নিরক্ষরতা অনেক বড় সমস্যা আফগানিস্তানে
১ মে ২০১১আফগানিস্তান থেকে ন্যাটো বাহিনী ধীরে ধীরে তাদের সেনা প্রত্যাহার শুরু করতে যাচ্ছে৷ ২০১৪ সাল থেকে এক এক করে সেনা সরিয়ে নেয়া হবে৷ তখন আফগানিস্তানের দায়-দায়িত্ব পুরোটাই বর্তাবে আফগানদের ওপর৷ কিন্তু এই দেশটির সমস্যার অন্ত নেই৷ নিরক্ষরতা অত্যন্ত বড় এক সমস্যা৷ আফগানদের মধ্যে সাক্ষরতার অভাব তীব্র৷ বিশেষ করে মেয়েদের শিক্ষার হার খুবই নীচু৷ আফগানিস্তান কী এই অবস্থায় এগিয়ে যেতে সক্ষম হবে?
একজন আফগান মহিলা বললেন,‘‘যদি একটি পরিবারে মা লেখাপড়া জানে তাহলে সে তার বাচ্চাদের শেখাতে পারে৷ বাচ্চাদের পড়াশোনা করতে উদ্বুদ্ধ করতে পারে৷ ‘আমার মা লেখাপড়া জানে' – এই প্রেরণাতেই বাচ্চারা এগিয়ে যাওয়ার সাহস আর উৎসাহ পায়৷''
অসংখ্য নিরক্ষর আফগান মহিলার মধ্যে তিনিও একজন৷ তিনি তার স্বামী এবং সন্তানদের নিয়ে গ্রামে বসবাস করেন৷ কখনো স্কুলে যাননি৷ তিনি ছোট বেলা থেকেই বাড়ির কাজে ব্যস্ত ছিলেন এবং মাঠে কাজ করেছেন৷ অনেক ছোট বেলায় বাবা তাঁর বিয়ে দিয়ে দেন৷ এখন তাঁর বয়স ২০ এবং তিন সন্তানের মা তিনি৷ এতদিন পর তিনি লেখাপড়া করার সুযোগ পাচ্ছেন৷ ইউনিসেফ একটি স্কুল খুলেছে তাঁর গ্রামে৷ প্রতিদিন তিনি সেখানে সময় করে যান৷ একটি তাঁবুর নীচে স্কুলটি তৈরি করা হয়েছে৷ শিক্ষিকা আসেন রাজধানী কাবুল থেকে৷ প্রতিদিন এই গ্রামে কাবুল থেকে আসতে দুই ঘন্টা সময় লাগে৷
বাড়ি থেকে বের হলেই স্বামী মারধোর করতো
শিক্ষিকা বললেন,‘‘আমি যে শিক্ষা দিচ্ছি তাতে আশা করছি, এই গ্রামের মহিলাদের জীবন পাল্টাতে সাহায্য করবে৷ আগে পুরুষরা মহিলাদের বাড়ি থেকে বের হলেই মারধোর করতো৷ এখন আর তারা বাধা দিচ্ছে না৷ বাড়ির মেয়ে বা বউ পড়াশোনার জন্য প্রতিদিন বাইরে যাচ্ছে তা তারা মেনে নিয়েছে৷ অন্ততপক্ষে ভাল কিছু করছে মেয়েগুলো – এই বোধ তাদের হয়েছে৷''
আফগানিস্তানে তালেবান শাসনামলে মেয়েদের জন্য লেখাপড়া পুরোপুরি নিষিদ্ধ ছিল৷ তালেবান আমলের পর দেশে অনেক পরিবর্তন হয়েছে৷ অবকাঠামোয় পরিবর্তন এসেছে৷ নতুন রাস্তা-ঘাট তৈরি হয়েছে৷ রাজধানী কাবুলের চেহারা বদলেছে৷ তৈরি হয়েছে অনেক স্কুল৷ দেশ চলছে নতুন সংবিধান অনুযায়ী৷ তবে আফগান মানবাধিকার কর্মী সিমা সামার বললেন অন্য কথা৷
মানবাধিকার কর্মী সিমা সামারের আক্ষেপ
সিমা সামার জানান,‘‘দেশে গণতন্ত্র এসেছে কিনা তা বোঝার আরেক মাপকাঠি হল নারীদের স্বাধীনতা৷ তাদের সমানাধিকার নিশ্চিত করা৷ যেখানে নারীদের সমানাধিকার নেই সেখানে গণতন্ত্রও নেই৷''
আফগানিস্তানের সংবিধান মেয়েদের পূর্ণ স্বাধীনতা এবং লেখাপড়ার অধিকার দিয়েছে৷ তবে বাস্তব চিত্র পুরোপুরি ভিন্ন৷ বিশেষ করে গ্রামগুলোতে৷ পুরুষশাসিত আফগান সমাজে ডানা মেলে রেখেছে অতি রক্ষণশীল জীবন যাপন এবং ধর্মভীরুতা৷ পুরুষরাই সিদ্ধান্ত নেয় মেয়েদের জন্য৷ গত ৩০ বছর ধরে তাই হয়ে আসছে৷ সামনে পুরুষদেরই সবসময় দেখা গেছে৷ মহিলারা থেকেছে পর্দার আড়ালে, পুরোপুরি অদৃশ্য৷ এরপরেও প্রায় আড়াই লক্ষ আফগান মেয়ে নিয়মিত স্কুলে যাচ্ছে৷ তবে তা শুধু প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত৷ প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পরপরই তাদের বিয়ে দিয়ে দেয়া হয়৷ বাবা এবং পরিবারের পাশাপাশি রয়েছে সামাজিক চাপ – মেয়ে বড় গেছে মেয়েকে বিয়ে দিয়ে দিতে হবে৷ আফগানিস্তানের দুই তৃতীয়াংশ প্রদেশে দেখা গেছে কোন মেয়েই প্রাথমিক বিদ্যালয় শেষ করার পর আর পড়াশোনার ধারে-কাছে ভিড়তে পারেনি৷ আক্ষেপের সঙ্গে সিমা সামার আরো বললেন,‘‘নারী অধিকার আর মানবাধিকার নিয়ে আজকাল আর কেউ উচ্চবাচ্য করেনা৷ আমরা যদি ২০০২ এবং ২০০৩ সালের দিকে তাকাই তাহলে আমরা দেখবো আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় আফগানিস্তানে নারী অধিকার এবং নারী স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠার ওপর জোর দিয়েছে৷ এদেশে মানবাধিকার রক্ষার কথা বলেছে৷ অথচ এখন আর এসব দিকে কারো নজর নেই৷ কোন শর্ত পূরণের উল্লেখ নেই৷ কার কী দায়িত্ব, সরকারের কী কর্তব্য তা স্পষ্ট করে কেউই আর বলছে না৷ নারীদের স্বাধীনতা, তাদের রক্ষার কথা, তাদের অধিকার আদায় হবে কি না তা নিয়ে এখন আর কোন উচ্চবাচ্য নেই৷ কীভাবে তালেবান জঙ্গিদের সঙ্গে কথা বলা যায়, তাদের সঙ্গে সমঝোতায় আসা যায় – আজকাল শুধু তাই নিয়েই আলোচনা হয়৷''
প্রতিবেদন: মারিনা জোয়ারদার
সম্পাদনা: অব্দুল্লাহ আল-ফারূক