1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘নারীর প্রতি সহিংসতার বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি নিতে হবে'

১১ আগস্ট ২০২৩

নারীর উপর সহিংসতার ঘাটনা প্রায়ই ঘটছে। কিন্তু বিচার কি হচ্ছে? নারীরা তো দীর্ঘদিন ধরেই ফুটবল খেলছে। কিন্তু হঠাৎ কেন তাদের ওপর হামলা? এসব বিষয়ে ডয়চে ভেলের সঙ্গে কথা বলেছেন মহিলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট সালমা আলী।

https://p.dw.com/p/4V5CK
নারীর প্রতি সহিংসতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ। (ফাইল ছবি)
নারীর প্রতি সহিংসতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ। (ফাইল ছবি)ছবি: Sazzad Hossain/DW

ডয়চে ভেলে : নারীরা তো দীর্ঘদিন ধরেই ফুটবল খেলছে। কিন্তু সম্প্রতি হঠাৎ করেই কেন  তাদের ওপর হামলা হলো? এটা কি বিচ্ছিন্ন ঘটনা, নাকি নারীদের উপর সহিংসতার ধারাবাহিকতা?

অ্যাডভোকেট সালমা আলী : নারীর উপর যে সহিংসতা, সেটার ধারাবাহিকতা তো আছেই। তার সঙ্গে যোগ হয়েছে এখন যে বিষয়টা সেটা হল, কিশোর হোক আর তরুণ, তাদের মধ্যে যেটা তৈরী হয়েছে আমি যা খুশি তাই করব। আমি তো একটা রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় আছি। কারণ ওরা তো বিচার হতে দেখে না, আইনের শাসন দেখে না। ওরা তো ঘরের মধ্যেও নারী নির্যাতন দেখে। রাস্তা ঘাটেও দেখে। আসলে যার ক্ষমতা আছে, শক্তি আছে তাদের তো বিচার হচ্ছে না। এখন মাইন্ডসেটটা হয়েছে এমন যে, আমার শক্তি আছে, আমি যা খুশি তাই করতে পারি। সামাজিক মূল্যবোধ বা একজনের পাশে আরেকজনের দাঁড়ানো থেকে তো আমরা অনেক দূরে চলে যাচ্ছি। আমরা তো দেখছি, বড় অপরাধ করেও পার পেয়ে যাচ্ছে। হাইকোর্ট থেকে জামিন হয়ে যাচ্ছে। ২০ বছর আগেও যে অবস্থা ছিল, এখন তার চেয়েও খারাপ হয়েছে। আমরা সরকারের সঙ্গে অনেকগুলো ভালো ভালো আইন করেছি। এগুলোর প্রয়োগ হচ্ছে না। যৌন হয়রানির জন্য যে নীতিমালা যেটা সংবিধানের ১১১ অনুচ্ছেদে আছে। আমি এই মামলায় লড়েছি। আদালত থেকে রায়ও এসেছে। কিন্তু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে কী এটার বাস্তবায়ন হয়েছে? নারীদের ফুটবল খেলতে দেবে না, এটাও তো এক ধরনের যৌন হয়রানি। আসলে শাসকগোষ্ঠী এটাকে কিভাবে দেখছে, পুলিশের ভূমিকা কী? রাজনৈতিক দলগুলোর কী করছে? সবার একটা ভূমিকা থাকা দরকার।

নারীদের উপর যে হামলার ঘটনাগুলো ঘটছে, সেখানে সরকারের কোনো অবহেলা আপনি দেখেন? সরকার চাইলেই কি সেটা প্রতিরোধ করা সম্ভব?

সরকার যদি ‘জিরো টলারেন্স' নেয়, তাহলে কেন সম্ভব নয়? পুলিশ থেকে শুরু করে প্রশাসন সব জায়গায় যদি তেমন একটা অর্ডার থাকে তাহলে কেন সম্ভব নয়? রাজনৈতিক দলেও যখন নারী যাচ্ছে তারও চরিত্র নিয়ে কথা হচ্ছে। তাকেও অন্য চোখে দেখা হয়। সব মিলিয়ে আমি বলব, রাজনৈতিক দলগুলো বিশেষ করে সরকারী দলে যারা আছে এটা তাদের একটা বিরাট ব্যর্থতা। 

নারীদের উপর হামলার ঘটনাগুলোতে কি সঠিকভাবে বিচার হচ্ছে?

বিচার তো কোনো কিছুতেই হচ্ছে না। ভিকটিমকে যে সাপোর্ট দেওয়ার বিষয় আছে, সেটা কি হচ্ছে? একটা মেয়েকে এটা প্রমাণ করতেই তো অসুবিধা। একটা মেয়ে যখন থানায় যাচ্ছে, তখন পুলিশ দেখছে, আসামি কোন দল করে। ফলে থানা থেকেও কিন্তু মেয়েটা সাপোর্ট পাচ্ছে না। তারপরে তো বিচারে দীর্ঘসূত্রিতা আছে। আমি একজন আইনজীবী হিসেবে বলতে পারি, লিগ্যাল ব্যবস্থায় নারীবান্ধব পরিবেশ কিন্তু আমরা তৈরী করতে পারিনি। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তো মামলাও শেষ করা যাচ্ছে না। আমরা চাই না, কেউ অল্প অপরাধে বড় শাস্তি পাক। কিন্তু অপরাধ অনুযায়ী শাস্তির জন্য যে দৃশ্যমান সাপোর্ট দরকার সেটা তো নেই।

বিচার তো কোনো কিছুতেই হচ্ছে না: অ্যাডভোকেট সালমা আলী

নারীদের উপর হামলা, তদন্ত এবং বিচার প্রক্রিয়ায় আপনাদের কোনো তদারকি আছে?

