার্য বলেন, "তাপস রায়ের জন্য উত্তর কলকাতাকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাছেননি। এর আগে সোমেন মিত্র, সাধন পান্ডেদের বিরুদ্ধে তিনি দলের প্রার্থীদের এই এলাকা থেকে জিতিয়ে এনেছেন। এখানে কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, হাসপাতাল ইত্যাদি আছে। এখানকার তরুণদের কথা মাথায় রেখে এই এলাকা তৃণমূল নেত্রী বেছে নিয়েছেন।"
তার মতে, "তৃণমূল সরকারের প্রকল্পের ফলে নারীরা উপকৃত হয়েছেন। তাদের ক্রয় ক্ষমতা বেড়েছে। মোদী চেষ্টা করেছেন নারীদের সমর্থন পেতে। কিন্তু নারী ভোটাররা তৃণমূলের দিকে থাকবেন বলে মনে হয়।"
নারী কমিশনের সাবেক চেয়ারপারসন সুনন্দা মুখোপাধ্যায় ডয়চে ভেলেকে বলেন, "সন্দেশখালির নারীদের অভিযোগের ভিত্তিতে আইনত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আইন আইনের পথেই চলবে। প্রতিবার সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলিই নারী দিবস উপলক্ষে এই সব পদযাত্রা, সেমিনার করে। এগুলো প্রথাগত হয়ে গেছে। কিন্তু নারীরা কতটুকু বুঝতে পারছেন, সেটা সেকেন্ডারি হয়ে যাচ্ছে। ৮ মার্চ উদযাপন করাই হয়। অন্তরে কতটা গ্রহণ হয়, তাতে সন্দেহ রয়ে গিয়েছে।"