নারীর সম্মানরক্ষায় ফেসবুককে আরো সক্রিয় হতে হবে
৯ অক্টোবর ২০২০কিছুদিন আগে ফেসবুকে একটি পোস্ট দেখে আঁতকে উঠেছিলাম৷ বাংলাদেশে আওয়ামীপন্থি হিসেবে পরিচিত একটি পত্রিকা সুনির্দিষ্ট তথ্য-উপাত্ত উল্লেখ না করে একটি মনগড়া প্রতিবেদন প্রকাশ করে৷ আর সেই সংবাদটি ফেসবুকে শেয়ার করেন দেশটির একজন প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ৷
ফেসবুকে সেই রাজনীতিবিদের ফলোয়ার প্রায় তিন মিলিয়ন৷ ফলে পোস্টটি মুহূর্তেই পৌঁছে যায় অনেকের ডিজিটাল দেয়ালে৷ কিন্তু বিপত্তি বাঁধায় ফেসবুক নিজেই৷ সেই পোস্টের নীচে একটি ট্যাগ জুড়ে দিয়ে জানিয়ে দেয়, পোস্টটি মানুষকে বিভ্রান্ত করতে পারে, কেননা, এটির প্রেক্ষাপট ঠিক নেই৷ সেই ট্যাগে ক্লিক করলে আবার আরেকটি প্রতিবেদন আসে, যেখানে আলোচিত পত্রিকাটির প্রতিবেদনটি যে ২০১৮ সালে অন্য একটি পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন চুরি করে নিয়ে পুনরায় প্রকাশ করা সেই কথা রয়েছে৷
ভুয়া খবররোধে বা মানুষকে সে বিষয়ে সচেতন করতে ফেসবুকের এই উদ্যোগ প্রশংসনীয়৷ বর্তমানে দেখা যাচ্ছে বাংলা ভাষায় প্রকাশিত ভুয়া খবর বা ভিডিও নিয়ে ফেসবুকে রিপোর্ট করা হলে আগের চেয়ে দ্রুতই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে৷ আর সেক্ষেত্রে স্বাধীনভাবে সেই তথ্য যাচাই করে দেখা হয়৷ কিছুদিন আগেও বিষয়টি এমন ছিল না৷
ফেসবুকের এমন উদ্যোগের পাশাপাশি আমি মনে করি, নারীর মানসম্মান রক্ষায়ও ফেসবুকের আরো উদ্যোগী হতে হবে৷ মাঝেমাঝেই শোনা যায়, ফেসবুকে নগ্ন ছবি বা ভিডিও ছড়িয়ে দেয়ার নামে কোনো নারীকে হেনস্থা করা হচ্ছে, ধর্ষণ করা হচ্ছে৷ এমনকি এরকম পরিস্থিতি এড়াতে কখনো কখনো ভুক্তভোগী আত্মহত্যার পথও বেছে নিচ্ছে৷
সম্প্রতি নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের এরকম এক ঘটনায় গোটা বাংলাদেশে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে৷ সেই নারীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে৷ অনেকে সেটা দেখেছেন এবং তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন৷ এরকম প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হওয়ায় সেই ঘটনার বিচারের পথ সুগম হয়েছে এটা যেমন সত্যি, তেমনি এটাও সত্যি যে, নিপীড়করা সেই নারীর ভিডিও প্রকাশের মাধ্যমে তার যে সম্মানহানির চেষ্টা করেছিলেন সেটাও ঘটেছে৷
ফেসবুকের উচিত এ ধরনের কন্টেন্ট প্ল্যাটফর্মটিতে কেউ প্রকাশ করার পর সঙ্গে সঙ্গে বা যত দ্রুত সম্ভব তা বিস্তারিত তথ্যসহ স্থানীয় পুলিশকে জানানো এবং ভিডিওটি সরিয়ে ফেলা৷ সেক্ষেত্রে ভুক্তভোগী নারীর সম্মানহানি যেমন ঠেকানো যাবে তেমনি যারা এমন অপকর্ম করছে তাদেরকে ধরাও সহজ হবে৷ কারিগরিভাবে বিষয়টি হয়ত এখনো জটিল, তবে ভুয়া খবর রোধে যেমন উদ্যোগ নেয়া গেছে এক্ষেত্রেও কোনো একটি পন্থা নিশ্চয়ই বের করা সম্ভব৷ আর সেটা যত দ্রুত করা যাবে ততই মঙ্গল৷
পাশাপাশি ফেসবুকের উচিত ব্যাপক প্রচারনা চালিয়ে এটা নিশ্চিত করা যে, এরকম কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে নারীরা দ্রুত সহায়তা পাবেন৷ সেক্ষেত্রে প্ল্যাটফর্মটি নারীদের জন্য আরো নিরাপদ যেমন হয়ে উঠবে, তেমনি সমাজে এ সংক্রান্ত ভীতিও কাটবে৷