এত ঘটনা ঘটছে যে, কোনটা দেখবে? আমাদের তো ফান্ড নেই। একটা প্রজেক্ট থাকলে যখন তখন যে কোনো জায়গায় যাওয়া যায়। কিন্তু করোনার পর এখন পর্যন্ত তেমন কোনো ফান্ড নেই। তারপরও কিন্তু আমরা যতটুকু পারি প্রতিবাদ করি। অনেকেই বলেন, তারা এখন আর সোচ্চার না। কত বছর আমরা সোচ্চার থাকবো? আমাদের কি সোচ্চারই থাকতে হবে? সরকার কিছুই করবে না? কেউ কিছু করবে না? সব রাজনৈতিক দলেই তো নারীদের পৃথক দল আছে। পুলিশ-প্রশাসনেও তো নারীরা আছে। তারা কি কিছুই করবে না? তবে একটা কথা বলি, হাইকোর্টের একটা রায় আছে বিচারপতি এনায়েতুর রহিমের। সেখানে কিন্তু বলা আছে, একটা কমিটি থাকতে হবে, সেখানে নারীদের পাশাপাশি অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি থাকবেন। তারা মামলাগুলো মনিটরিং করবেন। সেই কমিটিগুলো কি হচ্ছে? আমরা যতটুকু দরকার, করার চেষ্টা করি। অনেক স্পর্শকাতর ঘটনায় আমরা সাপোর্ট দিয়েছি। মিডিয়ারও একটা দায়িত্ব আছে। কিন্তু মিডিয়াকে আমরা ওই দায়িত্ব পালনটা করতে দেখি না। মিডিয়াতে আমরা কিছু দেখলে তখন আমাদের জন্যও কাজ করতে সুবিধা হয়।

এই সব ঘটনায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী যে তদন্ত করছে, সেটা আসলে কতটা সঠিকভাবে হচ্ছে?

সঠিকভাবে তদন্তের চেয়ে তদন্ত করতে এত সময় নিচ্ছে, যদিও তাদেরও লোকবল কম। বিশেষ করে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল, যাদের টাকা-পয়সা আছে বা পাওয়ার আছে এবং শাসকগোষ্ঠীর সঙ্গে সম্পর্ক আছে তারা যখন কোনো অপরাধ করে, তখন তারা পার পেয়ে যাচ্ছে। এটা তৃণমূল থেকে সর্বোচ্চ মহল পর্যন্ত। এটা সব সরকারের আমলেই ছিল। বিএনপি আমলেও ছিল। এই দুই দল বাদ দিলে আমি বলবো, এরশাদের সময় একটু কম ছিল। আমরা যারা ওই সময় থেকে কাজ করি, তখন আমরা কোনো ঘটনা ঘটলে শাস্তির আওতায় আনতে পেরেছি। এখন যাদের টাকা আছে, তারা তো থানাকে কিনে ফেলছে। এখানেই সরকারের একটা বিরাট বড় রোল আছে। অপরাধ যে-ই করুক তার দ্রুত শাস্তির একটা ব্যবস্থা তো সরকারকেই করতে হবে। সবচেয়ে আগে আমাদের মাইন্ডসেটটা বদলাতে হবে।

নারীদের উপর সংহিসংতা রোধে নারী অধিকার কর্মীরা কী করছেন?

গতকালও একটা বড় মিটিং হলো যৌন হয়রানি নিয়ে। করোনার পর আমাদের এখন আর অত মেম্বার নেই। স্বেচ্ছাশ্রমে কতদিন করবে? এখানে নারী সাংবাদিকদের আরও কাজ করতে হবে। আমাদের মহিলা আইনজীবী সমিতির যারা তৃণমূলে কাজ করে তারাও কিন্তু গৃহে নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। অর্থনৈতিকভাবে তারা কিন্তু সাবলম্বী না। তারপরও যতটুকু পারা যায়, করছে। শুধু নারী সংগঠন না, সবাইকেই এগিয়ে আসতে হবে।

ভবিষ্যতে এই ধরনের ঘটনা রোধে কী পদক্ষেপ নেওয়া উচিৎ?

পদক্ষেপ তো আমাদের জানা আছে। সরকারকে এই ধরনের নির্যাতনের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি নিতে হবে। আইনের বাস্তবায়ন করতে হবে। উচ্চ আদালতের রায় অনুযায়ী সমন্বয় করে কাজ করতে হবে। একটা প্রোজেক্ট নিলাম আর শেষ হয়ে গেল, তেমন না। এমন কমিটি করতে হবে যারা সার্বিকভাবে কাজ করবে। আমরা সব ধরনের সাহায্য করতে প্রস্তুত আছি। সরকার যখন দায়িত্ব নেবে তখনই আমরা ভালো দৃশ্যমান কোনো রেজাল্ট পাবো।

ডয়চে ভেলের ঢাকা প্রতিনিধি সমীর কুমার দে৷
সমীর কুমার দে ডয়চে ভেলের ঢাকা প্রতিনিধি৷