সুরঞ্জিতের পদত্যাগ
১৬ এপ্রিল ২০১২গত ২৮শে নভেম্বর এক জটিল পরিস্থিতিতে রেলমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়েছিলেন সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত এমপি৷ পদ্মা সেতু নিয়ে বিশ্বব্যাংক দুর্নীতির অভিযোগ তোলায়, সড়ক ও রেল যোগাযোগ মন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনকে তাঁর মন্ত্রণালয় থেকে সরিয়ে দেয়া হয়৷
এরপর সড়ক ও রেল দু'টি আলাদা মন্ত্রণালয় করা হয়৷ সড়ক যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী করা হয় ওবায়দুল কাদেরকে৷ এবং রেলমন্ত্রীর দায়িত্ব পান সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত৷ তাঁর দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে এটাই ছিল প্রথম মন্ত্রীত্ব৷ কিন্তু দায়িত্ব নেয়ার মাত্র পাঁচ মাসের মাথায় অপর এক জটিল পরিস্থিতিতে সোমবার তাঁকে পদত্যাগ করতে হলো৷
সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত রেল ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ৯ই এপ্রিল রাতে তাঁর এপিএস'এর গাড়িতে ৭০ লাখ টাকার সঙ্গে তাঁর দূরতম কোনো সম্পর্ক নেই৷ তারপরও সুষ্ঠু তদন্ত এবং গনতন্ত্রের স্বার্থে তাঁর এই পদত্যাগ৷
সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, ঘটনার পর পরই তিনি কিছু ব্যবস্থা নিয়েছেন৷ পূর্বাঞ্চল রেলের মহাব্যবস্থাপক ইউসুফ আলি মৃধা এবং রেলের কমান্ডেন্ট এনামুল হককে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে৷ তিনি জানান, তাঁর এপিএস ওমর ফারুক তালুকদারদের চাকরি থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন৷ তারপরও সুশীল সমাজ, রাজনৈতিক নেতা এবং গণমাধ্যমের দাবির প্রতি সম্মান দেখিয়ে তিনি পদত্যাগ করলেন৷
৯ই এপ্রিল পূর্বাঞ্চল রেলের মহাব্যবস্থাপক ইউসুফ আলি মৃধা, ঢাকা রেলের কমান্ডেন্ট এনামুল হক ও রেলমন্ত্রীর এপিএস ওমর ফারুক তালুকদার একই গাড়িতে রেলমন্ত্রীর জিগাতলার বাসায় যাচ্ছিলেন৷ গাড়িটি ছিল এপিএস'এর৷ গাড়ির ড্রাইভার আলী আযম পথে হাঠাৎ করে গাড়িটি পিলখানা বিজিবি সদর দপ্তরের গেটে ঢুকিয়ে দিলে, তাঁদের ৭০ লাখ টাকাসহ আটক করে পরদিন সকালে ছেড়ে দেয়া হয়৷
রেলমন্ত্রীর এপিএস ওমর ফারুক তালুকদার ছাড়া পাওয়ার পরই, ৭০ লাখ টাকা তাঁর ব্যাংক একাউন্টে জমা দিয়েছেন৷ এই ঘটনায় সারা দেশে ব্যাপক তোলপাড় হয়৷ রেলের কর্মচারীরা সংবাদ সম্মেলন করে রেলে নিয়োগের ক্ষেত্রে ঘুস বাণিজ্যের অভিযোগ করেন৷ আর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শনিবার তুরস্ক থেকে দেশে ফেরার পর, রোববার রাতে সুরঞ্জিত তাঁর সঙ্গে দেখা করেন৷ তখনই তাঁর পদত্যাগের বিষয়টি চূড়ান্ত হয়ে যায়৷ এ কারণে সোমবার সকালে মন্ত্রিসভার বৈঠকে যোগ দেননি সুরঞ্জিত৷
সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত তাঁর দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে একাধিকবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন৷ তিনি বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়ন কমিটির সদস্য এবং পঞ্চদশ সংবিধান সংশোধন কমিটির কো-চেয়ারম্যান ছিলেন৷ এছাড়া, আগের আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তিনি প্রধানমন্ত্রীর সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন৷ অথচ গণতন্ত্রী পার্টি থেকে আওয়ামী লীগে যোগ দেয়া এই বর্ষিয়ান ঝানু পার্লামেন্টারিয়ান রাজনৈতিক জীবনে প্রথম মন্ত্রীত্বের পাঁচ মাসের মাথাতেই দুর্নীতির দায় মাথায় নিয়ে বিদায় নিলেন৷
প্রতিবেদন: হারুন উর রশীদ স্বপন, ঢাকা
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