নির্বাচন ছাড়া বিএনপির আর কি বিকল্প?
২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৮প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা সোমবারের সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি'র প্রতি তাঁর মনোভাব স্পষ্ট করেছেন৷ খালেদা জিয়ার কারাদণ্ড এবং মামলার বিচার নিয়েও তিনি কোনো রাখঢাক করেননি৷ প্রধানমন্ত্রী বলেই দিয়েছেন, ‘‘বিএনপি আগামী নির্বাচনে অংশ না নিলে আমাদের কিছুই করণীয় নেই৷'' আর বিএনপি চেয়ারপার্সনের কারাদণ্ড নিয়ে বলেছেন,‘‘খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে বিএনপির কাছের লোকেরাই মামলা দিয়েছে, রায় দিয়েছেন আদালত৷ আদালতের রায়ে সরকারের কিছু করার নেই৷''
প্রধামন্ত্রীর এই বক্তব্য বিএনপিকে নতুন কোনো বার্তা দিচ্ছে কিনা জানতে চাইলে জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রহমান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে এটা এখন পরিস্কার যে, বিএনপি আগামী নির্বাচনে অংশ না নিলেও নির্বাচন যথা সময়ে হবে৷ শুধু বিএনপি কেন, অন্য কোনো দলের ব্যাপরেও তিনি একই কথা বলেছেন৷ আর এরইমধ্যে একটা ধারণা তৈরি হয়েছে যে, আগামী নির্বাচনে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া হয়তো অংশ নিতে পারবেন না৷''
তিনি বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী যা-ই বলুন না কেন, আমার ধারণা হলো, বিএনপি আগামী নির্বাচনে যাবে৷এমনকি খালেদা জিয়া যদি নির্বাচনের অযোগ্য হন, তারপরও বিএনপি তাঁকে ছাড়াই নির্বাচনে অংশ নেবে৷ কারণ, নির্বাচনে যাওয়া ছাড়া তাদের কাছে আর কোনো বিকল্প নাই৷''
বিকল্প না থাকার কারণ জানতে চাইলে রাজনৈতিক বিশ্লেষক এই অধ্যাপক বলেন, ‘‘এবার নির্বাচনে না গেলে বিএনপি'র নিবন্ধন হারানোর বিষয়টি সামনে চলে আসতে পারে৷ আরো অনন্ত পাঁচ বছর বিএনপিকে সংসদ বা ক্ষমতার বাইরে থাকতে হবে৷ আরো পাঁচ বছর সংসদের বাইরে থাকার চাপ বিএনপি সহ্য করতে পারবে না৷ বিএনপি'র নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে প্রচুর মামলা আছে৷ আরো মামলা হতে পারে৷ এই মামলাগুলো মোকাবেলা করতে হলে যে ভিত্তি বা শক্তি থাকা দরকার, সেটা পার্লামেন্টে থাকলেই সম্ভব৷ সংসদে বিএনপি'র আসন যদি কমও হয়, তারপরও সেখানে তারা কথা বলার সুযোগ পাবে৷ প্রতিবাদ জানাতে পারবে৷ আর বিএনপি'র বিদেশি মিত্ররা চায় বিএনপি নির্বাচনে যাক, সংসদে যাক৷ তাদের এই প্রত্যাশা এবার বিএনপি'র পক্ষে এড়ানো সম্ভব নয়৷''
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘খালেদা জিয়াকে ছাড়া বিএনপি নির্বাচনে গেলে হয়তোবা ভোটের বাক্সে তারা পিছিয়ে পড়তে পারে৷ কিন্তু নির্বাচনে না গেলে তাতে তো কোনো লাভ নাই৷ সংসদদে বিএনপি'র এখন যাওয়া জরুরি৷ আর সেজন্য নির্বাচনে যেতে হবে৷''
বিএনপি প্রায় এক যুগ ধরে ক্ষমতার বাইরে৷ আর তারা সংসদে নাই চার বছরেরও বেশি সময় ধরে৷ এত বেশি সময় ধরে ক্ষমতা এবং সংসদের বাইরে থাকা বিএনপি'র জন্য অনেক ক্ষতিকর৷ দলের নেতা-কর্মীদের এই পরিস্থিতি হতাশ করছে৷ ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বর্জন করে বিএনপি লাভবান হয়নি বলেই বিশ্লেষকরা মনে করেন৷
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষক এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. শান্তনূ মজুমদার ডয়চে ভেলেকে বলেন,‘‘ প্রধানমন্ত্রীর কথা নতুন কিছু নয়৷ তবে এবার কনফিডেন্স লেভেলটা স্পষ্ট৷ নির্বাচন হবে, তা ২০১৪ সালের মতও যদি হয়৷ আর আমার মনে হয়, ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে বিএনপি যে অবস্থানে ছিল এখন আর সেই অবস্থানে নাই৷ তারা নির্বাচনের আগ পর্যন্ত সরকারের ওপর একটা চাপ জারি রাখতে চায়৷ তারা এরইমধ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি থেকে সরে এসেছে৷ এখন তারা খালেদা জিয়াকে নির্বাচনের বাইরে রাখা যাবে না- এই ইস্যুতে চাপ সৃষ্টি করতে চায়৷ কিন্তু খালেদা জিয়া কারাগারে থাকলে সাধারণ মানুষেন সহানুভূতির বিষয়টিও তাদের মাথায় আছে৷ আসলে তাদের যা হিসাব, তা সব আগামী নির্বাচন নিয়েই৷''
বিএনপি'র নির্বাচনে যাওয়ার গুরুত্ব জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘দলের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতেই বিএনপি নির্বাচনে যাবে৷ আমার মনে হয়, সরকার বিএনপিকে নির্বাচনের বাইরে রাখার কোনো কৌশল অবলম্বন করলেও বিএনপি সেই কৌশলকে এড়িয়ে নির্বাচনে যাবে৷ কারণ, দলটি আর ক্ষমতা এবং সংসদের বাইরে থাকতে চায় না৷ আরো পাঁচ বছর তারা বাইরে থাকলে দলের অস্তিত্ব চরম সংকটে পড়বে৷''
তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘বিএনপি নির্বাচন বর্জন করলে তাদের শরিকরা কী করবে? এটা কিন্তু এখন বড় প্রশ্ন৷ আর বর্তমান সরকার দুই মেয়াদ ক্ষমতায় থাকায় স্বাভাবিকভাবেই তাদের কাজ নিয়ে সমালোচনা আছে৷ ভোটারদের ভিন্ন চিন্তা আছে৷ আর দেশে তো অ্যান্টি-আওয়ামী লীগ ভোট অনেক৷ তাই বিএনপি'র কৌশল হলো আগামী নির্বাচনের আগে যতটা চাপ সৃষ্টি করে সুবিধা নেয়া যায়৷ টার্গেট কিন্তু নির্বাচন৷''