নারীর পক্ষে ‘রংবাজি'
১৩ এপ্রিল ২০১৬শিরোনাম – ‘রংবাজি: রিকশা রাঙাই প্রাণের কথায়'৷ আর এই প্রাণের কথা হলো নারী নির্যাতন প্রতিরোধ৷ সেই কথাগুলোই বলা হয়েছে রিকশা পেইন্টিং-এর মাধ্যমে৷ নানা ভাষায়, নানা কৌশলে৷
‘লজ্জা ধর্ষকের, ধর্ষিতের নয়', ‘নারীর অপমান জাতির অসম্মান', ‘জোর করে ভালোবাসা যায় না', ‘মেয়েরা মানুষ, মাল নয়', ‘অন্যায়ের প্রতিবাদে নারী-পুরুষ সবাই সাথে', ‘নজর সামলে রাখুন', ‘ঘরের কাজ ফেলনা নয়, বাইরের কাজ খেলনা নয়' – এ রকম ভাষায় রিকশা পেইন্টিং-এর মাধ্যমেই নারী নির্যাতন, নারীর প্রতি সহিংসতা বা নারী অবমাননার বিরুদ্ধে জনমত গড়ার উদ্যোগ নিয়েছে ‘মেয়ে'৷ তারা ১লা এপ্রিল ঢাকাস্থ এশিয়াটিক সোসাইটির সামনে কয়েকটি রিকশায় ‘রংবাজির' কাজ শুরু করেন৷
বাংলাদেশ, বিশেষ করে ঢাকায় রিকশা একটি ঐতিহ্যবাহী যান৷ ১৯৪০ সাল থেকে রিকশা চলছে এই শহরে৷ সময় পাল্টেছে, কিন্তু রিকশা আছে এখনো৷ এই সব রিকশার পেছনে স্থানীয় শিল্পিদের আঁকা ছবি, ‘ফ্যান্টাসি' সারা বিশ্বে পরিচিত৷ তাই নারীর প্রতি অপরাধ প্রতিরোধে বা নারীর প্রতি সহনশীল হতে ‘মেয়ে' নামের অনলাইন নেটওয়ার্কটি বেছে নিয়েছে এই রিকশা-চিত্রকেই৷
প্রশ্ন হলো, কেন তারা রিকশা পেইন্টিংকে বেছে নিলেন? জবাবে সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা এবং সমন্বয়কারী তৃষিয়া নাশতারান ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘আমরা ব্যতিক্রমী কিছু করতে চেয়েছিলাম৷ আর রিকশা পেইন্টিং আমাদের ঐতিহ্য৷ এর একটি ব্যাপক সামাজিক প্রভাব আছে৷ যাত্রীরা যখন রিকশায় চড়েন, জ্যামে বসে থাকেন, এই রিকশা পেইন্টিং গভীর মনোযোগের সঙ্গে দেখেন তারা৷ আমরা সেটাই কাজে লাগাতে চেয়েছি৷ আমরা চেয়েছি এই চিত্রগুলোর মাধ্যমেই মানুষ সচেতন হোক৷ নারীর অধিকার রক্ষায় উদ্বুদ্ধ হোক৷''
‘মেয়ে' অনলাইন নেটওয়ার্ক এ পর্যন্ত চারটি রিকশাতে ছবি এঁকেছে৷ সংগঠনটির সদস্যরা নিজেরাই রং-তুলি হাতে নিয়ে কাজটি করেছেন৷ তাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল রিকশা পেইন্টিং-এর মাধ্যমে নারী নির্যাতনবিরোধী এই প্রচারণায় সাধারণ মানুষকে আগ্রহী করা৷ সেই আগ্রহ ইতিমধ্যেই সৃষ্টি হয়েছে৷ অনলাইন নেটওয়ার্কে তাদের কাজের ছবি রীতিমত ‘ভাইরাল' হয়ে গেছে৷ তাই এখন অনেকেই আগ্রহী হচ্ছেন এই কাজ করতে৷
নাশতারান জানান, ‘‘আমরা এখন এটাকে আরো বিস্তৃত আকারে করতে চাই৷ শুধু রিকশা নয়, অন্যান্য যানবাহনের মাধ্যমেও আমরা একইভাবে প্রচার চালাতে চাই৷''
‘মেয়ে' অনলাইন নেটওয়ার্কের ‘কোর' গ্রুপের সদস্য মোট ২০ জন৷ তারা অনলাইনেই মূলত আলোচনা করেন৷ তাদের পেজের ‘ফলোয়ার' কয়েক হাজার৷ তবে এবার তারা ‘অফলাইন' প্রজেক্টেও যাবেন৷
এই গ্রপের সদস্যরা সবাই নারী৷ এরা এই সামাজিক উদ্যোগগুলো নিচ্ছেন স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে, অর্থাৎ বিনা পারিশ্রমিকে৷
নাশতারানের ভাষায়, ‘‘আমরা প্রধানত চিন্তাগুলো ছড়িয়ে দিতে চাই, যাতে সবাই কাজ করতে পারেন৷ সমাজের কল্যাণে নিজেদের নিয়োজিত করতে পারেন৷''