নারী শ্রমিকদের নেতৃত্বে আনতে চান রুবানা হক
১৪ এপ্রিল ২০১৯সম্প্রতি বিজিএমইএ-র নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন মোহাম্মদী গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রুবানা৷ ২০ এপ্রিলের মধ্যে বিজিএমইএ-র পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠিত হবে৷
৫৫ বছর বয়সি এই নারী এমন এক সময়ে সংগঠনের নেতৃত্বে এলেন, যখন বাংলাদেশ পৃথিবীতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক দেশ৷ এই খাতে কাজ করছেন ৪০ লাখ শ্রমিক৷ আর এইচঅ্যান্ডএম ও প্রাইমার্কের মতো প্রতিষ্ঠানের পোশাক তৈরি করছে রুবানার প্রতিষ্ঠান৷
মঙ্গলবার বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে এক সাক্ষাৎকারে রুবানা হক বলেন, ‘‘আমি বিশ্বাস করি, যে শিল্পের ৮০ ভাগের অধিক শ্রমিক নারী, নিজেদের স্বার্থ তুলে ধরতে তাঁদেরকে বড় রকমের সুযোগ দেওয়া উচিত৷ অধিকাংশ শ্রমিক নারী হলেও বর্তমানে ব্যবস্থাপক পর্যায়ের বেশিরভাই পুরুষ৷ এই অবস্থার পরিবর্তন আনতে হবে৷''
বাংলাদেশের সাড়ে চার হাজার কারখানায় নিজেদেরবেতন ও কর্মক্ষেত্রের নিরাপত্তাসহ প্রায় সবক্ষেত্রে পুরুষ ব্যবস্থাপকদের সঙ্গেই দেনদরবার করতে হয় নারী শ্রমিকদের৷ এই অবস্থার পরিবর্তন আনার কথাই বলছেন রুবানা৷
আবার এমন এক সময়ে রুবানা বিজিএমইএ সভাপতি হলেন, যখন ইউরোপীয় ইউনিয়নে দেওয়া কারখানা পরিদর্শন প্রক্রিয়া থাকবে কি, থাকবে না- সে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অপেক্ষায় আছে বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্ট৷ ২০১৩ সালে সাভারের রানা প্লাজা ধসে ১১০০ জন নিহত হওয়ার পর ‘বাংলাদেশ অ্যাকর্ড' নামে এ পরিদর্শন প্রক্রিয়া চালু হয়েছিল৷
এমতাবস্থায় পোশাক প্রস্তুতকারকদের পক্ষ থেকে কারখানা পরিদর্শন ও পরীক্ষা নিরীক্ষার উপর জোর দিচ্ছেন রুবানা৷ বিজিএমইএ-র সভাপতি পদের দায়িত্বে আসাকে গত দুই দশক ধরে তৈরি পোশাক খাতে নিজের কাজের ধারাবাহিকতা হিসাবেই বর্ণনা করছেন তিনি৷
রুবানা বাংলাদেশের পোশাক কারখানার নির্বাহী পদে হাতেগোনা কয়েকজন নারীর একজন৷ ‘‘নারীকে অবহেলার চোখে দেখার একটা প্রবণতা আছে, এটাকে পরিবর্তন করতে হবে'', রয়টার্সকে বলেন তিনি৷ ‘‘কিন্তু আমি নারী হিসাবেই এখানে আছি, এবং আমি বিশ্বাস করি- নারীদের চ্যালেঞ্জগুলোকে ভিন্নভাবে দেখা ও তাঁদের প্রতি সমানুভূতিশীল হতে পারব৷''
কবিতার জন্য সার্ক সাহিত্য পুরস্কার পাওয়া রুবানা কলামও লেখেন৷ তাঁর প্রয়াত স্বামী আনিসুল হক পোশাক খাতের ব্যবসায়ী এবং ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র ছিলেন৷
রুবানা বলছেন, শিক্ষিত করে নারী শ্রমিকদের ভবিষ্যতের জন্য তৈরি করার পাশাপাশি তাঁদেরকে মধ্যম সারির ব্যবস্থাপক পদে আনার কথা ভাবছেন তিনি৷ ‘‘জেন্ডারভিত্তিক নেতৃত্বের কর্মসূচি হাতে নিতে চাই আমি, যার মাধ্যমে নারীরা ক্ষমতায়িত হবেন৷''
গার্মেন্টসে শ্রমিক নির্যাতনের অভিযোগকে ‘বিচ্ছিন্ন ঘটনা, বাজে চর্চা' হিসাবে উড়িয়ে দেন তিনি৷ তাঁর ভাষায়, ‘‘বাস্তবে আমাদের ৮০ ভাগ নারী স্বাধীনভাবে কাজ করছে এবং অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখছে- এটাই বড় কথা৷''
এদিকে, রুবানা হক একটি শীর্ষ পদে আসলেও নারী শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে কতটা কাজ করতে পারবেন সে বিষয়ে সন্দিহান শ্রমিক অধিকার সংগঠকরা৷ তাঁদের ধারণা, শ্রমিকদের চাইতে মালিকদের স্বার্থই দেখবেন তিনি৷ ‘‘তিনি (রুবানা) নির্বাচিত হয়েছেন এটা ভালো ব্যাপার৷ তবে পুরুষ নিয়ন্ত্রিত একটি সংগঠনে তিনি কতটা প্রভাব রাখতে পারবেন, সে বিষয়ে আমি নিশ্চিত নই'', রয়টার্সকে বলেন আওয়াজ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা নাজমা আক্তার৷
শ্রমিক অধিকার নিয়ে কাজ করা সাবেক এ শিশু শ্রমিক বলেন, ‘‘আমি আশা করি, তিনি শ্রমিকদের জীবনযাত্রা, স্বাস্থ্য, মাতৃত্বকালীন সুবিধা এবং কারখানায় সংঘাতের বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করবেন৷''
এমবি/জেডএইচ (রয়টার্স)