1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

নিউ ইয়র্কে বাংলাদেশি কূটনীতিক গ্রেপ্তারে প্রতিক্রিয়া

১৩ জুন ২০১৭

গৃহকর্মী নির্যাতনের অভিযোগে নিউ ইয়র্কে বাংলাদেশ কনস্যুলেটের ডেপুটি কনস্যুলার জেনারেল শাহেদুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷ এর প্রতিক্রিয়ায় ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূতকে ডেকে ব্যাখ্যা চেয়েছে বাংলাদেশ৷

https://p.dw.com/p/2edTC
Deutschland Polen Eine Putzfrau packt aus
ছবি: picture alliance/dpa

মঙ্গলবার ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব মাহবুব উজ জামান ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জোয়েল রিফম্যান ও পলিটিক্যাল কাউন্সিলর আন্দ্রেয়া বি রডরিগেজকে ডেকে নিয়ে ব্যাখ্যা চান৷

শাহেদুল ইসলামের বিরুদ্ধে বাংলাদেশি এক নাগরিককে নিজ বাসায় তিন বছরের বেশি সময় ধরে বিনা বেতনে কাজ করানো এবং নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে৷ একাধিক বার্তা সংস্থা জানিয়েছে, শাহেদুল ইসলামের বিরুদ্ধে নিউ ইয়র্কের একটি আদালতে এরই মধ্যে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে৷ অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাঁর ১৫ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে৷ বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, শ্রমিক পাচার ও নির্যাতনের অভিযোগে শাহেদুল অভিযুক্ত হয়েছেন৷

অভিযোগে বলা হয়েছে, ঘরের কাজে সহায়তার জন্য মো. আমিন নামের এক ব্যক্তিকে ২০১২ থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে নিউইয়র্কে নিয়ে যান শাহেদুল৷ যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার পরই আমিনের পাসপোর্ট নিয়ে নেওয়া হয়৷ আমিনকে দিয়ে দিনে ১৮ ঘণ্টা কাজ করানো হতো৷ তাঁকে কোনো মজুরি দেওয়া হতো না৷ হুমকি দেওয়া হতো প্রায়ই৷ অভিযোগ অনুযায়ী, মারধরেরও শিকার হয়েছেন তিনি৷ পরিবার ও বাইরের কারো সঙ্গে তাঁকে যোগাযোগ করতে দেওয়া হতো না৷ ২০১৬ সালে শাহেদুলের বাসা থেকে আমিন পালিয়ে যান৷

নূর খান

রয়টার্স জানায়, ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাসের এক মুখপাত্র বলেছেন, ‘‘অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে শাহেদুলের বিরুদ্ধে আমিন অভিযোগ এনেছেন বলে তাঁরা মনে করছেন৷ আমিনের অভিযোগ ভিত্তিহীন৷ গত বছর মে মাসে আমিন পালিয়ে যাওয়ার পর পুলিশের কাছে অভিযোগ করা হয়৷''

কুইন্স কাউন্টির অ্যাটর্নির অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে এক বিবৃতিতে জানানো হয়, ৪৫ বছর বয়সি শাহেদুল ইসলাম ডেপুটি কনসাল জেনারেল অব বাংলাদেশ হিসেবে কর্মরত আছেন৷ তিনি কুইনসের নিকটবর্তী জ্যামাইকা এলাকায় বসবাস করেন৷ নিউ ইয়র্কের কুইন্সবরোর অ্যাটর্নি রিচার্ড ব্রাউন এমন অভিযোগকে ‘খুবই উদ্বেগজনক' বলে উল্লেখ করেছেন৷ এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘‘এই ধরনের অভিযোগ অত্যন্ত উদ্বেগজনক৷ একজন কনস্যুলার তাঁর বাড়িতে আরেকজনকে কাজে বাধ্য করতে শারীরিক জোর খাটিয়েছেন এবং হুমকি দিয়েছেন৷ সেই সঙ্গে প্রথম দিন থেকেই ওই কর্মীকে কাজে আটকে রাখার জন্য তাঁর পাসপোর্ট কেড়ে নিয়েছেন৷ তাঁকে বেতন দিতে অস্বীকার করেছেন এবং অন্য দেশে থাকা তার পরিবারকে বিপদে ফেলার ভয়-ভীতি দেখান৷ এইসব অভিযোগ প্রমাণিত হলে নিশ্চিতভাবেই অভিযুক্ত ব্যক্তিকে শাস্তি পেতে হবে৷''

আদালত তাঁকে ৫০ হাজার ডলারের বন্ড অথবা নগদ ২৫ হাজার ডলারের বিনিময়ে জামিন মঞ্জুর করেছেন৷ আগামী ২৮ জুন পরবর্তী শুনানির তারিখ নির্ধারণ করেছে আদালত৷

এদিকে মঙ্গলবার ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে বলেন, ‘‘একজন পলাতক ব্যক্তির কথায় একজন কূটনীতিককে কেন আটক করা হয়েছে, সেটি জানার জন্য আমরা যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতকে ডেকে পাঠিয়ে কারণ জানতে চেয়েছি৷ যুক্তরাষ্ট্রের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জোয়েল রিফম্যান ও পলিটিক্যাল কাউন্সেলর আন্দ্রেয়া বি রডরিগেজ ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব মাহবুব উজ জামানের সাথে দেখা করেন৷''

তিনি বলেন, ‘‘১৩ মাস আগে এই গৃহপরিচারক শাহেদুল ইসলামের বাসা থেকে পালিয়ে যায় এবং সেই সময়ে একটি আনুষ্ঠানিক পত্রের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়কে বিষয়টি জানানো হয়৷ গৃহপরিচারক পলাতক হয়েছে এই সংবাদটি আনুষ্ঠানিক পত্রের মাধ্যমে ষ্টেট ডিপার্টমেন্টকে জানানোর পরেও এ ঘটনা কেন ঘটলো, সেটি একটি রহস্য এবং আমরা এটি জানতে চাই৷''

এ নিয়ে বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে কূটনীতিকরা ওয়াশিংটনে স্টেট ডিপার্টমেন্টে দেখা করে বিষয়টির ব্যাখ্যা চাইবেন বলে জানান আরেক কর্মকর্তা৷

এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে ডয়চে ভেলে'র পক্ষ থেকে নিউইয়র্কে বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল শামীম আহসান এবং ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ মিশনের উপ রাষ্ট্রদূত মাহবুব হাসান সালেহর সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগ করেও তাদের পাওয়া যায়নি৷ ঢাকার পররাষ্ট্র দপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু বলতে রাজি হননি৷

এমনকি বাংলাদেশের কয়েকজন সাবেক রাষ্ট্রদূতও বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে রাজি হননি৷ তবে মানবাধিকার কর্মী এবং আইন ও সালিশ কেন্দ্রের সাবেক নির্বাহী পরিচালক নূর খান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশের দের কেউ কেউ গৃহের কাজের জন্য কখনো আত্মীয় পরিচয়ে আবার কখনো গৃহকর্মী পরিচয়ে কাউকে কাউকে নিয়ে যান৷ কিন্তু যেসব শর্তে নিয়ে যান, অনেক সময় সেই সব শর্ত তারা পূরণ করেন না৷ ফলে জটিলতার সৃষ্টি হয়৷''

তিনি বলেন, ‘‘এই গৃহকর্মী নিয়োগে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের মনিটরিং প্রয়োজন৷ তা না হলে দেশের ভাবমূর্তির ওপর আঘাত আসে৷''

তিনি আরো বলেন, ‘‘গৃহকর্মীদের মানবাধিকার লঙ্ঘন করা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়৷ আর তা যদি কোনো কুটনীতিকের মাধ্যমে হয় তাহলে আরো দুঃখজনক৷''

প্রসঙ্গত, শাহেদুল ইসলাম, রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগপ্রাপ্ত কূটনীতিক৷ ২০১১ সালে তিনি নিউ ইয়র্ক মিশনে কাউন্সিলর পদে যোগ দেন৷ এর আগে নিউ ইয়র্কে বাংলাদেশের প্রাক্তন কনসাল জেনারেল মনিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে একই ধরণের অভিযোগে একটি মামলা করেছিল তার পলাতক গৃহপরিচারক৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান